আমরা বোঝা নই, দেশের সম্পদ


শান্তিচুক্তির পর থেকে তিন পার্বত্য জেলায় অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়ন চোখে পড়ার মতো। যার সুবাদে এলাকায় কর্মসংস্থানের সুযোগ বেড়েছে, দারিদ্র্য কমেছে, শিক্ষাবিস্তার হয়েছে, স্বাস্থ্যঝুঁকি কমেছে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে মহিলাদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। জলবায়ুগত পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় সক্ষমতা অর্জন করতে শিখেছে। বিদ্যুতায়নের কারণে অনেক এলাকা আলোকিত হয়েছে, তথ্যপ্রবাহ ও যোগাযোগ বেড়েছে। সামাজিক সুবিধা বেড়েছে, ক্রীড়া ও সংস্কৃতির উন্নতি হয়েছে, মা ও শিশু কল্যাণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং দাপ্তরিক কাজে সামর্থ্য বেড়েছে। সর্বোপরি এলাকার মানুষের মনে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে।

পার্বত্য বিতর্ক উৎসব-২০২৩-এ অংশগ্রহণ করে তিন পার্বত্য জেলার শিক্ষার্থীরা এই অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, আমাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। আমরা বোঝা নই, আমরা এখন দেশের সম্পদ। নারীরাও পিছিয়ে নেই। লেখাপড়া ও কর্মক্ষেত্র সব জায়গায় তাদের সরব উপস্থিতি। পর্যটনের জন্য পার্বত্যাঞ্চল এখন অপার সম্ভাবনাময়। পাহাড়ে এত উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে শান্তিচুক্তির কারণে।

‘সফলতা অর্জনের জন্য দারিদ্র্যতা বড় অন্তরায় নয়’ শীর্ষক এই বিতর্ক উৎসবে পার্বত্য তিন জেলার ৫০টি মাধ্যমিক স্কুলের ১ হাজার শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। গত ৩১ জানুয়ারি  পার্বত্য বিতর্ক উৎসব-২০২৩-এর গ্রান্ড ফাইনাল ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। ৫০টি স্কুলের মধ্যে ফাইনালে ছিল দুটি স্কুল। ‘সফলতা অর্জনের জন্য দারিদ্র্যতা বড় অন্তরায় নয়’ শিরোনামের পক্ষে ছিল বান্দরবনের নাইক্ষ্যংছড়ি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়। আর শিরোনামের বিপক্ষে ছিল রাঙ্গামাটির মোনঘর আবাসিক বিদ্যালয়। শিক্ষার্থীরা বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে নেলসন ম্যান্ডেলা, এ পি জে আবদুল কালাম, ফজলে হোসেন আবেদ, ড. আতিয়ার রহমানসহ অর্থনীতিবিদ ও দেশ-বিদেশের গবেষকদের গবেষণার তথ্য উপস্থাপন করেন। জ্ঞানগর্ভ তথ্য তুলে ধরেন।

কয়েক জন বক্তা ও শিক্ষার্থীরা বলেন, দুই দশক আগের ও বর্তমান পার্বত্যাঞ্চলের চিত্র অনেক পরিবর্তন হয়েছে। তারা বলেন, শান্তিচুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের যেমন অবসান ঘটেছে তেমনি এর পর থেকে এগিয়ে চলেছে অবকাঠামোগত ও যোগাযোগব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ। এক কথায় বদলে গেছে পাহাড়ের চিত্র। অচিন্তনীয় উন্নয়ন হয়েছে পাহাড়ের তিন জেলায়। বিশেষ করে যোগাযোগব্যবস্থায় এসেছে আমূল পরিবর্তন।

