সাভারের আশুলিয়ার অধিবাসী সোহেল রানা। তার বাবা একটি ফৌজদারি মামলায় দণ্ডিত হয়ে আছেন কারাগারে। সাজার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন। নিয়োগ করেছেন আইনজীবীও। কিন্তু দুই বছরে মামলার কোন অগ্রগতি না হওয়ায় চান আইনজীবী পরিবর্তন করতে। কিন্তু মামলা পরিচালনার জন্য যে আইনজীবীকে ওকালতনামা দিয়েছিলেন তিনি অনাপত্তিপত্র না দেওয়ায় নতুন আইনজীবী নিয়োগ দিতে পারছেন না।
ফলে এক ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন তিনি। এতে বিলম্বিত হচ্ছে বিচারপ্রাপ্তি। শুধু সোহেল রানাই নন, এরকম অর্ধশতাধিক বিচারপ্রার্থী অনাপত্তিপত্র পাওয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে আবেদন দিয়েছেন। কিন্তু পূর্বের আইনজীবী এই অনাপত্তিপত্র না দেওয়ায় নতুন আইনজীবী নিয়োগ দিতে পারছেন না বিচারপ্রার্থীরা। ফলে মামলার শুনানি করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে আবেদনগুলো নিষ্পত্তি না হওয়ায় মাসের পর মাস ভোগান্তি পোহাচ্ছেন বিচারপ্রার্থীরা।
অনাপত্তিপত্র পাওয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক বরাবর আবেদন দিতে হয় বিচারপ্রার্থীকে। সমিতির সম্পাদক এ ধরনের আবেদনগুলো নিষ্পত্তির জন্য একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। সমিতির সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হোসেনের নেতৃত্বে এই কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। কমিটি এ বিষয়ে আন্তরিকভাবে কাজ করছে বলে জানান অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ হোসেন।
প্রসঙ্গত, মামলা পরিচালনার জন্যই বিচারপ্রার্থীরা পছন্দমত আইনজীবী নিযুক্ত করে থাকেন। আর আইন পেশায় আইনজীবীদের জন্য নির্ধারিত কোন ফি নাই। মামলা-মোকদ্দমার গতি প্রকৃতি নির্ণয় ও মক্কেলের আর্থিক সামর্থ্যতার কথা বিবেচনায় রেখে একজন আইনজীবী ফি নিয়ে থাকেন। মামলা চলাকালীন সময়ে অনেক বিচারপ্রার্থী আইনজীবী পরিবর্তনের বিষয়টি বিবেচনা করেন। এক্ষেত্রে পূর্বে নিযুক্ত আইনজীবীর অনাপত্তিপত্রের দরকার হয়। এই অনাপত্তিপত্র পেলেই একজন বিচারপ্রার্থী তার পক্ষে মামলা পরিচালনার জন্য নতুন আইনজীবী নিযুক্ত করতে পারেন। যদি পূর্বের নিযুক্ত আইনজীবী অনাপত্তিপত্র (নন অবজেকশন সার্টিফিকেট) দিতে রাজি না হন তাহলে বিচারপ্রার্থী সংশ্লিষ্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক বরাবর অভিযোগ করে থাকেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুন নূর দুলাল ইত্তেফাককে বলেন, এখানে দুরকম বিষয় আছে। প্রথমত মক্কেলরা আমাদের কাছে আসেন। বিশেষ করে যখন জামিন সংক্রান্ত মামলা হয় তখন পক্ষে আদেশ না পেলে অল্পতেই ধৈর্যহীন হয়ে পড়েন। মক্কেল মনে করেন এখনই আইনজীবী বদলে ফেললে একটা ভালো ফল পাওয়া যাবে। মক্কেল অনাপত্তিপত্রের জন্য আবেদন করে থাকেন। তখন ওই মক্কেলকে আমরা যৌক্তিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে বলি। আরেকটি দিক হলো, সরাসরি আইনজীবীর কাছে মামলা না এসে জেলা বারের আইনজীবীর মাধ্যমে মামলা আসে। তখন ওই আইনজীবী তাৎক্ষণিকভাবে কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না। যার কারণে বিচারপ্রার্থীর মধ্যে একটি অবিশ্বাস দেখা দেয়। এ কারণে এসব বিষয় সুরাহার জন্য একটি কমিটি করে দিয়েছি।
তিনি বলেন, আমরা অনেক সময় দেখতে পাই যে মক্কেল যৌক্তিক কারণে অসন্তুষ্ট হয়েছেন। তখন মক্কেলের আবেদনটি সরাসরি আমি সংশ্লিষ্ট আইনজীবীর কাছে পাঠিয়ে দেই। তখন অনেক আইনজীবী সঙ্গে সঙ্গে অনাপত্তিপত্র দিয়ে দেন। আবার অনেক আইনজীবী অর্থ ব্যয় করে মামলা দাখিল করেছেন এবং তার ফি এর বিষয় রয়েছে। তখন হয়ত আইনজীবী তাৎক্ষণিকভাবে অনাপত্তিপত্র দেন না। এরপর বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য কমিটির কাছে পাঠানো হয়। কমিটি দুই পক্ষকে শুনে একটা সিদ্ধান্ত দেন।
ভুক্তভোগী সোহেল রানা ইত্তেফাককে বলেন, চার মাস আগে আমি আবেদনটি দিয়েছি। কিন্তু এখনো কোন সমাধান পায়নি। আমার বাবা যাবজ্জীবন সাজার আসামি। নতুন আইনজীবী নিয়োগ করতে না পারায় তার জামিন শুনানির জন্য পদক্ষেপ নিতে পারছি না।