জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস শুক্রবার (১৭ মার্চ) বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন করা হয়েছে।
নাইজেরিয়ার রাজধানী আবুজা শহরের বাংলাদেশ হাইকমিশন/দূতাবাস, ভারতের নয়া দিল্লির বাংলাদেশ দূতাবাস/হাইকমিশন, ফিলিপাইনের ম্যানিলায় বাংলাদেশ দূতাবাস, ভিয়েতনাম বাংলাদেশ দূতাবাস, জাপানের টোকিওতে বাংলাদেশ দূতাবাস, সৌদি আরবের রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাস, অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরা বাংলাদেশ হাইকমিশন এবং সিঙ্গাপুর দূতাবাস বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উদযাপন করে।
শনিবার(১৮ মার্চ) তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ সব দেশে বাংলাদেশ দূতাবাস ও হাইকমিশনে জাতীয় সংগীত ও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধর করা হয়। একে একে অস্থায়ীভাবে নির্মিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ এবং কেক কাটা হয়।
এছাড়া বিভিন্ন দেশের হাইকমিশনার ও রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যের মধ্যে নয়া দিল্লির হাই কমিশনার মো. মোস্তাফিজুর রহমান এবং নাইজেরিয়ার হাইকমিশনার মাসুদুর রহমান বক্তব্য উল্লেখ করা হলো।
নয়া দিল্লির হাইকমিশনার মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, গভীর দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্ব, অসামান্য আত্মত্যাগ ও জনগণের প্রতি অসাধারণ মমত্ববোধের কারণে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হন।
নাইজেরিয়ার হাইকমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাঙালির পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙার চুড়ান্ত প্রেরণা এবং বঙ্গবন্ধু কেবল সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালিই নন, তিনি ছিলেন বাঙালির মু্ক্তির দূত এবং রাজনীতির এক মহাকবি।
একইভাবে অন্যান্য দেশের বাংলাদেশের হাইকমিশনার ও রাষ্ট্রদূতরা বক্তব্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন এবং স্বাধীন দেশ গঠনে তার ভূমিকা ও অবদানের কথা তুলে ধরেন।
পরে জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষ্যে এসব দেশে চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয় এবং বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। এরপর জাতির পিতার বর্ণাঢ্য জীবন ও কর্মের উপর নির্মিত একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়।
অনুষ্ঠান শেষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তার পরিবারের শহীদ সদস্য, মুক্তিযুদ্ধের শহীদ এবং বাংলাদেশের অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
অনুষ্ঠানে দূতাবাস ও হাইকমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্কুলের শিক্ষার্থী ও শিক্ষক এবং প্রবাসী বাংলাদেশিরা উপস্থিত ছিলেন।
- লন্ডনে বঙ্গবন্ধুর ১০৩তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উদযাপন
ব্রিটিশ-বাংলাদেশি শিশু-কিশোরদের বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক ও মানবিকতার আদর্শে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশন, লন্ডন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী এবং জাতীয় শিশু দিবস ২০২৩ যথাযথ মর্যাদা ও উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে উদযাপন করেছে।
এ উপলক্ষে পূর্ব লন্ডন আয়োজিত “স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন শিশুদের চোখ সমৃদ্ধির স্বপ্নে রঙিন” শীর্ষক এক বিশেষ স্মারক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, “দেশ বিভাগের আগে থেকেই বঙ্গবন্ধু বাঙ্গালি জাতিসত্তার ভিত্তিতে বাঙ্গালি জাতির জন্য একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন।”
ড. গওহর রিজভী বলেন, “বঙ্গবন্ধু উপলব্ধি করেছিলেন লাহোর প্রস্তাবে ধর্ম-ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের যে পরিকল্পনা দেয়া হয়েছিলো তার মাধ্যমে বাঙ্গালি জাতির মুক্তি ও উন্নতি সম্ভব নয়। তাই তিনি দীর্ঘ ও আপোষহীন সংগ্রামের মাধ্যমে ১৯৭১ সালে বিশ্বে বাঙ্গালি জাতিকে একটি স্বাধীন জাতি ও বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।”
