জামায়াতের মিছিল-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন


রাজনৈতিক দল হিসাবে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করেছে হাইকোর্ট। বৃহত্তর বেঞ্চের দেওয়া ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে দলটি। সেই আবেদন আপিল বিভাগে বিচারাধীন। বিচারাধীন এই আপিলের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামী যেন সভা-সমাবেশ, মিছিলসহ কোন ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে না পারে সেই বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়েছে। আগামী ৩১ জুলাই এই আবেদনের উপর আপিল বিভাগে শুনানি হবে।

সোমবার (২৬ জুন) এই আবেদনসহ দুটি আবেদনের উপর শুনানির দিন ধার্যের আবেদন করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর। আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতের বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী আবেদনটি শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন।

তরীকত ফেডারেশনের তৎকালীন মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ অন্যান্য রিটকারী নিবন্ধনবিহীন দল জামায়াতের সভা-সমাবেশসহ রাজৈনতিক কর্মসূচির উপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আপিল বিভাগে এ আবেদন করেন।
 
আবেদনে বলা হয়েছে, জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় এখন পর্যন্ত বহাল রয়েছে। রায় বহাল থাকাবস্থায় গত ১০ জুন জামায়াতে ইসলামী ঢাকায় সভা-সমাবেশ করেছে। উচ্চ আদালতের রায়ের পর দলটির এ ধরনের কর্মসূচি পালন বেআইনি। একইসাথে উচ্চ আদালতের রায়ের লঙ্ঘন। কারণ রায়ে বলা হয়েছে, দল হিসাবে জামায়াতের নিবন্ধন সংবিধান ও গণ-প্রতিনিধিত্ব আদেশের পরিপন্থী। অতএব কোনভাবেই দলটি সভা-সমাবেশ করার অনুমতি পেতে পারে না। এছাড়া নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণে অযোগ্য। কিন্তু এরপরেও সভা-সমাবেশে দলটির নিবন্ধন দাবি করে বক্তব্য প্রদান আদালত অবমাননার শামিল।

প্রসঙ্গত, ১০ বছর আগে উচ্চ আদালতের রায়ে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষিত হয়। ঘোষিত ঐ রায়ের বিরুদ্ধে তখনই আপিল করে দলটি। এখন ওই আপিলটি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে।

এদিকে আপিল বিচারাধীন থাকাবস্থায় গত ১০ জুন ঢাকায় সমাবেশ করে দলটি। আর এই সমাবেশে আপত্তি জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের মামলার রিটকারী পক্ষের। রিটকারী পক্ষ বলছে, আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জামায়াতের সভা-সমাবেশ, মিছিলসহ কোন ধরনের রাজৈনতিক কর্মসূচি পালনের সুযোগ নেই। ভবিষ্যতে এ ধরনের কর্মসূচি পালনে যেন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। কারণ নিবন্ধনবিহীন দলটির যে কোনও কর্মসূচি পালন উচ্চ আদালতের রায়ের বরখেলাপ। কারণ আপিল বিচারাধীন থাকাবস্থায় জামায়াতে ইসলামী কোন রাজৈনতিক কর্মসূচি পালন করলে বিচারাধীন আপিলটি অকার্যকর হয়ে পড়বে।

২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর জামায়াতে ইসলামীকে রাজনৈতিক দল হিসেবে সাময়িক নিবন্ধন দেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আদালতে দাখিল করা হলফনামায় বলা হয়— দলটিকে সাময়িক গঠনতন্ত্রের ভিত্তিতে ইসি কর্তৃক গণ-প্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর অনুচ্ছেদ ৯০ ডি-এর ‘ব্যতিক্রম বিধান অনুযায়ী শর্ত সাপেক্ষে নিবন্ধন প্রদান করা হয়। এই নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন তরীকত ফেডারেশনের তৎকালীন মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, জাকের পার্টির মহাসচিব মুন্সি আবদুল লতিফসহ ২৫ জন।

