আজ ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। দুই যুগ আগে মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিকেন্দ্রের কাজ শুরু হলেও এখনো তা অসমাপ্তই থেকে গেল। নতুন করে ৪০৯ কোটি ৯ লাখ টাকা বরাদ্দে আন্তর্জাতিক মানের ‘মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিকেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প’ নামে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওবেয়সাইট থেকে জানা গেছে, ২০২১ সালের ২০মে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং সেখান থেকে কিছু সংশোধনী দেওয়া হয়েছে। সে সংশোধনীতে এখনো আটকে রয়েছে প্রকল্পটি।
নতুন প্রস্তাবিত প্রকল্প সম্পন্ন হলে পালটে যাবে মুজিবনগরের চিত্র। মুজিবনগরকে দেখেই পুরো মুক্তিযুদ্ধের চিত্রপট পর্যটকের চোখের সামনে ভেসে উঠবে। নতুন প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক স্কাল্পচার গার্ডেন, বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার মেমোরিয়াল মুর্যাল ও শপথ গ্রহণের গ্রাউন্ড, শেখ হাসিনা মঞ্চ, প্যানোরমা ও অ্যাম্পি থিয়েটার, হিস্টোরি ওয়াক, তিনতলা বিশিষ্ট অ্যাডমিন ব্লক, দুইতলা বিশিষ্ট মালটিপারপাস ব্লক, চারতলা বিশিষ্ট ট্রেনিং সেন্টার, চারতলা বিশিষ্ট অফিসার্স ও স্টাফ কোয়ার্টার, সুইমিং পুল, ফুড জিয়স্ক ও রেস্ট রুম, রেন্টাল সপ, ওয়াচ টাওয়ার, ভিভিআইপি ও ভিআইপি পার্কিং, সাধারণ পার্কিং, মাছ ধরার ডেক, রোপ ওয়ে, দুইতলা বিশিষ্ট বোট ক্লাব, সুপেয় পানির ডিসপেনসার, ব্যাংক প্রটেকশনসহ লেক, ব্রিজ, কনটোর্স, আইল্যান্ড, ওয়াচ ওয়ে, চালকদের আবাসন, শিশু পরিবার ও ডরমেটরি, দুইতলা বিশিষ্ট স্কুল, টেনিস কাম বাস্কেটবল কোর্ট, প্লে গ্রাউন্ড, লেজার শো ওয়াটার শিল্ড।
আর এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে হলে নতুন ৫৬.০৫ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। সবমিলিয়ে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিকেন্দ্রটি ১২৭ একরে রূপ নেবে। জমি অধিগ্রহণসহ নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নে বরাদ্দ ধরা হয়েছে প্রায় ৪১০ কোটি টাকা। প্রয়োজনে প্রকল্পের অর্থের পরিমাণ বাড়ানো হবে এমনটাও জানা গেছে।
প্রায় দুই যুগ আগে ৭২ একর জমি অধিগ্রহণ করে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বৈদ্যনাথতলায় নির্মাণ করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিকেন্দ্র। তবে নির্মিত বেশকিছু স্থাপনায় ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। প্রকল্পের মধ্যে ৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মুক্তিযুদ্ধে সেক্টর ভিত্তিক বাংলাদেশ মানচিত্র নির্মাণকাজ শেষ হয়ে ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়নি। মানচিত্রে পুরো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন চিত্র ফুটে উঠলেও মুজিবনগরের শপথ নেওয়ার কোনো চিত্র সেখানে স্থান পায়নি। গার্ড অব অনারের ভাস্কর্যে ১২ জন আনসার সদস্যর বিপরীতে দেখানো হয়েছে আট জনকে। মানচিত্রে সেক্টর ভিত্তিক কমান্ডারদের ভাস্কর্যও নেই।
মানচিত্রের বাইরে নির্মিত বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের ভাস্কর্যসহ অন্যান্য ভাস্কর্যগুলো এতটাই নিম্নমানের যে, মাঝে মধ্যেই সেগুলো ভেঙে পড়ে। অনেকগুলোর ভেতরে রডের বদলে চিকন তার দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে শিলাবৃষ্টি বা ঝড় হলে সেগুলো ভেঙে যায়। কয়েক দফা সেগুলো সংস্কার করাও হয়েছে। মেহেরপুর গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৮ সালে কাজ শুরু করে মাঝে প্রকল্প কাটাছেঁড়া করা হয়। ফলে কাজটি শেষ হয় ২০১১ সালে। অতি নিম্নমানের কাজ হবার কারণেই ভাস্কর্যগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। প্রকল্পর অন্যান্য কাজ এখনো অসমাপ্ত অবস্থায় আছে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবু বাকের তৌহিদ বলেন, মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিকেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পটি প্ল্যানিং কমিশনে পাঠানো হয়েছিল। সেখানে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হয়েছে। সভা থেকে কিছু সংশোধনী দেওয়া হয়েছে। সংশোধন করে আবার প্ল্যানিং কমিশনে পাঠানোর প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ও মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ফরহাদ হোসেন বলেন, নতুন করে প্রস্তাবিত মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ কমপ্লেক্সকে ঢেলে সাজানোর জন্য প্রাথমিকভাবে ৪১০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প রেডি করেছে। আমরা চাচ্ছি, দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটি একনেকে পাশ করানোর জন্য। এক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীও একমত হয়েছেন।