শেষ পৌষে দেশের উত্তরাঞ্চলের কয়েক জেলায় বয়ে যাচ্ছে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। তাপমাত্রা কমতে কমতে নেমেছে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে। মধ্যরাত থেকে দুপুর পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকছে চারিদিক। বুধবার রাজশাহী ও পাবনার ঈশ্বরদীতে চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
রাজশাহী :রাজশাহীতে বুধবার চলতি মৌসুমে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। বয়ে যাচ্ছে উত্তরের হিমেল হাওয়া। এদিকে তীব্র শীতের কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। শীত বাড়ায় সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া মানুষরা। পথের ধারে ও খোলা স্থানে ছিন্নমূল মানুষদের খড়কুটোয় আগুন জ্বালিয়ে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে। অনেকে ভিড় করছেন গরম কাপড়ের দোকানে। এদিকে হঠাত্ শীত বাড়ায় হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা। স্থানীয় আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, আকাশে থাকা মেঘ ও কুয়াশা কেটে গেলে শীত আরো বাড়বে। আগামী তিন দিন এমন তাপমাত্রা অব্যাহত থাকতে পারে। এছাড়া আগামী ১৫-১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত রাজশাহীতে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে তীব্র শীতের কারণে হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডাজনিত নানা রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গত কয়েক দিনে রাজশাহীর হাসপাতালগুলোতে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় আট গুণ। এ বিষয়ে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. শামীম ইয়াজদানী জানান, তীব্র শীতের কারণে হাসপাতালগুলোতে ঠান্ডাজনিত রোগী বাড়ছে। আমরা জটিল রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি করছি। বাকিদের ওষুধ ও পরামর্শ দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা :চুয়াডাঙ্গায় বুধবার সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। টানা শীতে বিপাকে পড়েছেন ছিন্নমূল ও নিম্ন-আয়ের মানুষ। ইজিবাইক চালক সিরাজুল ইসলাম জানান, শীতের তীব্রতার সঙ্গে ঠান্ডা বাতাস থাকায় গাড়ি চালাতে কষ্ট হচ্ছে। এছাড়া যাত্রীও কম। কাজের সন্ধানে বের হওয়া দিনমজুর আরমান আলি বলেন, কনকনে শীতের সঙ্গে উত্তরের হিমেল হাওয়ায় কাজ করতে কষ্ট হয়। তাই কাজ না করে বাড়ি ফিরে যেতে হচ্ছে। এদিকে, গত ৩ দিনে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৮৭ জন এবং শিশু ওয়ার্ডে ৬৭ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। প্রতিদিন বহির্বিভাগে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ৪০০-৫০০ রোগী চিকিত্সা নিচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আতাউর রহমান বলেন, তীব্র শীতে রোটাভাইরাসের কারণে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রকিবুল হাসান বলেন, ১০ ডিগ্রির নিচে তাপমাত্রা নেমে গেলে শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। বুধবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেই সঙ্গে বাতাসের আর্দ্রতার ছিল ৯৩ শতাংশ।
ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) :বুধবার সকাল ৯ টায় উপজেলায় ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। টানা শীতে হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিত্সক ডা. শাহিনুর রহমান শিপন জানান, হাসপাতালে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে শিশু ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগীর চাপ বেশি। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সবুজ কুমার গুপ্ত জানান, এ পর্যন্ত ৪ হাজার ১০০ কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।
রাজিবপুর (কুড়িগ্রাম) :গত কয়েক দিন ধরে সূর্যের দেখা না মেলায় তীব্র শীত ও কনকনে ঠান্ডায় স্ববির হয়ে পড়েছে জনজীবন। কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক (অতি. দা.) মো. তুহিন মিয়া জানান, এ অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু শৈতপ্রবাহ বয়ে যাওয়ায় শীত বেড়েছে। এ অবস্থা আরো দুই-এক দিন বিরাজ করতে পারে।
ঈশ্বরদী (পাবনা) :বুধবার ঈশ্বরদীতে মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছে। গৃহিণী মাইমুনা বেগম বলেন, ‘মাত্রাতিরিক্ত শীত অনুভূত হচ্ছে। রাতে একাধিক কম্বল ও লেপ নিলেও বিছানা বরফের মতো লাগে।’ আবহাওয়া অফিসের নাজমুল হক রঞ্জন বলেন, উত্তর-পূর্বকোণ থেকে ৩ নটিক্যাল গতিতে বয়ে যাওয়া হিমেল বাতাসের কারণে ঠান্ডা অনুভব বেশি হচ্ছে।