কেন পশ্চিম তীরে সহিংসতা আয়ত্তের বাইরে যাচ্ছে


ইসরায়েলি অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চল পশ্চিম তীরে ক্রমবর্ধমান সহিংসতার সর্বশেষ শিকার হয়েছেন ২৫ বছরের এক আমেরিকান-ইসরায়েলি যুবক। জেরিকো শহরের কাছে একটি মহাসড়কে সোমবার সন্ধ্যায় ইলান গ্যানেলসের গাড়িতে হামলা হয়। গুলিতে জখম ঐ যুবক সেই রাতেই হাসপাতালে মারা যান। খবর বিবিসি।

তার আগের দিন অর্থাৎ রোববার রাতে নাবলুস শহরের কাছে হাওয়ারা নামে ফিলিস্তিনিদের একটি গ্রামে ইহুদিরা যে নৃশংস কায়দায় হামলা করে তা নজিরবিহীন।

প্রচারিত বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় কাছের একটি ইহুদি বসতি থেকে দলবদ্ধ হয়ে বিশাল সংখ্যক মানুষ হাওয়ারা গ্রামে ঢুকে বাড়িতে, দোকানে, গাড়িতে আগুন দিচ্ছে, পাথর ছুঁড়ছে। বিবিসির সংবাদদাতা টম বেটম্যান পরদিন ঐ গ্রামে গিয়ে দেখেন বাড়ির পর বাড়ি, দোকান-পাট আগুনে পুড়ে কালো হয়ে গেছে। সারি সারি গাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।



গ্রামবাসী ঐ সংবাদদাতার কাছে অভিযোগ করেন, ইসরায়েলিরা সৈন্যরা সে সময় কাছেই ছিল এবং হামলাকারীদের নিরস্ত করার বদলে তাদের সাহায্য করেছে।

ঐ হামলার কয়েক ঘন্টা আগে অর্থাৎ রোববার সকালে ফিলিস্তিনি বন্দুকধারীদের গুলিতে একটি ইসরায়েলি বসতির দুই বাসিন্দা নিহত হন। বলা হচ্ছে হাওয়ারা গ্রামে ঐ তাণ্ডব ছিল সেই হত্যার বদলা।

ইসরায়েলি এবং ফিলিস্তিনিদের মধ্যে এই হামলা-পাল্টা হামলা নতুন কিছু নয়। সহিংসতার এই চক্র গত ৫৬ বছর ধরে চলছে।

কিন্তু তারপরও গত এক বছর ধরে অধিকৃত পশ্চিম তীরে সহিংসতা এবং রক্তপাত যেভাবে দিনে দিনে বাড়ছে তাতে অনেক বিশ্লেষক বলতে শুরু করেছেন যে পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে যাচ্ছে।

ঘটছে কি?

বলা যেতে পারে ২০২২ সালের মার্চ থেকে পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করে।

সে সময় কয়েকদিনের ব্যবধানে ইসরায়েলের ওপর পরপর কতগুলো হামলা হওয়ার পর ইসরায়েলি সেনাবাহিনী পশ্চিম তীরের বিভিন্ন শহর-গ্রামে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করে।

গত বছরের মার্চ থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ইসরায়েলি সেনা অভিযানে পশ্চিম তীরে ১৪৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়। ২০০৪ সালের পর পশ্চিম তীরে এক বছরে এত ফিলিস্তিনি মারা যায়নি।



এ সময়ে ফিলিস্তিনিদের হামলায় ২৯ জন ইসরায়েলি মারা গেছে যে সংখ্যাও বিরল। .

এ বছরে এসে সহিংসতা কয়েকগুণে বেড়ে গেছে। প্রথম দুই মাসে মারা গেছে ৬০ জন ফিলিস্তিনি এবং ১৪ ইসরায়েলি।

গত দুই মাসে এমন কয়েকটি সহিংস ঘটনা এবং সেগুলোতে এত বেশি প্রাণহানি হয়েছে যার নজির সাম্প্রতিক সময়ে নেই।

গত বুধবার নাবলুসে ইসরায়েলি সেনা অভিযানে ১১ হন নিহত হয়। আহত হয় একশরও বেশি। ২০০৫ সালের পর পশ্চিম তীরে কোনে একটি সেনা অভিযানে এত লোক হতাহত হয়নি।

