বাফুফেকে টাকা দেয় ফিফা। হিসাব নেয় ফিফা। ফিফার টাকা যেসব খাতে খরচ করার নিয়ম রয়েছে সেই হিসাবের বাইরে গেলে ফিফা সেটা মেনে নেয় না। হিসাবের সঠিক বর্ণনা দিতে হবে। হিসাব না মিললে পুনরায় হিসাব চায় ফিফা। ফিফার সভাপতি ইনফান্তিও দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি যেভাবে সদস্য দেশগুলোর অনুদান বাড়িয়েছেন তেমনি প্রশাসনিক বিষয়ে গভীর নজর দিয়েছেন। অনুদান খরচ করলে প্রণীত নিয়ম অনুযায়ী হিসাব দিতে হবে। বাংলাদেশের মতো অনেক দেশেই সব নিয়ম পালন করতে পারে না। কিন্তু ফিফা বাধ্য করে সেটা করার জন্য। সুযোগ দেয় এবং সময় দেয়। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনেরও একটা সময় এসব বিষয়ে অনেক সমস্যা ছিল কিন্তু ইনফান্তিনিও আসার পর পান থেকে চুন খসতে পারবে না। সেই ফাঁদেই পড়েছে বাফুফে। হিসাব মেলাতে না পারায় বাফুফের অর্থ কমিটির চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম মুর্শেদীও সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছিলেন ফিফা কীভাবে হিসাব চায়। তারা সেটা মেনে চলবেন। কিন্তু এতদিনেও সেটি হয়নি বলে শেষ পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগকে নিষিদ্ধ করল ফিফা। দুই বছর তিনি ফুটবলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারবেন না সেই সঙ্গে ১২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
৫২ পৃষ্ঠার কাগজে অনেকের নাম থাকলেও নেই বাফুফে সভাপতি কাজী সালাহউদ্দিনের নাম।
ফিফার ইনভেস্টিগেটরি চেম্বার ২০১৬ থেকে ২০১৯ সালের কেন্দ্রীয় পর্যালোচনা এবং নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান বিডিও কর্তৃক ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালের হিসাব খুব গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা হয়। আর তাতে দেখা যায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনিয়ম করেছে বাফুফে। ফিফার যে ফরোয়ার্ড নীতিমালা তা অনুসরণ করতে পারেনি বাফুফে। ফিফার দেওয়া টাকা যেভাবে খরচ করতে বলা হয়েছে তা করেননি সোহাগ। বারবার বলার পরও সেটা মানা হয়নি। টেন্ডার প্রক্রিয়া কীভাবে করতে হবে। কাউকে পেমেন্ট দিতে হলে কী করতে হবে। খরচের পক্ষে দালিলিক প্রমাণ দিতে হবে। যেমন নারী ফুটবলে ভ্রমণ ও বেতন বাবদ ১ লাখ ৭ হাজার ৬৩৪ ডলার খরচের পক্ষে কোনো কাগজপত্র দেয়নি বাফুফে। জাতীয় দলের বিদেশি কোচ ও টেকনিক্যাল ডিরেক্টরকে ৪৪ হাজার ১০০ ডলার বেতন দেওয়া হয় হাতে হাতে একই খরচ দেখানো হয়েছে ব্যাংক রেকর্ডে। বেতন ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে। দেখে মনে হতে পারে, এই বেতন দুই বার দেওয়া হয়েছে। ২০১৪ ও ২০১৫ সালের প্রশাসনিক খরচ বাবদ ৩৫ হাজার ৫৭৩ ডলার খরচের কথা ২০১৬ সালেও উল্লেখ করা হয়। এখানেও দুই বার পরিশোধের ব্যাপার থাকতে পারে। এখানে কাগজপত্র দেখায়নি। প্লেনের টিকিট কিনেছে কিন্তু কাগজপত্র দেওয়া হয়নি।
ফিফার অনুমতি না নিয়ে লিগ চালাতে গিয়ে ক্লাবগুলোকে ফিফার ফান্ড থেকে ১ লাখ ২৪ হাজার ৫৩৫ ডলার ভর্তুকি দিয়েছে বাফুফে। সেটা পুরোপুরি অনিয়ম। ফিফার নিয়ম আছে এক ফান্ডের টাকা অন্য ফান্ডে খরচ করা যাবে না। এর পক্ষে কাগজপত্র পায়নি ফিফা।
বছরের পর বছর এসব অনিয়ম হয়ে আসছে সেটা কি জানে না বাফুফে। এই প্রশ্নে সভাপতি কাজী সালাহউদ্দিন বললেন, ‘এসব হচ্ছে আর সবাই জানে। সবাই সবকিছু জানত। কেউ জানে না এটি ঠিক না।’ তাহলে আজ এত কথা উঠল কেন। টাকা-পায়সার হিসাব যারা রাখেন সেই অর্থ কমিটি নিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আমি অনেক বার ডেকে বলেছি সবকিছু ঠিকঠাক মেলাও। ফিফা যেভাবে বলে সেভাবে করো। সালামকেও বলেছি। সে আমাকে বলত চিন্তা করেন না বস। সালামের মতো মানুষ থাকতে আমি কেনই বা দুশ্চিন্তা করব। একাউন্টসকেও ডেকেও বলেছিলাম। কেউ যে জানত না সেটা ঠিক না।’ সালাহউদ্দিন বলেন, ‘সবই অলসতা। ফিফা খরচের পক্ষে জানতে চেয়েছে। বিমানের টিকিট কিনলে সেটার একটা রিসিপট থাকে। সেটা দিয়ে দিলেই হয়। সেটা নাকি দেওয়া হয়নি। এটা খামখেয়ালিপনা বা অলসতা ছাড়া আর কী।