ওই রিটের ওপর জারিকৃত রুল গ্রহণ করে ২০১৩ সালের পহেলা আগস্ট বিচারপতি এম. মোয়াজ্জাম হোসেনের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধন প্রদানকে অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করে রায় দেয়। বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল-হক এই রায় দেন। তবে এই রায়ে একমত হতে পারেননি বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এম. মোয়াজ্জাম হোসেন। তিনি জামায়াতের নিবন্ধনের বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের ওপর ছেড়ে দেন। তবে জ্যেষ্ঠ বিচারপতির এই মতের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে দুই বিচারপতির দেওয়া রায়ে বলা হয়,  নিবন্ধনের সময় দাখিলকৃত জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্রটির উল্লেখযোগ্য ধারা বা বিধানসমূহ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ছিল। অর্থাৎ গণ-প্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ১৯৭২-এর অনুচ্ছেদ ৯০সি (এ) ও (বি) শর্তসমূহ পূরণে সক্ষম হয়নি। যেহেতু সাময়িক গঠনতন্ত্রটি নিবন্ধনকালীন ৯০ সি-এর শর্তসমূহ পূরণ করে দাখিল করা হয়নি, সুতরাং নির্বাচন কমিশন বেআইনি ও আইন বহির্ভূতভাবে তর্কিত নিবন্ধনটি প্রদান করেছে, যা আইনসংগত কর্তৃত্ব ব্যতিরেকে করা হয়েছে এবং এর কোনও আইনগত কার্যকারিতা নেই। রায়টি লিখেছেন বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম। 

এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে দলটি। দলের তৎকালীন আমির মতিউর রহমান নিজামী ও মহাসচিব আলী আহসান মুজাহিদ এই আপিল করেন। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে সরকার। 

এদিকে এক দশক পেরিয়ে গেলেও ঐ আপিল শুনানির জন্য এখনো প্রস্তুত হয়নি। দলটির পক্ষ থেকে আপিলের সারসংক্ষেপ দাখিল না করায় শুনানি শুরু করতে পারেনি দেশের সর্বোচ্চ আদালত। এরপর আপিলের সার সংক্ষেপ দাখিলের জন্য গত ৩১ জানুয়ারি দুই মাস সময় বেধে দেয় আপিল বিভাগ। তখন আদালত বলেন, আগামী দুই মাসের মধ্যে আপিলের সারসংক্ষেপ দাখিল করবেন। যদি এটা দাখিলে ব্যর্থ হন, তাহলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই আপিলটি খারিজ হয়ে যাবে। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের তিন বিচারপতির বেঞ্চ এ আদেশ দেন।





Source link: https://www.ittefaq.com.bd/649884/%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A7%9F%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AE%E0%A6%BF%E0%A6%9B%E0%A6%BF%E0%A6%B2-%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%B6%E0%A7%87-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%B7%E0%A7%87%E0%A6%A7%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A7%8D%E0%A6%9E%E0%A6%BE-%E0%A6%9A%E0%A7%87%E0%A7%9F%E0%A7%87-%E0%A6%86%E0%A6%AA%E0%A6%BF%E0%A6%B2

Sponsors

spot_img

Latest

Will A.I. Steal Our Jobs?

Remaking how humans work is a core part of every tech revolution, which the Austrian economist Joseph Schumpeter called "creative destruction"—a process that...

Chickpea and Swiss Chard Stew

Ever since Sohla El-Waylly’s genius new cookbook arrived, I’ve been tasting my way through her flavor-packed recipes — think, charred lemon risotto...

New Heinz Ketchup Is Cashing in on a Popular TikTok Trend

The Kraft-Heinz Company is causing quite a pickle with its latest ketchup release.Today, the company announced that...

How Cardano Improves Node Performance in New Update

Cardano is under significant regulatory pressure. Cardano is committed to releasing new updates despite regulatory...

Bybit Introduces Mastercard-Powered Debit Card Days After Halting USD Transfers

The new crypto debit card will allow users to pay for goods and services with...