জন্মদানে সিজারিয়ানে নির্ভরতা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে


সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও সিজারিয়ান সেকশনের (সি-সেকশন) মাধ্যমে শিশু জন্মদানের হার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। এক যুগের মধ্যেই সি-সেকশন বেড়েছে ২৭ শতাংশ। ২০২২ সালে এর মাধ্যমে ৪৫ শতাংশ শিশুর জন্ম হয়েছে, যেগুলোর ৮৪ শতাংশই হয়েছে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে। ২০১১ সালে এ হার ছিল ১৮ শতাংশ, ২০১৪ সালে তা বেড়ে হয় ২৪ শতাংশ, ২০১৭-১৮ সালে ৩৪ শতাংশ এবং ২০২২ সালে ৪৫ শতাংশে পৌঁছেছে।

এদিকে, সবশেষ তথ্য অনুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সি সেকশনের হার ৩২.১ শতাংশ, কানাডায় ২৮.৮ শতাংশ, ইংল্যান্ডে ৩৪ শতাংশ। যার মধ্যে ১৫ শতাংশ মায়ের ইচ্ছাতেই সি সেকশন করা হয়। আর ১৯ শতাংশ জরুরি প্রয়োজনে করা হয়ে থাকে। আর ভারতে ২০১৯ সালে সি-সেকশনের হার ২১.৫ শতাংশ। দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের হার উন্নত বিশ্বের তুলনায় আশঙ্কাজনকভাবে বেশি।

এ প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, সি-সেকশনের মাধ্যমে শিশু জন্মদান অনেকের কাছেই ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। জরায়ুতে ভ্রূণের অবস্থানের জটিলতা, মায়ের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি বিবেচনায় সি-সেকশনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। কিন্তু এটা এখন সমাজে অনেকটাই বিলাসিতায় পরিণত হয়েছে। অনেকে আর্থিক চাপ থাকা সত্ত্বেও সি-সেকশনের পথে হাঁটছেন। আবার ক্লিনিকগুলোও তাদের ব্যবসার জন্য বিনা প্রয়োজনেই সি-সেকশন করতে পরামর্শ দিয়ে থাকেন বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়। আবার অনেক মা প্রসব বেদনায় এড়াতেও স্বেচ্ছায় বেছে নিচ্ছেন সি-সেকশনের পথ। যার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জরিপের তথ্যে। সেখানে সরকারি হাসপাতালে সি-সেকশনের হার মাত্র ১৬ শতাংশ। এতে বোঝা যায়, দরিদ্র মানুষের মধ্যে সি-সেকশন করার প্রবণতা কম। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে তা খুব বেশি।

এদিকেবিশ্ব জুড়েই সন্তান জন্মদানে সি-সেকশন হার ক্রমশ বাড়ছে। তবে তৃতীয় বিশ্বে এ হার উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে। ১৯৯০ সাল থেকে বর্তমান বৈশ্বিক এবং আঞ্চলিক সিজারিয়ান হারের প্রবণতা এবং ২০৩০ সাল নাগাদ এর সংখ্যার অনুমান নিয়ে কাজ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিন-এনআইএইচ। তাদের গবেষণা বলছে, ২০৩০ সালের মধ্যে, বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর ২৮.৫ শতাংশ নারী সিজার সেকশনের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দেবেন। পূর্ব এশিয়ায় বছরে সন্তান জন্মদানে সিজার সেকশনের হার দাঁড়াবে ৬৩.৪ শতাংশ পর্যন্ত। গবেষণা প্রতিষ্ঠান এনআইএইচ-জাতীয়, আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক স্তরে সিজারিয়ান হারের খণ্ড খণ্ড তথ্য বিশ্লেষণ করে বৈশ্বিক প্রবণতা নির্ধারণ করেছে।

গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি এ-ও জানাচ্ছে, বিশ্ব জুড়েই সিজারিয়ানের ব্যবহার ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বর্তমান দশকেও এর  বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। যেখানে অপ্রয়োজনীয় এবং অতিরিক্ত ব্যবহার আশঙ্কাজনকভাবেই বাড়ছে। স্বাভাবিক জন্মদানের প্রবণতা ফিরিয়ে আনতে বিশ্বব্যাপী কার্যকর ব্যবস্থার অপ্রতুলতাকে দায়ী করছে তারা। সেইসঙ্গে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি জানাচ্ছে, সিজার পরবর্তী অনিরাপদ স্বাস্থ্যব্যবস্থা নারী মৃত্যুর হার বৃদ্ধি করবে। যা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনকে বাধাগ্রস্ত করবে।