তার কিছুদিন আগে জেনিনে একটি ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি সেনা অভিযানে নিহত হয় ১০ জন।

তার আগের মাসে অর্থাৎ জানুয়ারিতে অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমের এক ইহুদি বসতির মধ্যে একটি সিনাগগের সামনে এক ফিলিস্তিনির গুলিতে মারা যায় সাতজন ইসরায়েলি।

বিবিসির সংবাদদাতা ইয়োলান্দে নেল বলছেন পরিস্থিতি ‘টিপিং পয়েন্টে’ পৌঁছে গেছে অর্থাৎ আয়ত্তের বাইরে চলে যাচ্ছে।

কেন বাড়ছে সহিংসতা?

প্রশ্ন হচ্ছে, অপেক্ষাকৃত শান্ত পশ্চিম তীর হঠাৎ কেন এত সহিংস হয়ে উঠলো?

ফিলিস্তিনিরা বলছে গত বছর-খানেক ধরে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সন্ত্রাস দমনের যুক্তিতে অপারেশন ব্রেক ওয়াটার নামে যে সাঁড়াশি সেনা অভিযান শুরু করেছে তাতে হিতে-বিপরীত হচ্ছে।

গত প্রায় এক বছর ধরে প্রতিদিনই ইসরায়েলি সৈন্যরা পশ্চিম তীরের কোথাও না কোথাও সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান চালাচ্ছে, এবং প্রতি সপ্তাহেই ফিলিস্তিনিরা মারা যাচ্ছে।

ইসরায়েল যুক্তি দিচ্ছে এই অভিযানের কোনও বিকল্প নেই, কারণ পশ্চিম তীরের কয়েকটি শহরে সশস্ত্র জঙ্গিরা সংহত হচ্ছে এবং ফিলিস্তিনি প্রশাসন তা আটকাতে ব্যর্থ হচ্ছে।



জেরুজালেমে সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক হারিন্দার মিশ্র বলছেন, সন্দেহ নেই ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের কর্তৃত্ব খুবই নড়বড়ে হয়ে পড়েছে।

সাম্প্রতিক কালের সমস্ত জনমত জরীপে দেখা গেছে সিংহভাগ ফিলিস্তিনি মনে করে ৮৭ বছরের  আব্বাস স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের পথ প্রশস্ত করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন, তিনি জোর করে ক্ষমতা ধরে আছেন এবং তার প্রশাসন দুর্নীতিগ্রস্থ।

“সাধারণ ফিলিস্তিনিরা চরম হতাশ। যখন তখন যে কোনও জায়গায় সৈন্যরা অভিযান চালাচ্ছে, কিন্তু মাহমুদ আব্বাসের প্রশাসন কিছুই করতে পারছে না। তারা মনে করে এই নেতৃত্ব, এই প্রশাসন থাকলে কি না থাকলেই বা কি!” বলেন মি, মিশ্র।

ফলে, সাধারণ ফিলিস্তিনিদের কাছে আব্বাস এবং তার নিরাপত্তা বাহিনীর বৈধতা অনেকটা ক্ষুণ্ণ হয়েছে।

“অনেক ফিলিস্তিনি মনে করে এই প্রশাসন, এই নিরাপত্তা বাহিনী ইসরায়েলের স্বার্থে কাজ করছে

ফিলিস্তিনি নিরাপত্তা বাহিনী এখন জেনিন বা নাবলুসের মত শহরে ভয়ে ঢোকেই না,” বলেন মি, মিশ্র।

সেই সুযোগ নিচ্ছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। তারা বলছে, নিরাপত্তার এই শুন্যতা তাদের পূরণ করতে হচ্ছে।

ইসরায়েলি রাজনীতি

ইসরায়েলে নতুন এক কট্টর ডানপন্থী সরকারের উত্থান এবং তাদের মনোভাব এবং তৎপরতা ফিলিস্তিনিদের আরও হতাশ করে তুলেছে।

পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি এবং ইসরায়েলিদের মধ্যে দীর্ঘ বিরোধের মূলে রয়েছে অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতির ক্রমাগত সম্প্রসারণ।

পশ্চিম তীরে ১৪০ টি ইহুদি বসতিতে প্রায় ৬ লাখ ইহুদির বসবাস। পাশাপাশি রয়েছে অনুমোদনহীন কট্টর ইহুদিদের তৈরি ছোট ছোট বসতি।

