চট্টগ্রামে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা নেই কারো কাছে!


চট্টগ্রামে সরকারি কোনো সংস্থার কাছে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের কোনো তালিকা নেই। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সংস্থার উদ্যোগও  নেই। বিশেষজ্ঞরা দাবি করেছেন, নগরীতে হাজারো ঝুঁকিপূর্ণ ভবন রয়েছে। বিস্ফোরণ ও ভূমিকম্পে পুরোনো ও মেয়াদোত্তীর্ণ এসব স্থাপনার ব্যাপক জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। তারা বলছেন, নগরীতে ভবনের নকশা অনুমোদন শুধু সিডিএ দেওয়ায় এক্ষেত্রে নানা অনিয়ম হচ্ছে। নকশা অনুমোদনের ক্ষেত্রে সিডিএ, সিটি করপোরেশন, গণপূর্ত, ওয়াসা, পিডিবি, গ্যাস কোম্পানিসহ সেবা প্রদানকারী সংস্থার সমন্বিত কমিটি থাকা প্রয়োজন। এতে জবাবদিহি নিশ্চিত হবে।

বর্তমানে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে বিস্ফোরণ, ভবন ভেঙে পড়া, হেলে পড়ার ঘটনায় দুর্ঘটনা ঘটছে। সিডিএ জানিয়েছে নগরীতে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নিয়ে কোনো জরিপ হয়নি। কেউ কেউ ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নিয়ে অনুমাননির্ভর তথ্য দিচ্ছে। কারণ ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করার একটা প্রক্রিয়া আছে। কিন্তু অনুমাননির্ভর তথ্যের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। সিডিএর নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী ঈসা চৌধুরী আনসারী বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নির্ণয়ের কতগুলো টেকনিক্যাল বিষয় আছে। ইতিমধ্যে সিডিএর পক্ষ থেকে কোনো জরিপ হয়নি। তবে এ ব্যাপারে একটি প্রকল্প নিয়ে ভাবা হচ্ছে।’

বিশেষজ্ঞরা জানান, বর্তমানে চট্টগ্রাম মহানগরী এলাকায় সিডিএর বিল্ডিংয়ের নকশা অনুমোদন দিচ্ছে। কিন্তু বিল্ডিং নির্মাণের পর অন্যান্য সেবা সংস্থা থেকে পানি, বিদ্যুত্, গ্যাসের সংযোগ নিতে হয়। সিটি করপোরেশন স্থাপনার কর পরিমাপ করে। এতে দেখা যায়, সিডিএ থেকে একতরফা অনুমোদন নেওয়া পর পরবর্তী নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করছে। এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক নগর পরিকল্পনাবিদ রেজাউল করিম বলেন, ‘সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বিত কমিটি থাকা দরকার। সমন্বিত অনুমোদন থাকলে পরবর্তী সময়ে জবাবদিহিতা নিশ্চিত হতো।’

নগরীতে ১৫০ বছরের পুরোনো ভবনও রয়েছে। এসব ভবনের মানুষ বসবাসও করছে। রয়েছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। সিডিএ থেকে অনুমোদন নিয়ে নকশাবহির্ভূত স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। নকশাবহির্ভূত হাজারো স্থাপনা রয়েছে বলে বেসরকারি গবেষণায় উঠে এসেছে। নকশা অনুমোদন দেওয়ার পর পরবর্তী সময়ে নকশাবহির্ভূত স্থাপনা নির্মাণ হচ্ছে কি না সিডিএর পক্ষ থেকে তার কোনো তদারকি হচ্ছে না। এতে অবৈধভাবে স্থাপনা বর্ধিত হচ্ছে।