গহীন অরণ্যেও মোবাইল ফোন যোগাযোগ নেটওয়ার্ক পাহাড়বাসীর জন্য এক অনন্য প্রাপ্তি। আগে মাত্র একটি প্রাইমারি স্কুল ছিল। শান্তিচুক্তির পর ২৬৪টি বেসরকারি স্কুল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয়করণ করেন। প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে। মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন করেছে সরকার। এছাড়া সরকারি বিভিন্ন খাতে যেমন অবকাঠামোগত উন্নয়ন রয়েছে তেমনি বেসরকারি পর্যায়েও থেমে নেই। পাহাড়ে এক সময় বিদ্যুৎ ছিল না, রাস্তাঘাট ছিল না। সরকার এখন পার্বত্য তিন জেলায় ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছে। যেসব দুর্গম এলাকায় বিদ্যুতের খুঁটি স্থাপন করা সম্ভব নয়, সেখানে সোলারের মাধ্যমে বিদ্যুতের আলো পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। আগামী জুন মাসের মধ্যে এই কার্যক্রম শেষ হবে বলে বক্তারা জানান। পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক বিরাজমান। সবাই শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছে। আগে পার্বত্যাঞ্চলের মানুষের জীবিকা ছিল জুম চাষ। এখন বিভিন্ন ফল, কৃষিসহ সব ধরনের পেশায় মানুষ জীবিকা অর্জন করছেন। অনেকে সরকারি চাকরি করছেন। অনেকে ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন। এসব সম্ভব হয়েছে শান্তিচুক্তির কারণে। যারা এই শান্তিচুক্তির বিরোধিতা করে, তারা নিজেদের স্বার্থে এটা করছে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে শান্তিচুক্তি বিরোধিতাকারীদের কোনো সম্পর্ক নেই। তাই কে কি বিরোধিতা করল সেটা আমরা বিবেচনা করি না। শিক্ষার্থীরা পার্বত্যাঞ্চলের উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভূয়সী প্রশংসা করেন। তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় দুর্গম এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন, চিকিৎসা সেবাসহ আর্তমানবতার সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। করোনার সময় যে সেবা দিয়েছেন তা চোখে না দেখলে বোঝা যাবে না। তাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার কারণে পাহাড়ে শান্তি ফিরে এসেছে। যার সুফল পাহাড়ি-বাঙালিরা ভোগ করছে।  

বিতর্ক উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি বলেন, শান্তিচুক্তির আগে পার্বত্য অঞ্চলের মানুষ পূর্ণিমা রাতেও চাঁদ দেখেনি। মনখুলে ধর্মপালনও করা যায়নি। শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের পর সেই অবস্থা আর নেই। পাহাড় এখন বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত। কৃষিতেও বিপ্লব ঘটবে। পাহাড়ে এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদী রাখা হবে না। পার্বত্য তিন জেলার উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী দুই হাতে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। সভাপতিত্ব করেন ব্র্যাক এডুকেশন প্রোগ্রামের পরিচালক সাফি রহমান খান। ব্র্যাক ও ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির যৌথ আয়োজনে এবং গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডা এর সহযোগিতায় রাজধানীর বিএফডিসেতে আয়োজিত গ্র্যান্ড ফাইনালে বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়কে পরাজিত করে রাঙ্গামাটির মোনঘর আবাসিক বিদ্যালয় চ্যাম্পিয়ন হয়। প্রতিযোগিতার শ্রেষ্ঠ বক্তা হয় মোনঘর আবাসিক বিদ্যালয়ের দলনেতা সুজাতা চাকমা। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচির প্রধান প্রফুল্ল চন্দ্র বর্মন। শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

 





Source link: https://www.ittefaq.com.bd/630494/%E0%A6%86%E0%A6%AE%E0%A6%B0%E0%A6%BE-%E0%A6%AC%E0%A7%8B%E0%A6%9D%E0%A6%BE-%E0%A6%A8%E0%A6%87-%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A7%8D%E0%A6%AA%E0%A6%A6

Sponsors

spot_img

Latest

3 Knicks facing the most questions ahead of 2023-24 season

SG Quentin GrimesAfter a slow start, Quentin Grimes became a central piece in New York’s success last season. The third year guard fills a...

Best Samsung Galaxy deals: Per-order the Samsung Galaxy Tab S9 and save $120

On July 26, Samsung's Galaxy Unpacked event unveiled a lineup of new product announcements, including the Galaxy Z Flip and Fold 5. In...

Razer Blade 16 hands-on: a dream gaming laptop

Razer has given us a first look at the Razer Blade 16 and Razer Blade 18, which will be released in the next...

Optimism (OP) Price Crafts A Bullish Cup, But Can It Sustain The Momentum?

Optimism, a layer-2 solution on the Ethereum blockchain, has gained traction with a TVL exceeding $1.22 billion. The OP price is currently forming a...

Joe Rogan Says Kid Rock Destroyed Bud Light – ‘Game Over’

The popular podcast host Joe Rogan is crediting Kid Rock with taking down Bud Light after the brand went woke by teaming up...