আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন একটি জোট গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকারপন্থি ও স্বাধীনতার সপক্ষের ১০-১২টি ইসলামি দল। নতুন এই জোটের প্রাথমিক নাম ঠিক করা হয়েছে ‘প্রগতিশীল ইসলামি জোট’। ‘জামায়াত, জঙ্গিবাদ ও উগ্রপন্থীদের রুখতে এবং সরকারের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে’ সমমনাদের ঐক্যবদ্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছেন দলগুলোর শীর্ষ নেতারা। তবে নতুন এই জোট গঠনের নেপথ্যের মূল লক্ষ্য হচ্ছে বিদ্যমান সংবিধানেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া।
গত বুধবার গণভবনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, ১৪ দল একটি আদর্শিক জোট, সেখানে আর কোনো দলকে যুক্ত করা হবে না। তবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিগুলোকে নিয়ে নতুন আরেকটি জোট গঠন করা হবে। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর এ কথা গণমাধ্যমে প্রকাশের পর নতুন জোট গঠনে তৎপরতা বাড়িয়েছে সরকারঘেঁষা ইসলামি দলগুলো। যদিও নতুন এই জোট গঠনের প্রাথমিক তৎপরতা শুরু হয় এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে। তখন থেকেই জোটের উদ্যোক্তারা নিজেদের মধ্যে এবং সম্ভাব্য শরিকদের সঙ্গে কয়েক বার বৈঠক করেছেন।
জোট গঠনে তৎপর দলগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নতুন এই জোট গঠনে মূল লিয়াজোঁকারীর ভূমিকা পালন করছেন ইসলামিক গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য এম এ আউয়াল। এই জোট গঠনে তৎপর হয়েছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধনের জন্য সম্প্রতি মনোনীত বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টিও (বিএসপি)। রয়েছে মিছবাহুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশ। সৈয়দ মুহাম্মদ বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেদীর নেতৃত্বাধীন ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, মাহবুবুর রহমান চৌধুরীর বাংলাদেশ জনদল, মাওলানা হারিসুল হকের নেজামে ইসলাম বাংলাদেশ, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন খানের দেশপ্রেমিক জনতা দল, ব্যারিস্টার এম হায়দার আলীর পিপলস জাস্টিস পার্টিও থাকতে পারে নতুন এই জোটে।
ইসলামী দলগুলোর বাইরেও এরশাদ সরকারের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী নাজিম উদ্দিন আল আজাদের বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিএলডিপি), বিএনপির সাবেক নেতা প্রয়াত ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার প্রতিষ্ঠিত তৃণমূল বিএনপিকেও দেখা যেতে পারে এই জোটের শরিকের তালিকায়। এছাড়া বিএনপির সাবেক ও বর্তমান একাধিক মিত্রদলের সঙ্গেও যোগাযোগ করছেন নতুন এই জোটের উদ্যোক্তারা।
জোট গঠনের উদ্যোগের বিষয়ে ইসলামিক গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য এম এ আউয়াল ইত্তেফাককে বলেন, ‘নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশে যেন হানাহানি না হয়, দেশ যেন পিছিয়ে না যায়, দেশের মানুষ আগামীতে যেন আরও ভালো থাকতে পারেন এবং উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা যেন চলমান থাকতে পারে; সেই লক্ষ্যেই আমাদের এই জোট গঠনের প্রয়াস। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ইসলামি দলগুলোকে আমরা একমঞ্চে আনতে চাই, এটা এখন সময়ের দাবি।’
তিনি বলেন, আমাদের আগের যে ‘ইসলামিক ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (আইডিএ)’ রয়েছে মূলত সেটাকেই পুনর্গঠনের পাশাপাশি আরও সম্প্রসারিত করতে যাচ্ছি। দ্রুতই একটি ঘোষণাপত্র তৈরি করা হবে। শুধু নির্বাচন নয়, সাধারণ মানুষের সমস্যাগুলোর সমাধানেও নতুন জোট সোচ্চার হবে। মানুষের কল্যাণের স্বার্থে আমরা রাজপথেও থাকব, নির্বাচনেও অংশ নেব।
এদিকে, নতুন এই জোট গঠনে তৎপর হয়ে শনিবার প্রথম বারের মতো রাজধানীতে কর্মসূচি পালন করেছে ইসির নিবন্ধনের জন্য মনোনীত বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি)। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে সমাবেশ করে সেখান থেকে বর্তমান সংবিধানের আলোকে নির্বাচনের দাবিতে আগামী ২১ অক্টোবর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
ঐ সমাবেশে বিএসপির চেয়ারম্যান শাহজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভাণ্ডারী বলেছেন, ‘যারা আমাদের এজেন্ট ব্যাকড পার্টি বলে সম্বোধন করছেন, তারা আমাদের এখনো চেনেননি। দেশের প্রধান দলগুলো আমাদের চেনে। আমাদের অবস্থান জানে। যারা এখনো বুঝতে পারেননি, তাদের আগামী ২১ অক্টোবর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের মাধ্যমে সুপ্রিম পার্টির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বুঝিয়ে দেব।’
শনিবারের সমাবেশ থেকে আগামী ২৮ জুলাই চট্টগ্রামে বিক্ষোভ সমাবেশ, ১ আগস্ট মুন্সীগঞ্জে, ৭ আগস্ট গাজীপুরে, ৮ আগস্ট কুমিল্লায় এবং এভাবে প্রতিটি জেলা-উপজেলায় সমাবেশ করা হবে বলেও ঘোষণা দেন সাইফুদ্দীন মাইজভাণ্ডারী। বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা দেশের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং রাজনীতিবিদদের জন্য অবমাননাকর। আমরা বর্তমান সংবিধানের আলোকে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হোক, এটাই চাই।
বিএসপির এই সমাবেশে অংশ নিয়ে ইসলামিক গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান এম এ আউয়াল বলেন, দেশের মানুষ শান্তি চায়। দেশ-জাতির স্বার্থে রাজনৈতিক-গণতান্ত্রিক-সাংবিধানিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা জরুরি। সমাবেশে ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরী বলেছেন, ‘আমরা নতুন জোট করব। এই জোট নির্বাচনেও যাবে। নির্বাচন হবে সংবিধানের আলোকে।’
প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগের সঙ্গে সখ্য থাকা ১৫টি দল নিয়ে ‘ইসলামিক ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সের (আইডিএ)’ আত্মপ্রকাশ হয়েছিল ২০১৭ সালে। এর কো-চেয়ারম্যান ছিলেন তরিকত ফেডারেশনের সাবেক মহাসচিব এম এ আউয়াল। ঐ জোটেরই সাতটি দল নিয়ে এম এ আউয়াল গঠন করেন ‘ইসলামিক গণতান্ত্রিক পার্টি’। এবার নতুন জোট সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আগের মতো সংখ্যায় বেশি দেখিয়ে ঢাউস কোনো জোট নয়, কার্যকর জোট গঠন করা হবে।’