গবেষণায় ১৫৪টি দেশ থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে বলা হয়েছে, ২০১০ সাল থেকে ২০১৮ সালে বিশ্বব্যাপী ২১.১ শতাংশ মহিলা সিজারিয়ান দ্বারা সন্তান জন্ম দিয়েছেন। এর মধ্যে বছরে সাব-সাহারান আফ্রিকায় ৫ শতাংশ হারে সিজার করার হার বৃদ্ধি পেয়েছে। আর লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে বৃদ্ধির হার ৪২.৮ শতাংশ। ১৯৯০ সাল থেকে সমস্ত ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে সিজারিয়ান বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধির হার পূর্ব এশিয়ায় ৪৪.৯ শতাংশ, পশ্চিম এশিয়ায় ৩৪.৭ এবং উত্তর আফ্রিকায় ৩১.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ১০-১৫ শতাংশের বেশি প্রসূতি মায়ের সিজারিয়ান সেকশনের প্রয়োজন হতে পারে না। সিজারিয়ানর সেকশনের হার ১৫ শতাংশের বেশি হলেও প্রসবজনিত মৃত্যুর হার কমছে না।

২০২২ সালের বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপে জানানো হয়, পাঁচ বছরের ব্যবধানে সি-সেকশনের মাধ্যমে শিশু জন্মহার ২০১৭ সালের ৩৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২২ সালে ৪৫ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছে। এরমধ্যে ১৬ লাখ ৯ হাজার ১৫৬টি শিশুর জন্ম হয়েছে সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে। যারমধ্যে ১৩ লাখ ৫৩ হাজার ৯৪২টি শিশুর জন্ম হয়েছে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে। আর ২ লাখ ৩৩ হাজার ৩০টি শিশু সরকারি হাসপাতালে এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পরিচালিত স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে ২২ হাজার ১৩৬টি শিশু সি-সেকশনের মাধ্যমে জন্ম নিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনো ধরনের নিয়মনীতি না থাকায় সি-সেকশন অস্ত্রোপচার বাড়ছে। এতে নারীদের দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. জাহিদ মালেক বলেন, বস্তি এলাকার বাইরে সি-সেকশন ৭৭ শতাংশ, যা খুবই বেশি। এটা হয়েছে বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকের জন্য। কারণ সেখানে আর্থিক বিষয় রয়েছে। সরকারি হাসপাতালে সি-সেকশনের হার খুবই কম। ১৮ শতাংশের নিচে।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পুরোনো ৯৬টি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের মধ্যে ৭০টি কেন্দ্রে জরুরি প্রসূতিসেবা প্রদান করা হচ্ছে। নবনির্মিত ১৫৯টি মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্রে নিরাপদ প্রসব সেবাসহ অন্যান্য সেবাদান কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। আর ৫৯টি জেলা হাসপাতাল এবং ১৩২টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি প্রসূতিসেবা নিশ্চিত করা হয়েছে। এই ৫৯টি জেলা হাসপাতালে এরই মধ্যে ১৪টি জেলার ২০টি উপজেলায় ৩৪টি হাসপাতালকে নারীবান্ধব করা হচ্ছে। তবে, এসব কিছুই চাহিদার তুলনায় অনেকই কম।





Source link: https://www.ittefaq.com.bd/649527/%E0%A6%9C%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%AE%E0%A6%A6%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%87-%E0%A6%B8%E0%A6%BF%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%87-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AD%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A6%BE-%E0%A6%89%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%97%E0%A6%9C%E0%A6%A8%E0%A6%95-%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%87-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A7%9C%E0%A6%9B%E0%A7%87

Sponsors

spot_img

Latest

Fetch.ai (FET) and Litecoin (LTC) Prices Impress with Strong Performance, Orbeon Protocol (ORBN) Predicted Positive Growth due to Presale Conclusion

In recent weeks, some well-established cryptocurrencies — Fetch.ai (FET) and Litecoin (LTC) — have been making headlines with their impressive performance. Elsewhere, there...

Failed Startups Raised $27 Billion in Funding This Year: Report

This article originally appeared on Business Insider. Startups are having a pretty grim year.Just over $27 billion...

Best Dollar Flight Club deal: 66% off lifetime subscriptions

TL;DR: A Dollar Flight Club Premium Plus+ lifetime subscription (two-pack) is on sale for £117.82, saving you 94% on list price.Don't just sit...

Jake Knapp en Bay Hill: 12 golpes en un par 5

Golf can be tough. What one week gives you, it can easily take away the next. A volatility that Jake Knapp knows all...