আওয়ামী লীগ নেতা ও বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শেখ মিজানুর রহমানে থাপ্পর দিয়ে আলোচনায় আসা ইউএনও মনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছেন উপজেলার ব্যবসায়ী, আওয়ামী লীগ নেতাসহ সাধারণ মানুষ।
তাদের অভিযোগ, অকারণে হয়রানি ও চড়-থাপ্পর দেওয়া ইউএনও মনোয়ার হোসেনের কাছে নতুন কোনো ঘটনা নয়। এর আগেও উপজেলার একাধিক ব্যবসায়ীকে হয়রানিসহ আইন-শৃংখলা রক্ষার নামে সাধারণ মানুষদের চড়-থাপ্পর দেওয়া মনোয়ার হোসেনের কাছে নিত্যদিনের ব্যাপার।
উপজেলার নওয়াপাড়া মোড় এলাকার বাসিন্দা মো. সাখাওয়াত হোসেন সাগর বলেন, ব্যবসার কারণে আমি দীর্ঘদিন ধরে ঢাকাতে বসবাস করি। সম্প্রতি আমি ফকিরহাটে আমার পৈত্রিক বাড়িতে ভবনের কাজ করাতে ফকিরহাট আসি। এর মধ্যে গত ২ জানুয়ারি বাড়ির কাজের জন্য সরঞ্জাম মহাসড়কের পাশে কিছুক্ষনের জন্য রাখা হয়। এর মধ্যে ইউএনও স্যার ওই পথ দিয়ে গাড়িতে করে যাওয়ার পথে আমার বাড়ির সামনে দাঁড়ায় এবং ইট কেন রাখা হয়েছে সে বিষয়ে কেয়ারটেকারের কাছে জিজ্ঞাসা করেন। স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে আমি ছুটে আসলে ইউএনও স্যার আমাকে তার গাড়ীতে উঠতে বলেন এবং গালমন্দ করতে থাকেন। আমি প্রতিবাদ করলে মহাসড়কের পাশে পাঁচ মিনিটের জন্য ইট রাখার অপরাধে আমাকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
কেয়ারটেকার খায়রুল ইসলাম বলেন, আমি গরিব মানুষ বাবা। আমার বয়স হয়েছে, রাস্তার পাশে পাঁচ মিনিটের জন্য ইট রাখার অপরাধে সবার সামনে ইউএনও স্যার আমাকে চড় মারলেন।
ফকিরহাটের কাটাখালি মোড় এলাকার (ভাই ভাই প্লাস্টিক কারখানা) স্বত্বাধিকারি মো. বদিউজ্জামান বিশ্বাস বলেন, কাটাখালি মোড়ে আমার একটি প্লাস্টিক কারখানা রয়েছে। আমি পরিবেশের ছাড়পত্রসহ সরকারি সকল দপ্তরের অনুমতিক্রমে কারাখানা পরিচালনা করি। কিন্তু প্রায় দুমাস আগে আমার অনুপস্থিতে ইউএনও স্যার আমার কারখানার এসে কারখানার সামনে বাগেরহাট ও মাওয়া মহাসড়কের পাশে কারখানার কিছু মালামাল রাখার অপরাধে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
এছাড়া ২০ হাজার টাকা ঘুষ দেওয়ার পর বেশকিছুদিন আমাকে কোন প্রকার হয়রানি করা হয়নি। কিন্তু গত এক সপ্তাহ আগে ইউএনও স্যার আবারও আমার কারখানায় আসেন এবং মহাসড়কের পাশে কারখানার মালামাল রাখার অভিযোগ তুলে আবারও আমাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। আমি ঘুষও দিলাম আবার জরিমানাও দিলাম, এখন শুধু ইউএনও স্যারের নামে কারখানা লেখে দেওয়া বাকি আছে।
ফকিরহাট উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক নির্মল দাস বলেন, উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শেখ মিজানুর রহমানকে থাপ্পর দেওয়ার ঘটনায় আমরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সকল নেতাকর্মীরা নিন্দা জানিয়েছি। এছাড়া ইউএনও বিরুদ্ধে এখন নানা অভিযোগ উঠছে, যেগুলো তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
এব্যাপারে কথা বলতে ফকিরহাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি স্বপন দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি একটা জরুরি মিটিংয়ে আছি, এ বিষয়ে পরে কথা হবে।
এদিকে অভিযুক্ত ফকিরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মনোয়ার হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, ভুলবোঝাবুঝি হয়েছে মাত্র। যোটা মীমাংসার জন্য উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিরুদ্ধে সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা মিজানুর রহমানকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। বুধবার (১ মার্চ) দুপুরে ফকিরহাটের বিশ্বরোডের মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।