ঝুট কাপড়ের পোশাকের পর এবার দেশের বাজারে যাচ্ছে দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলায় তৈরি গরম কাপড়ের জ্যাকেট। আরামদায়ক ও রকমারি ডিজাইনের উন্নতমানের শীতের এ পোশাকটির কদর বেড়েছে উত্তরাঞ্চলসহ সারা দেশে। এখানকার ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের তথ্যানুযায়ী, উপজেলায় ছোট-বড় ৪৫টি ক্ষুদ্র গার্মেন্টসে উৎপাদিত জ্যাকেট থেকে বছরে ১০ কোটি টাকার বেশি আয় হচ্ছে। আর এসব জ্যাকেট চাহিদা মেটাচ্ছে দেশের সিলেট, মৌলভীবাজার, ঢাকা, বগুড়া, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়সহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলা শহরের। এতে একদিকে যেমন কারিগররা স্বনির্ভর হচ্ছেন, অন্য দিকে উপজেলা শহরেও তৈরি পোশাকশিল্পের অপার সম্ভাবনা জেগেছে।
জানা যায়, শীতের জ্যাকেট তৈরি হয় টাফেটা দিয়ে। এ ধরনের উপাদানের প্রধান কাজ হলো শরীরের মধ্যে ঠাণ্ডা বাতাস ঢুকতে না দেওয়া। এ ছাড়া শরীরের গরম ভাব ধরে রাখতে পারে টাফেটা। এ বছর তৈরি করেছে আলাদা ফ্যাশন আর স্টাইল। জ্যাকেটে নতুনত্ব আনতে নকশায় রাখা হয়েছে ফিউশন, যা দেশীয় ও পাশ্চাত্যের মিশেল।
সূত্র মতে, ২০০৮ সালে চিরিরবন্দর রোডে রাণীরবন্দরের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা আতিয়ার রহমান স্বল্প পরিসরে রফতানিমুখী মেসার্স মা গার্মেন্টস নামে একটি ক্ষুদ্র শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। শুরুতে মাত্র একটি মেশিন দিয়ে কাজ চালাতে থাকেন তিনি। পরে অর্জিত আয়ের অংশ জমিয়ে দু-একটি করে মেশিন বাড়াতে থাকেন। তাতে ইপিজেডের বঞ্চিত ও প্রশিক্ষিত শ্রমিকরা সোয়েটার তৈরিতে যুক্ত হন। এরপর স্থানীয় কলেজের শিক্ষার্থী, স্বামী পরিত্যক্তা, বিধবা ও গ্রামের বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয় সেখানে। বর্তমানে উৎপাদনের শর্তে আয় অনুসারে নিয়োগপ্রাপ্ত ২৫ জন পুরুষ শ্রমিক কাজ করছেন এ প্রতিষ্ঠানে।
ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা আতিয়ার রহমান জানান, প্রথমে মাত্র একটি মেশিন দিয়ে ক্ষুদ্রভাবে ক্ষুদ্র শিল্পের কাজ শুরু করি। পরে দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় ধরে অর্থ জমিয়ে বর্তমানে ২০টি মেশিন স্থাপন করেছি। আমার এখানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৩৫ জনের অধিক কর্মী জড়িত। শীতকালে বিভিন্ন ডিজাইনের জ্যাকেট, লেডিস কোর্ট আর গরমকালে শার্ট, প্যান্ট, পাঞ্জাবি এবং বাচ্চাদের পোশাক তৈরি করি। এসব পোশাক পাইকারি বিক্রয় করে যা আয় হচ্ছে, তা দিয়ে করোনাকালের ঘাটতি কাটানোর চেষ্টা করছি। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও স্বল্প সুদে ঋণ পেলে ক্ষুদ্র শিল্পকারখানার পরিধি বৃদ্ধি করা যেত। আরও বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব হতো। তিনি জানান, ব্যাংকগুলো ৩-৪ শতাংশ সুদে ঋণ দেয় বলে জানি। কিন্তু আমাদের মতো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ঐ স্থান পর্যন্ত পৌঁছাতে পারি না। ফলে আমরা সেসব ঋণের সুযোগ পাচ্ছি না।
রাণীরবন্দর রংপুর মহাসড়কের রোডে মেসার্স এডভান্স গার্মেন্টসের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা মো. আকতার হোসেন জানান, উপজেলায় ছোট-বড় ৪৫টিরও বেশি ক্ষুদ্র গার্মেন্টস রয়েছে। এখনো পুরোপুরি শীত না নামার কারণে ব্যবসা জমে উঠেনি। এখানে সমাজের পিছিয়ে পড়া, অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল পুরুষ-মহিলারা একটু কষ্ট করে কাজ শিখে বেকারত্ব দূর করে অর্থ উপার্জনে আত্মনির্ভরশীল হয়ে সম্পদে পরিণত হয়।
রাণীরবন্দর ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. রবিউল ইসলাম বলেন, শুধু রাণীরবন্দরে নয়, পুরো উপজেলায় ৪৫টির বেশি ক্ষুদ্র গার্মেন্টস শিল্প-প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব ক্ষুদ্র গার্মেন্টস অর্থনৈতিক উন্নয়নে এবং বেকারত্ব দূরীকরণে প্রধান সহায়ক হিসেবে কাজ করছে। এসব প্রতিষ্ঠানে যে মজুরি দেয়, তা সারা দেশের গার্মেন্টসের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই দেওয়া হচ্ছে। এসব কর্মঠ শ্রমিকের সুনিপুণ সেলাই করা পোশাক দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা এবং শহরগুলোতে যাচ্ছে। এতে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা এবং শ্রমিক-কর্মীদের স্বচ্ছলতা ফিরেছে। তবে করোনাকালে এসব ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে পড়ে। ফলে অনেক ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে তারা প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। এজন্য স্বল্প সুদে ঋণ প্রদানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করছি।