সভ্যতায় সব থেকে আলোচিত ফুল গোলাপ। কবিরা বার বার গোলাপের উপমায় ফিরে গিয়েছেন নারীর রূপ বর্ণনায়। ইংরেজ কবি, নাট্যকার উইলিয়াম শেক্সপিয়র বলেছেন, ‘গোলাপকে যে নামেই ডাকা হোক না কেন, সে তার সুগন্ধ বিতরণ করবেই’।
আজ ৭ ফেব্রুয়ারি গোলাপ দিবস। প্রেমের সপ্তাহের এক বিশেষ দিন। এ উপলক্ষে গোলাপ-বৃত্তান্ত আলোচনা করা খুব একটা মন্দ হবে না, প্রাচীন গ্রিস এবং রোমে গোলাপকে প্রেমের দেবী আফ্রোদিতে বা ভেনাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে ভাবা হত। গোলাপ আর প্রেমের সম্পর্ক বোধ হয় সেই সময় থেকেই কল্পিত হয়ে আসছে।
খ্রিস্টধর্মের উদ্ভবের কালে গোলাপকে জিশুর জননী মেরির সঙ্গে তুলনা করা হত। ‘রোজ’ থেকেই খ্রিস্টীয় জপমালা ‘রোজারি’-র উদ্ভব। ইসলামেও গোলাপ সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে বার বার উপস্থাপিত হয়েছে। বসরাই গোলাপের কথা ‘আরব্য রজনী’-র গল্পে অসংখ্য বার এসেছে। বিভিন্ন গজলেও বর্নীত হয়েছে গোলাপের সৌন্দর্য। এছাড়া গোলাপজল বা গোলাপ থেকে তৈরি আতরের বিষয়টি তো অনিবার্যভাবে ইসলামি সংস্কৃতিরই প্রকাশ।
আবার গোলাপ যে সর্বদাই এমন খোলামেলা প্রতীকে ফুটে উঠেছে তা নয়। কখনও পতাকায় গোলাপের ছবি লাগিয়ে ঘটে গিয়েছে যুদ্ধ। ফলে গোলাপকে কখনই হালকা ভাবে নেওয়া ঠিক হবে না বলে মনে করেন গবেষকরা।
আমেরিকান ঔপন্যাসিক ড্যান ব্রাউন তার সাড়া জাগানো উপন্যাস ‘দা ভিঞ্চি কোড’-এ ম্যাগডালেনকে জিশুর পত্নী হিসাবে দেখিয়েছেন। তা নিয়ে গোলযোগও কম হয়নি। বিশ্বের এক বড় অংশের মানুষ বিশ্বাস করেন যে, ম্যাগডালেনই পবিত্রতম নারী। তাকে এবং জিশু খ্রিস্টকে একত্রে বোঝাতে ‘রোজ অ্যান্ড ক্রস’-এর বিশেষ চিহ্ন ব্যবহৃত হয়।
অন্যদিকে গোলাপকে গুপ্ত জ্ঞানের প্রতীক হিসেবেও দেখেন পশ্চিমের গোপন ধর্মীয় উপাসক সম্প্রদায়ের একাংশ। পাপড়ির পরতের পর পরত পার হয়ে অন্তঃস্থলে পৌঁছুতে হয়, যে ভাবে একের পর এক পর্দা সরাতে সরাতে জ্ঞান উন্মোচিত হয়, সে ভাবেই তারা দেখতে চান গোলাপকে।
এছাড়া গোলাপকে অনেকেই লালসা ও যৌনতার প্রতীক হিসেবে দেখেন। লাল গোলাপের রং লালসাকে বর্ণনা করে আর গোলাপের গঠন হয়ে দাঁড়ায় যোনির প্রতীক। তবে ভাষাতাত্ত্বিকরা বলেন যে, যৌনপ্রতীক হিসেবে গোলাপের ব্যবহার মূলত ছিল মৌখিক ঐতিহ্যে। পরে তাকে সাহিত্যে বা চিত্রকলায় তুলে আনা হয়।
আপনি জানেন কি! মানচিত্রে বা কম্পাসে দিক নির্দেশ করতে যে বিশেষ প্রতীকের ব্যবহার করা হয়, তা দেখতে অনেকটা তারকাচিহ্নের মতো লাগলেও সেটির নাম ‘কম্পাস রোজ’। বিশেষজ্ঞদের মতে ভৌগোলিক আবিষ্কারের যুগে বেশির ভাগ নাবিক তথা অভিযাত্রীই ছিলেন রোজিক্রুশিয়ান বা তার সহায়ক গুপ্ত সমিতির সদস্য। তাই নাবিকী চিহ্নে গোলাপ স্থান পায়।