গৃহকর্মীদের গড় মাসিক আয় ৫ হাজার ৩১১ টাকা এবং মাসিক গড় ব্যয় ১০ হাজার ৮০১ টাকা। অর্থাৎ প্রতি মাসে তাদের আয় ও ব্যয়ে ঘাটতি থাকে ৫ হাজার ৭৭০ টাকা। ৯৬ শতাংশ গৃহকর্মী মনে করেন, তাদের বর্তমান মজুরি মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট নয়। শতভাগ গৃহকর্মীই মৌখিক চুক্তির মাধ্যমে কাজ করেন। ২৬ শতাংশ গৃহকর্মী কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিতি বা বিলম্বের কারণে মজুরি কর্তনের শিকার হন। আবাসিক গৃহকর্মীরা দৈনিক ১০ থেকে ১৪ ঘণ্টা কাজ করেন। ৮৭ শতাংশ অনাবাসিক/খণ্ডকালীন গৃহকর্মী কোনো সাপ্তাহিক ছুটি পান না—এমন সব তথ্য প্রকাশ পায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিল্স পরিচালিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনে।
গতকাল রবিবার রাজধানীর প্রেসক্লাবে শোভন কাজ ও কর্মক্ষেত্রে জেন্ডার সহিংসতা বিষয়ে বাংলাদেশের গৃহশ্রমিকদের ওপর করা গবেষণা প্রকাশ করা হয়। গবেষণায় আরো প্রকাশ পায়, গৃহকর্মীদের ৯৯ শতাংশ পেশাগত কোনো দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ পাননি। মাত্র ৪ শতাংশ গৃহকর্মী কোনো না কোনো সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি-২০১৫ সম্পর্কে ৯৯শতাংশ গৃহকর্মীর এবং ৬৬ শতাংশ নিয়োগকর্তাদের কোনো জ্ঞান নেই। ৬৭ শতাংশ গৃহকর্মী মানসিক নির্যাতনের সম্মুখীন হয়েছেন। কোভিড-১৯ সংকটের সঙ্গে লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতার ঘটনাগুলো উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, ২ শতাংশ চাকরি হারিয়েছেন এবং ২ শতাংশ আয়ের উত্স হারিয়ে তাদের স্বামী/পরিবারের সদস্যদের দ্বারা নির্যাতনের সম্মুখীন হয়েছেন। গবেষণায় দেখা যায়, দারিদ্র্য, পেশার সহজলভ্যতা এবং বিবাহ বিচ্ছেদজনিত কারণসহ বিভিন্ন কারণে গৃহকর্মীর কাজ বেছে নেন নারীরা। কিন্তু সেই পেশায় এসে ৪২ শতাংশ আবাসিক গৃহকর্মী বসার ঘর কিংবা রান্নাঘরের মতো খোলা জায়গায় ঘুমান। ৭৫ শতাংশ অনাবাসিক/খণ্ডকালীন গৃহকর্মী বস্তিতে বাস করেন।
বিল্স-সুনীতি প্রকল্পের পক্ষে গবেষণাটি পরিচালনা করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ডিনেট। গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল নারী গৃহকর্মীদের শ্রম অধিকার ও জেন্ডার সহিংসতার বর্তমান পরিস্থিতি অন্বেষণের পাশাপাশি নারী গৃহকর্মীদের শোভন কাজ নিশ্চিতকরণের বিদ্যমান সুযোগ বা প্রতিবন্ধকতাগুলো চিহ্নিত করা।
বিল্স-এর যুগ্ম মহাসচিব ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সম্মানিত আলোচক ছিলেন, সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও বিশ্বব্যাংকের পরামর্শক এ বি এম খোরশেদ আলম, শ্রম অধিদপ্তরের পরিচালক বেল্লাল হোসেন শেখ, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের উপ-পরিচালক সুস্মিতা পাইক, আইএলও ওয়ার্ক ইন ফ্রিডম প্রোগ্রামের ন্যাশনাল প্রজেক্ট কোঅর্ডিনেটর এনি দ্রং, অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশ-এর সুনীতি প্রকল্পের সমন্বয়কারী তারেক আজিজ, ডিনেট-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক এম. শাহাদাৎ হোসেন, বিল্স উপদেষ্টা পরিষদ এর সদস্য নইমুল আহসান জুয়েল, বিল্স নির্বাহী পরিষদের সম্পাদক শাকিল আখতার চৌধুরী, বাংলাদেশ মুক্ত শ্রমিক ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ বাদল, গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্কের ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী আবুল হোসাইন প্রমুখ।