উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে নদনদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোন কোন নদীর পানি বিপত্সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে বন্যার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে নদীতীরবর্তী এলাকার মানুষের মধ্যে। আমাদের প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর:
সিরাজগঞ্জ: যমুনা নদীর পানির সঙ্গে বাড়ছে অভ্যন্তরীণ করতোয়া, ফুলজোড় ও বড়াল নদীর পানিও। গত দুই দিন ধরে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার চরমালশা পাড়া, চরমিরপুর, পুঠিয়া বাড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকালে সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্টে যমুনা নদীর পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ১৫ মিটার। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৮ সেন্টিমিটার পানি বেড়ে বিপত্সীমার ১২ দশমিক ৯০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে কাজিপুর পয়েন্টে যমুনা নদীর পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৭৫ মিটার। গত ২৪ ঘণ্টায় ২০ সেন্টিমিটার পানি বেড়ে বিপত্সীমার ১০ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়াও অভ্যন্তরীণ চলনবিল, করতোয়া, ফুলজোড়, ইছামতি নদীসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এদিকে যমুনায় পানি বাড়ার ফলে আবারও আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে যমুনার তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের মানুষেরা। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রনজিত কুমার সরকার জানান, উজানে ভারী বর্ষনের কারণে যমুনা নদীসহ অভ্যন্তরীণ নদনদীর পানি আবারও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
নাগেশ্বরী (কুড়িগ্রাম): নাগেশ্বরীতে ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার, গঙ্গাধর, ফুলকুমার, শংকোষসহ সব নদনদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাটেশ্বরী পয়েন্টে দুধকুমার নদের পানি বিপত্সীমার থেকে ১৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের আশঙ্কা অল্প সময়ের মধ্যে তা বিপত্সীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হবে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের জলস্তর তথ্যানুযায়ী, বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপত্সীমা থেকে ৬৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে পাটেশ্বরী পয়েন্টে দুধকুমার নদের পানি বিপত্সীমার থেকে ১৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে তলিয়ে যাচ্ছে নিম্নাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী তৌহিদ সারওয়ার জানান, যেভাবে পানি বাড়ছে, তাতে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। নদীর পানি বিপত্সীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। বালুভর্তি জিওব্যাগ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দুর্বল জায়গাগুলোর কোথাও বাঁধ ভাঙা বা তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হলে আমরা তাত্ক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
পাটগ্রাম (লালমনিরহাট): তিস্তা নদীর ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপদ সীমার সর্বোচ্চ ১৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ি। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। এতে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম ও হাতীবান্ধা উপজেলায় প্রায় কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানি নিয়ন্ত্রণে ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
বৃহস্পতিবার সকাল ৯ টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ দশমিক ৩৪ সেন্টিমিটার, যা বিপত্সীমার ১৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা বলেন, সকাল ৬টায় বিপত্সীমার ১৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বর্ষার মৌসুমি এই প্রথম সর্বোচ্চ পানি বিপত্সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
হাতীবান্ধার সিন্দুর্না ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন, তিস্তা চরের ঘরবাড়িতে গতরাত থেকে পানি প্রবেশ করছে। লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, উজানের ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তার পানি বিপিসমার ১৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলায় তিস্তার চরে বাসিন্দাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে।