শুক্রবার (২৮ জুলাই) রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির বিশাল মহাসমাবেশ থেকে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আজ শনিবার ঢাকার সব প্রবেশ মুখে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচী ঘোষনা করা হয়েছে।
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অডিও বক্তব্যে সরকারের পতন পর্যন্ত রাজপথ দখলে রাখার আহবানের পর মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই অবস্থানের কর্মসূচী ঘোষনা করে বলেন, পরপর আরো কঠোর কর্মসূচী দেয়া হবে। যদি নিজেদের ভালো চান,এখনো সময় আছে। আমাদের এক দফা দাবি, সেটা মেনে নিন আর পদত্যাগ করুন। কারণ,সমগ্র বাংলাদেশ আজ জেগে উঠেছে। যদি পদত্যাগ না করেন,এ দেশের মানুষ আপনাদের পতন করেই ছাড়বে। সারা দেশ থেকে গণতন্ত্রকামী সাধারণ মানুষ, ছাত্র-যুবসমাজ, নারী, প্রবীণ মানুষ আজকের এ মহাসমাবেশে উপস্থিত হয়েছে। মতিঝিলের মধুমিতা চত্বর থেকে অন্যদিকে কাকরাইল-শান্তিনগর পর্যন্ত জনারন্যের এই মহাসমাবেশ বাংলাদেশের পরিবর্তনের মাইলফলক।
সমাবেশে অন্যান্য নেতারা বিএনপির নেতাকর্মীদেরকে বাড়ি না গিয়ে এক দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঢাকায় থেকে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য রাখেন। তারা বলেন,ভবিষ্যতে কোনও ঝড়-তুফান মানবো না। সব কিছু মোকাবিলা করে দলের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে। নানা নাটকীয়তার পর গতকাল দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গতকাল এই সমাবেশের আকার ছিল অসামান্য।
গতকাল ফজরের নামাজের পর থেকে খ্ল খ্ল মিছিল নিয়ে সারাদেশ থেকে আগত নেতাকর্মীরা নয়াপল্টন ঘিরে জমায়েত হতে থাকেন। তাদের অভিযোগ রয়েছে, ঢাকার প্রবেশমুখে বাধার সসম্মুখিন হতে হয়েছে তাদের। সেই বাধা উপেক্ষা করেই হেঁটে হেঁটে নয়াপল্টনে জড়ো হন তারা। গত ৩- দিন ধরে দেশের প্রতিটি এলাকা থেকে নেতাকর্মীরা এসেছেন ঢাকায়।বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি নয়াপল্টন এলাকা ছাড়িয়ে একদিকে ফকিরাপুল ও নটরডেম কলেজ-মতিঝিল পর্যন্ত অন্যদিকে শান্তিনগর, মৌচাক, কাকরাইল মসজিদ, সেগুন বাগিচাসহ বিজয় নগর কালভার্ট রোড অব্দি ছাড়িয়ে যায়।
মহাসমাবেশে আসা নেতাকর্মীদের হাতে ছিল জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা। তাদের হাতে থাকা ব্যানারে সরকারের পদত্যাগ ও খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানানো হয়।বিএনপির পাশাপাশি যুগপত্ আন্দোলনে শরিকেরাও ১২ টি স্থানে এক দফা দাবিতে সমাবেশ কর্মসূচি পালন করে।ভোর থেকেই মোড়ে মোড়ে বাড়ানো হয় পুলিশি নিরাপত্তা। ঢাকার প্রবেশমুখে বসানো হয়েছিল চেকপোস্ট। এ ছাড়াও নিরাপত্তার স্বার্থে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত ফোর্স এবং বিজিবি। মহাসমাবেশ এলাকায় ইন্টারনেট বিভ্রাট সৃষ্টি হয়। মোবাইলে কথা বলা গেলেও ইন্টারনেটে ব্যবহারে পড়তে হয় চরম ভোগান্তিতে। এর ফলে পেশাগত কাজ করতে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হন সাংবাদিকরা। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক সাংবাদিকদের বলেন, আমার জানামতে (যদিও আমি বিটিআরসি, এনটিএমসির কেউ না) কোথাও মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করা হয় না। একটি টাওয়ারের নির্দিষ্ট ধারণক্ষমতা থাকে। টাওয়ারের যদি ধারণাক্ষমতা ১০ হাজার হয়, আর সেখানে যদি ১০ লাখ লোক একত্রে চেষ্টা করেন তাহলে নেটওয়ার্কে ধীরগতি তো হবেই। তবে নেটওয়ার্ক কখনো বন্ধ করা হয় না