বিশ্বের সিংহভাগ দেশ এগুলোকে অবৈধ বসতি হিসাবে বিবেচনা করে, কিন্তু ইসরায়েলের বর্তমান সরকার গতমাসের মাঝামাঝি ৯টি অনুমোদনহীন ইহুদি বসতি বৈধ করার ঘোষণা দিয়েছে। সেই সাথে, বিভিন্ন বসতিতে নতুন দশ হাজার বাড়ি তৈরির এক প্রস্তাব অনুমোদন করেছে।

ফলে, ফিলিস্তিনিরা হতাশ, ক্ষুব্ধ এবং তাদের সাথে এসব বসতির ইহুদিদের মধ্যে সংঘাত বেড়েই চলেছে ।

ভবিষ্যৎ কী?

চলমান এই সহিংসতা আগামী দিনগুলোতে কোন দিকে গড়াবে?

বিবিসি নিউজ অনলাইনের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক সম্পাদক রাফি বার্গ মনে করেন, অদূর ভবিষ্যতে এই পরিস্থিতি ইতিবাচক কোনও মোড় নেবে সেই সম্ভাবনা খুবই কম।

কারণ, তিনি বলেন, পরিস্থিতি সামাল দিতে যে মাত্রার রাজনৈতিক প্রক্রিয়া প্রয়োজন তা অনুপস্থিত।

যুক্তরাষ্ট্রের চাপে রোববার জর্ডানের আকাবায় ফিলিস্তিনি এবং ইসরায়েলি নিরাপত্তা প্রধানরা অনেক দিন পর মুখোমুখি এক বৈঠকে বসেছিলেন। সেখানে তারা সহিংসতা কমানোর লক্ষ্যে কিছু অঙ্গিকার করেন।

ইসরায়েলিদের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় আগামী পাঁচ মাস তারা ইহুদি বসতিতে কোনও ধরণের নতুন স্থাপনা নির্মাণ স্থগিত রাখবে।

কিন্তু ইসরায়েলি প্রতিনিধিদল রোববার বৈঠক শেষে জর্ডান থেকে জেরুজালেমে ফিরতে না ফিরতেই সরকারের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ – যিনি নেতানিয়াহু সরকারে কট্টর ডানপন্থী জোটের নেতা – ঘোষণা দেন “একদিনের জন্যও বসতিতে নতুন নির্মাণ এবং উন্নয়ন কাজে বন্ধ থাকবে না।“

ফলে, পশ্চিম তীরে এই সহিংস পরিস্থিতির সহসা কোনও উপশমের আশা কেউই করছে না।

সামনে মাসে রোজা এবং ইহুদিদের প্রধান একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান পাসওভার একসাথে পড়েছে। ফলে এপ্রিলে পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে বলে আশংকা বাড়ছে।

 





Source link: https://www.ittefaq.com.bd/634022/%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%A8-%E0%A6%AA%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%9A%E0%A6%BF%E0%A6%AE-%E0%A6%A4%E0%A7%80%E0%A6%B0%E0%A7%87-%E0%A6%B8%E0%A6%B9%E0%A6%BF%E0%A6%82%E0%A6%B8%E0%A6%A4%E0%A6%BE-%E0%A6%86%E0%A7%9F%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%87%E0%A6%B0%E0%A7%87-%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%9A%E0%A7%8D%E0%A6%9B%E0%A7%87

Sponsors

spot_img

Latest

Learn a New Language and Save More Than 70%

Disclosure: Our goal is to feature products and services that we think you'll...

Gregor Townsend has named his Scotland team to face England

Scotland (vs England, Saturday)15. Stuart Hogg (Exeter Chiefs) 96 caps14. Kyle Steyn (Glasgow Warriors) 5 caps13. Huw Jones (Glasgow Warriors) 31 caps12....

Cavaliers executive Koby Altman arrested on impaired driving charge

Cleveland Cavaliers president of basketball operations Koby Altman was arrested Friday night. He was charged with operating a vehicle while impaired and committing...

Warriors given blueprint to keeping Chris Paul healthy

Chris Paul will be 38 when the new NBA season gets underway. Throughout his career, the veteran guard has dealt with a string...

Fantasy Basketball Pickups: Streaming in Memphis

The 2023-24 season has been one to forget for the Memphis Grizzlies. It began with Ja Morant's 25-game suspension and then a host...