ড. গওহর রিজভী আরো বলেন, “বঙ্গবন্ধুর প্রগতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক আদর্শকে ক্ষুণ্ন করার জন্য বিভিন্ন অপচেষ্টা চালানো হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর দূরদর্শী নেতৃত্বের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে সমুন্নত রেখেই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বাস্তবায়নে অভূতপূর্ব অগ্রগতি ও সাফল্য অর্জন করে চলেছেন।”
যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম তাঁর স্বাগত বক্তব্যে বলেন, “বঙ্গবন্ধু তাঁর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে বলেছিলেন সাত কোটি বাঙ্গালিকে কেউ কোনো দিন দাবিয়ে রাখেত পারবে না। তিনি আমাদের শিখিয়েছেন কীভাবে সব বাঁধা অতিক্রম করে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকা যায়। একইভাবে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিখিয়েছেন কীভাবে কারো কাছে মাথা নত না করে আত্মমর্যাদার সাথে বিশ্বে সম্মানের আসনে বাংলাদেশ ও বাঙ্গালি জাতিকে প্রতিষ্ঠা করা যায়।”
হাইকমিশনার ব্রিটিশ-বাংলাদেশি শিশু-কিশোরদের উদ্যেশে বলেন, “বাংলাদেশকে জানতে হলে বঙ্গবন্ধুকে জানতে হবে। তাঁর মহান নীতি ও আদর্শে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনুপ্রাণীত ও গড়ে তুলতে হবে।” তিনি ব্রিটিশ-বাংলাদেশি শিশু-কিশোরদের বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মূল্যবোধে এবং বাঙালির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যে উজ্জীবিত করে গড়ে তোলার জন্য প্রবাসি বাংলাদেশি মা-বাবাদের প্রতি আহ্বান জানান।
এর আগে হাইকমিশনার মিশনে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচী শুরু করেন। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দেয়া বাণী পাঠ করা হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবার এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী সকল শহীদদের জন্য এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের শান্তি ও অব্যাহত অগ্রগতির জন্য বিশেষ দোয়া করা হয়। অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক ও ব্রিটিশ-বাংলাদেশী সম্প্রদায়ের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
- ফিলিপাইনে বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী ও শিশু দিবস পালন
যথাযোগ্য মর্যাদা ও ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস-২০২৩ পালন করেছে ফিলিপাইনের বাংলাদেশ দূতাবাস। শুক্রবার (১৭ মার্চ) পৃথক দুটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উৎসবমুখর পরিবেশে বাংলাদেশি ও ফিলিপিনো শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে দিবসটি পালন করা হয়।
জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দিবসটির সূচনা করেন ফিলিপাইনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এফ এম বোরহান উদ্দিন। এরপর ফিলিপাইনের স্কুলশিক্ষার্থীদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও আদর্শের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে দূতাবাসের উদ্যোগে ম্যানিলার কেজন সিটিতে অবস্থিত ব্রিলিয়ান্ট জুনিয়র একাডেমি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষকরা ও স্কুল ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা ওই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
রাষ্ট্রদূত বোরহান উদ্দিন তার বক্তব্যে অত্যন্ত সহজ-সরল ভাষায় বঙ্গবন্ধুর জীবনী শিশুদের সামনে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলাদেশের নন, তিনি একজন বিশ্বনেতা। অসীম সাহসিকতা, অসাধারণ নেতৃত্ব, ছোটদের প্রতি ভালোবাসা, গরিব-দুঃখী মানুষের প্রতি মমত্ববোধ-বঙ্গবন্ধুর এসব গুণাবলি বিশ্বের সব শিশু-কিশোরকে আরও মানবিক ও সুনাগরিক হতে অনুপ্রাণিত করে তোলে। রাষ্ট্রদূত শিশুদের বঙ্গবন্ধুর জীবনী থেকে শিক্ষা গ্রহণের আহ্বান জানান।
বক্তব্য শেষে রাষ্ট্রদূত স্কুলে অনুষ্ঠিত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্রেস্ট ও সনদপত্র তুলে দেন। অনুষ্ঠানের শেষে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে রাষ্ট্রদূত ও স্কুল অধ্যক্ষ জন্মদিনের কেক কাটেন।
এছাড়াও বিকেলে দূতাবাস প্রাঙ্গণে বাংলাদেশি শিশুদের অংশগ্রহণে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে রাষ্ট্রদূত উপস্থিত শিশু-কিশোরদের নিয়ে জাতির পিতা প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন। এরপর দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়।