জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) এক ছাত্রীকে উত্ত্যক্তের জেরে দুই হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় হলের মোট ২০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
শুক্রবার (১৪ জুলাই) দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শহীদ রফিক-জব্বার হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের রবি, শাফায়াত, নিরব এবং শহীদ রফিক-জব্বার হলের সাকিব, ইশতিয়াক, নিশাত ও জাহিদ। তবে বাকিদের পরিচয় জানা যায়নি। তাদের মধ্যে ৬ থেকে ৭ জনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদেরকে সাভারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
জানা যায়, গত বুধবার (১২ জুলাই) ইতিহাস বিভাগের ৫১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক ছাত্র কাজী মহিউদ্দীন মিরাজ ও তার বান্ধবি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় ইংরেজি বিভাগের ৫১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং শহীদ রফিক-জব্বার হলের আবাসিক ছাত্র মো. রাফি ও তার সঙ্গে থাকা কয়েকজন শিক্ষার্থী মিরাজের বান্ধবিকে উত্ত্যক্ত করেন।
এ ঘটনার জেরে শুক্রবার (১৪ জুলাই) রাত সাড়ে ১০টায় মিরাজ তার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের বন্ধুদের নিয়ে রাফিকে দুই হলের মধ্যবর্তী রবীন্দ্র চত্বরে ডাকেন। এ সময় রাফিকে তার সঙ্গে থাকা বন্ধুদেরও ডাকতে বলে মিরাজ। পরে রাফি তার হলের বন্ধুদের ডাকেন। রাফির বন্ধুরা এলে উভয়পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে দুই হলের সিনিয়র শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মিমাংসা করে দেন। পরে রাত আড়াইটার দিকে দুই হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ফের উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।
এরপর রাত সাড়ে তিনটার দিকে দুই হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রায় এক ঘণ্টা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এ সময় কয়েকটি পটকা ফোটানো হয়। এক ঘণ্টা ধরে চলা এ সংঘর্ষের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির কেউ ঘটনাস্থলে আসেনি বলে জানা যায়।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে শনিবার (১৫ জুলাই) ভোর পৌনে ৫টার দিকে উভয় হলের দায়িত্বরত শিক্ষক, প্রক্টরিয়াল বডি ও নিরাপত্তা শাখার কয়েকজন সদস্য ঘটনাস্থলে আসেন। এ সময় উভয় হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের উপ-প্রধান মেডিক্যাল কর্মকর্তা আবু জাফর মো. সালেহ বলেন, ‘দুই হলের সংঘর্ষ চলাকালীন সময়ে কয়েক দফায় অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়ে চিকিৎসা কেন্দ্রে এসেছিলেন। তাদের মধ্যে ৬ থেকে ৭ জনের অবস্থা গুরুতর। এর মধ্যে কয়েকজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সাভারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
ঘটনার সূত্রপাতের বিষয়ে কাজী মহিউদ্দিন মিরাজ বলেন, ‘গত বুধবার রাতে রফিক-জব্বার হলের কয়েক শিক্ষার্থী তার বান্ধবীকে উত্ত্যক্ত করেন। গতকাল রাতে তাদের মধ্যে রাফি নামের একজনকে হলের বন্ধুদের সঙ্গে রবীন্দ্র চত্বরে দেখতে পান। এ সময় উত্ত্যক্তের ঘটনার কথা জানতে চাইলে রফিক-জব্বার হলের কয়েকজনের সঙ্গে তার হলের (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল) কয়েকজনের হাতাহাতি হয়। পরে দুই হলের সিনিয়ররা এসে বিষয়টি সমাধান করে দেন। কিন্তু হঠাৎ রাত সাড়ে তিনটার দিকে রফিক-জব্বার হলের শিক্ষার্থীরা হামলা চালান।’
এ বিষয়ে জানতে আজ শনিবার সকালে রাফির মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নাজমুল হাদান তালুকদার বলেন, ‘ঘটনাটি খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। ব্যক্তিকেন্দ্রিক ঘটনা টেনে হলে নিয়ে এসে এত-বড় করা হয়েছে। তাই যারা ছাত্রসুলভ আচরণ করছে না তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিচার হওয়া উচিত।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর রনি হোসাইন বলেন, ‘দুই হলের প্রাধ্যক্ষদের ফোন পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে আসি। তখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। তবে এ ঘটনায় আমরা একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন দেব। এছাড়া এ ঘটনার অভিযোগ পাওয়া সাপেক্ষে অধিকতর তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’