জুমার নামাজের পর বেলা ২টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে অস্থায়ী মঞ্চে কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে মহাসমাবেশের কার্যক্রম শুরু হয়।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের সভাপতিত্বে এবং ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি’র আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান এবং দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালামের সঞ্চালনায় এ সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান,ড. আবদুল মঈন খান,গয়েশ্বর চন্দ্র রায়,আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী,আবদুল্লাহ আল নোমান, রুহুল কবির রিজভী, আবদুল আউয়াল মিন্টু,মীর নাছির উদ্দিন,শাহজাহান ওমর, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বরকত উল্লাহ বুলু,শামসুজ্জামান দুদু,জয়নুল আবেদীন, নিতাই রায় চৌধুরী, মিজানুর রহমান মিনু,জয়নুল আবদিন ফারুক,ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, মজিবুর রহমান সারোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, হারুনুর রশীদ, আবদুস সালাম আজাদ,সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স,শামা ওবায়েদ, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, আমিনুল হক, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, স্বেচ্ছাসেবক দলের এস এম জিলানী, কৃষকদলের হাসান জাফির তুহিন, ছাত্রদলের কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাইফ মাহমুদ জুয়েল,মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক খান, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসাইন, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
বিএনপির মহাসচিব বলেন,এই সরকারের পদত্যাগ এবং নিরপেক্ষ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে যুগপত্ আন্দোলন করছি। এ আন্দোলনে শরিক ৩৬টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে একমত হয়েছি যে এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। কারণ, তাদের অধীনে নির্বাচন হলে সাধারণ মানুষ ভোট দিতে পারবেন না।আওয়ামী লীগ সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। এই অবৈধ সংসদকে বিলুপ্ত করতে হবে।আমাদের পরিষ্কার কথা, দফা এক, দাবি এক-এই সরকারের পদত্যাগ।পুলিশ প্রশাসনকে হুঁশিয়ার করে মির্জা ফখরুল বলেন,দলীয় সরকারের অধীনে বেআইনিভাবে জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন না। সংবিধান অনুযায়ী, আইনের শাসন মেনে কাজ করেন। গ্রেপ্তার,হয়রানি বন্ধ করুন,কারাগারে যাঁদের আটক রেখেছেন, তাঁদের মুক্তি দিন। তিনি অভিযোগ করেন, সাধারণ মানুষের হয়ে যিনি আন্দোলন-সংগ্রাম করেন, সেই তারেক রহমানকে বেআইনিভাবে সাজা দিয়ে,অত্যাচার করে এ দেশ থেকে নির্বাসিত করা হয়েছে। খালেদা জিয়াকে অবৈধভাবে সাজা দিয়ে কারাবন্দী করেছে।মির্জা ফখরুল বলেন,এই বেআইনি, অসাংবিধানিক, ভোট চোর আওয়ামী লীগ সরকার জনগণকে বোকা বানিয়ে বারবার ক্ষমতায় থাকতে চায়। কিন্তু দেশের মানুষ এই সরকারের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছে। তারা একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ দেখতে চায়। তিনি আরও বলেন, এই গণবিরোধী, অবৈধ ও অগণতান্ত্রিক সরকার সব মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি। সাধারণ মানুষ তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারেন না। এ জন্য মানুষ ভোটেও অংশগ্রহণ করেন না। জনগণের এখন নির্বাচনব্যবস্থার ওপর কোনো আস্থা নেই।গত দুই দিনে মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, কিন্তু গ্রেপ্তার করে কি সমাবেশ আটকাতে পেরেছেন? পারেননি।
কর্মসূচির আর অনুমতি চাইবে না বিএনপি: মির্জা আব্বাস
মির্জা আব্বাস বলেন,আমরা তো আর অনুমতি চাইব না। এবারও চাইনি,শুধু অবহিত করেছি। যারা মহাসমাবেশে এসেছে তারা কোথায় থেকেছে? হোটেলে বা আত্মীয়ের বাড়িতে। যাদের আত্মীয়ের বাড়ি নেই তারা ফুটপাতে থেকেছে। পুলিশ আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করেছে। আমি তাদের মুক্তি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। না হলে ৯০-এর মতো জেলের তালা ভেঙে আনব।
পদত্যাগের আগ পর্যন্ত ঢাকায় থাকেন: গয়েশ্বর