সিডিএ সূত্র জানায়, প্রতি বছর নগরীতে শত শত পাকা ভবন নির্মিত হচ্ছে। সিডিএ বছরে প্রায় ১ হাজার থেকে দেড় হাজার প্ল্যান অনুমোদন দিচ্ছে। কর্মকর্তারা জানান, কয়েক বছর আগে নগরীতে প্ল্যানবহির্ভূত প্রায় ৫ হাজার ভবন চিহ্নিত করা হয়েছিল। এসব ভবনের বর্ধিত অংশ ভেঙে ফেলতে সিডিএ থেকে ভবন মালিকদের নোটিশও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ভবন মালিকরা নোটিশের কোনো তোয়াক্কা করছেন না। গত ২০০৪ সালে সিডিএ নগরীতে ৭০-৮০টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করেছিলেন। পরে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙে ফেলতে তালিকা সিটি করপোরেশনকে দেওয়া হয়। এসবের  মধ্যে অধিকাংশ ভবন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও আবাসিক হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে। সিটি করপোরেশন ভাঙার উদ্যোগ নিলেও মামলা জটিলতায় অধিকাংশ ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেনি। পরবর্তী সময়ে বিষয়টি চাপা পড়ে যায়।

চুয়েটের সাবেক ভিসি ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘গত ২০০৯ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সরকারের দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানের গঠিত কমিটি ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রাম নগরীতে ঝুঁকিপূর্ণ বিল্ডিংয়ে জরিপ করা হয়েছিল। তখন কমিটি চট্টগ্রাম নগরীতে ১ লাখ ৮০ হাজার ভবন ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করেছিলেন। এসব বিল্ডিং নির্মাণের ক্ষেত্রে বিল্ডিং কোড মেনে নির্মাণ করা হয়নি। বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা আরো বেশি হবে।’ গণপূর্ত অধিদপ্তর চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী রাহুল গুহ ইত্তেফাককে বলেন, ‘ঝুঁকিপূণ ভবন চিহ্নিত করতে আলাদা কোনো কমিটি নেই। তবে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে একটি কমিটি আছে। কমিটি কোনো ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিত্যক্ত ভবন অপসারণ করতে হলে তদন্ত করে দেখেন।’

অগ্নিকাণ্ড ভবন ধসসহ কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে প্রথমে ফায়ার সার্ভিসকে উদ্ধারকাজ পরিচালনার জন্য ছুটে যেতে হচ্ছে। এ ব্যাপারে ফায়ার সার্ভিস আগ্রাবাদ কার্যালয়ের উপপরিচালক আবদুল হালিম বলেন, ‘বর্তমানে বিল্ডিংগুলো এমনভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে, প্রবেশের পথ থাকলেও বের হওয়ার কোনো আলাদা সিঁড়ি নেই। এতে দুর্ঘটনার সময় বসবাসকারীরা বের হতে পারে না। বিল্ডিংয়ের অনুমোদন দেন সিডিএ। তাদের এসব বিষয় দেখা উচিত। ’

 





Source link: https://www.ittefaq.com.bd/635380/%E0%A6%9A%E0%A6%9F%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A6%97%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A7%87-%E0%A6%9D%E0%A7%81%E0%A6%81%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%AA%E0%A7%82%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A3-%E0%A6%AD%E0%A6%AC%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%BE-%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%87-%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8B-%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%9B%E0%A7%87

Sponsors

spot_img

Latest

Novak Djokovic almost breaks his racket in half as he loses serve in final set of Wimbledon final

Novak Djokovic was handed a conduct violation warning after he smacked his tennis racket against the net post in the Wimbledon final. After...

Go From Freelancer to CEO

Marketing agencies are excellent cash-flowing businesses that don’t require any capital to start and can scale from comfortable lifestyle businesses to nine-figure companies.   To...

My Spring Wardrobe: 7 Sézane Pieces for Transitional Weather | Wit & Delight

As April transitions into May, it’s that tricky time of year when the weather can’t quite make up its mind. On most spring...

SpaceX Starship launch countdown – The Verge

The first time Anthony Gomez saw one of SpaceX’s Starship prototypes take flight, he watched it on a projector. He was far away...

How Tech Is Transforming Entry-Level, Customer-Facing Jobs

From sales and customer service, to retail and hospitality, employers in customer-facing functions are facing a challenging labor market. In fact, there are...