তুরস্ক ও সিরিয়ার ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ৪০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বিপর্যয়ের এক সপ্তাহ পরেও দুই দেশে মৃত্যুমিছিল থামছে না। উদ্ধারের বদলে এবার যারা বেঁচে গেছেন, তাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থায় জোর দিচ্ছে প্রশাসন। সময় যত গড়াচ্ছে, ভূমিকম্পের ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে যাওয়া মানুষদের জীবিত অবস্থায় উদ্ধারের সম্ভাবনা তত ক্ষীণ হয়ে আসছে। তুরস্কে বর্তমানে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের ৬ ডিগ্রি নিচে। এই প্রবল ঠান্ডায় উদ্ধারকাজও ব্যাহত হচ্ছে বারবার।
গত ৬ ফেব্রুয়ারির ভূমিকম্পে সিরিয়ায় এখন পর্যন্ত ৫ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। তুরস্কে এরই মধ্যে মৃতের সংখ্যা ৩১ হাজার ছাড়িয়েছে। তুরস্কে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে এবং সাহায্য সংস্থাগুলো বলছে যে, সিরিয়ায় এই সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে। দুই দেশেরই উদ্ধারকারী দলগুলো এখন বিস্তীর্ণ এলাকায় উদ্ধারকাজ গুটিয়ে আনছে। কারণ জীবিত কাউকে উদ্ধারের সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে আসছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, উদ্ধারকাজের চেয়ে এবার আশ্রয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। দুর্গতদের আশ্রয়ের বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে খাবার এবং পরিচর্যার দায়িত্বও নিচ্ছে প্রশাসন। একটি বেসরকারি ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানের পরিসংখ্যান বলছে, তুরস্কে এই ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৭ লাখ কোটি টাকা। দেশের অন্তত ১০টি শহরে প্রায় ৪২ হাজার বাড়ি হয় সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে বা অবিলম্বে ভাঙা দরকার।
জাতিসংঘ বলছে যে, গত সপ্তাহের মারাত্মক ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত হওয়ার পর দেশটিতে ত্রাণ-সহায়তা পৌঁছাতে আরো দুটি সীমান্ত পারাপার খুলতে রাজি হয়েছে সিরিয়ার সরকার। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের একজন মুখপাত্র বিবিসিকে বলেছেন, ‘এটি একটি বড় পরিবর্তন আসতে চলেছে। আমরা এখন পর্যন্ত একটি সীমান্ত পারাপার ব্যবহার করছি।’ অনেক সিরীয় নাগরিক তাদের যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে সহায়তা না পৌঁছানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকার উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হওয়ার জন্য দেশটির ওপর আরোপিত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাকে দায়ী করেছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক সাহায্য গোষ্ঠীগুলো বলছে, আসাদ সরকারের অব্যবস্থাপনা এবং দেশের সব এলাকায় উদ্ধারকাজে সংযুক্ত না হওয়াটাই মূল প্রতিবন্ধকতা। সোমবার দামেস্কে প্রেসিডেন্ট আসাদের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের পর জাতিসংঘ নতুন দুটি সীমান্ত পারাপার খুলে দেওয়ার এই ঘোষণা দিয়েছে। এগুলো হচ্ছে- তুরস্কের সীমান্তের সঙ্গে থাকা বাব আল-সালাম এবং আল রাই সীমান্ত পারাপার। এতে বলা হয়েছে, বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় সীমান্ত পারাপার প্রাথমিকভাবে তিন মাসের জন্য খোলা থাকবে। বিবিসি রেডিও ফোরের ওয়ার্ল্ড টুনাইট প্রোগ্রামকে গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক বলেছেন, খুব শিগিগরই আমরা অন্য দুটি পারাপার ব্যবহার করব। তিনি বলেন, আমরা আশা করি যে, যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের এটি ব্যবহার করতে হবে ততক্ষণ পর্যন্ত চুক্তিটি স্থায়ী হবে। —বিবিসি ও রয়টার্স