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বক্তব্যে কি শেখ হাসিনা ক্ষমতা থেকে নামবে? ভাষণে যদি দেশ স্বাধীন হতো, তাহলে শেখ মুজিবর রহমানের ভাষণে দেশ স্বাধীন হতো। কিন্তু তা হয়নি, দেশ স্বাধীন হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে।আমরা খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই। কিন্তু আদালত তাকে জামিন দিল না, কেন? কারণ, এই উচ্চ আদালত, নিম্ন আদালত শেখ হাসিনাকে আবার ক্ষমতায় রাখতে চায়। সুতরাং যে আদালত শেখ হাসিনার হাতের মুঠোয়, যে প্রশাসন তার হাতের মুঠো থেকে বেরুচ্ছে না সেই অবস্থায় ফয়সালা করতে হবে রাজপথে। যারা ঢাকায় আছেন,তারা ঢাকায় থাকেন। শেখ হাসিনার পদত্যাগের আগ পর্যন্ত ঘরে ফিরবেন না।
নেতাকর্মীদের বাড়ি ফিরতে বারণ করলেন আমির খসরু
এক দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত নেতাকর্মীদের বাড়ি ফিরতে বারণ করলেন আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, আজকের এই মহাসমাবেশের পর শেখ হাসিনাকে গণভবন ত্যাগ করা ছাড়া উপায় নেই। শেখ হাসিনাকে বলব, গণভবন ত্যাগ করার প্রস্তুতি নিন।
পদ্মা মেঘনা যমুনার ঢেউয়ে মানুষ এসেছে: রিজভী
রুহুল কবির রিজভী বলেন,আজকের সমাবেশে তারা অনেক বাধা দিয়েছে। আমাদের শত শত নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাজধানীর সব প্রবেশপথে নেতাকর্মীদের মহাসমাবেশে আসতে বাধা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আপনারা জনস্রোত ঠেকাতে পারেননি। কখনোই পারবেন না। পদ্মা মেঘনা যমুনার ঢেউয়ে মানুষ এসেছে নয়াপল্টনে। পুরো জাতি আজ এক দফা দাবির সঙ্গে একমত।
ঢাকা’র প্রবেশ মুখে যেখানে যেখানে আজ অবস্থান করবে বিএনপি
এক দফার আন্দোলনের কর্মসুচী হিসাবে আজ শনিবার সকাল ১১ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত ঢাকার প্রবেশ মুখে অবস্থান কর্মসূচী পালন করবে বিএনপি। এর মধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা বিএনপি উত্তরা বিএনএস সেন্টার উল্টো দিকে রাস্তার পুর্ব পাশে অবস্থান নিবে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন বিএনপি স্থায়ী কমিটি সদস্য আবদুল মঈন খান,ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি গাবতলী এস এ খালেক বাস স্টেশন সামনেঅবস্থান নিবে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি অবস্থান নিবে নয়া বাজার বিএনপি অফিস সামনে। প্রধান অতিথি থাকবেন বিএনপি স্থায়ী কমিটি সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়,ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি যাত্রাবাড়ী হানিফ ফ্লাই ওভার থেকে নেমে চট্টগ্রাম রোড দনিয়া কলেজ সংলগ্ন স্থানে অবস্থান কর্মসূচী পালন করবে।প্রধান অতিথি থাকবেন বিএনপি স্থায়ী কমিটি সদস্য মির্জা আব্বাস।
১২ স্থানে সমমনা ৩৭টি দল ও জোটের সমাবেশ করেছে
শেখ হাসিনার পদত্যাগসহ নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার এক দফা দাবিতে গতকাল শুক্রবার বিএনপির মহাসমাবেশের পাশাপাশি যুগপত্ আন্দোলনের শরিক সমমনা ৩৭টি দল ও জোটের সমাবেশ করেছে।এর মধ্যে গণতন্ত্র মঞ্চ সমাবেশ করেছে মত্স্য ভবন সামনে
বেলা ৩ টায়। গণঅধিকার পরিষদ করেছে বিকাল ৩ টায় কালভার্ট রোড,১২ দলীয় জোট করেছে বিজয় নগর পানির ট্যাংকি সামনে বেলা ৩ টায়। জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট পুরানা পল্টন আলরাজী কমপ্লেক্স সামনে বেলা ১১ টায়। গণফোরাম সমাবেশ করেছে মতিঝিল নটরডেম কলেজ উল্টো দিকে গণফোরাম চত্বরে বেলা ৩টায়।গণ অধিকার পরিষদ (ড.রেজা) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিকাল ৪ টায়। এলডিপি সমাবেশ করেছে কাওরান বাজার এফডিসি সংলগ্ন এলডিপি অফিসের সামনে বেলা ৩ টায়।গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সকাল সাড়ে ১০ টায়। লেবার পার্টি করবে বিজয় নগর পানির ট্যাংকি সংলগ্ন বেলা ৩ টা ৩০ মিনিট। এনডিএম বেলা ৩ টায় সমাবেশ করেছে মালিবাগ মোড় হোসাফ টাওয়ারের সামনে। বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ সমাবেশ করেছে শাহবাগ মোড়ে বিকাল ৪ টায়। জাতীয়তা সমমনা পেশাজীবি জোট জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সকাল ১০ টায় সমাবেশ করেছে।