ওয়াসার পানি শোধনাগার নির্মাণের আগে বিপুল টাকা খরচ করে বিদেশি কনসালট্যান্ট নিয়োগ দেওয়া হয়। তাদের ডিজাইনের ওপর ভিত্তি করে নির্মাণ করা হয় পানি শোধনাগার। চট্টগ্রাম ওয়াসার বর্তমানে চারটি পানি শোধনাগার চালু রয়েছে। হালদা ও কর্ণফুলী নদী থেকে পানি নিয়ে এসব প্রকল্পে শোধন করা হয়। কিন্তু নদীতে লবণাক্ততা বেড়ে গেলে লবণ আলাদা করার কোনো পরামর্শ ডিজাইনে উল্লেখ করা হয়নি। এতে প্রকল্প নির্মাণে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ায় লবণাক্ততা নিয়ে মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
অতীতে সীমিত সময়ে নদীর পানিতে লবণাক্ততা দেখা দিলেও এবার দীর্ঘ সময় ভুগতে হচ্ছে। কাপ্তাই লেক থেকে পানি না ছাড়া ও বৃষ্টি না হওয়ায় এবার লবণাক্ততার সমস্যা দীর্ঘ হচ্ছে। ওয়াসার চারটি পানি শোধনাগার চালু রয়েছে। এদের মধ্যে মদুনাঘাট শেখ রাসেল পানি শোধনাগার, মোহরা পানি শোধনাগারের জন্য হালদা থেকে আর রাঙ্গুনিয়ায় নির্মিত শেখ হাসিনা পানি শোধনাগারের দুটি ইউনিটের জন্য কর্ণফুলী নদীর উজান থেকে পানি সংগ্রহ করা হয়।
জানতে চাইলে ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (উৎপাদন) নুরুল আমিন বলেন, প্রকল্পের ডিজাইনে লবণাক্ততা আলাদাকরণ নিয়ে কোনো কিছু উল্লেখ নেই। এটি মাত্র দুই-তিন মাসের সমস্যা। আর লবণাক্ততা আলাদাকরণের প্রকল্প অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এখন ওয়াসার সররাহ করা পানিতে লিটারে প্রায় ৪০০ মিলিগ্রাম লবণ থাকে। লবণের মাত্রা আগের চেয়ে কম রয়েছে। আর হালদা নদীর পানিতে লিটারে এখন ২ হাজার ৯০০ মিলিগ্রাম লবণাক্ততা পাওয়া যাচ্ছে।’
পানিতে লবণাক্ততা নিয়ে ওয়াসার বোর্ড সভায় আলোচনা হয়েছে। এতে সভায় ওয়াসা কর্তৃপক্ষকে দ্রুত সময়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে। ওয়াসা পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. জাহাঙ্গীর আলম ইত্তেফাককে বলেন, লবণাক্ততার মাত্রাটা ভবিষ্যতে আরো বাড়বে। আমি লবণাক্ততা দূরীকরণের জন্য শোধনাগারে যেখান থেকে পানি সরবরাহ দেওয়া হয় সেখানে ‘রিভার্স অসমোসিস সিস্টেম’ বসানোর পরামর্শ দিয়েছি। তখন গ্রাহক পর্যায়ে সরবরাহ করা পানিতে লবণের মাত্রা থাকবে না। চায়না ও জার্মানির মেশিন রয়েছে। খরচও বেশি হবে। ওয়াসা কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ নিচ্ছেন বলে জানিয়েছে।’
ওয়াসার এক কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে ওয়াসার পানির উত্পাদন খরচ হচ্ছে প্রতি হাজার লিটারে ৩০ টাকা। ভর্তুকি দিয়ে তা ১৮ টাকা দরে গ্রাহক পর্যায়ে সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে। আর রিভার্স অসমোসিস সিস্টেম বসিয়ে পানি সরবরাহ দিলে লিটারে প্রতি হাজার লিটারের খরচ ১০০ টাকা খরচ পড়বে।
পানি উত্পাদন কমে যাওয়া ও সরবরাহ করা পানিতে লবণাক্ততার কারণে নগরীতে সুপেয় পানি নিয়ে হাহাকার চলছে। বিশেষ করে নগরীর উঁচু এলাকায় পানির চরম সংকট বিরাজ করছে। রেশনিং করে এলাকাভেদে পানি সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে। খাওয়ার পানি নিয়ে মানুষ মিনারেল ওয়াটারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এই সুযোগে নগরীতে ভ্যান গাড়িতে করে নলকূপের পানি দেদার বিক্রি হচ্ছে। এসব পানি বাসাবাড়ি ও হোটেল রেস্টুরেন্টে সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে।
নগরীর কাট্টলী ও সীতাকুণ্ড এলাকায় এমনিতে সুপেয় পানির সংকট বিরাজ করছে। এসব এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় নলকূপে পানি মিলছে না। হাজারো নলকূপ অচল হয়ে পড়েছে। এই এলাকায় রয়েছে বক্ষব্যাধি হাসপাতাল ও বিআইটিআইডি হাসপাতাল। নিজস্ব কোনো পানির উৎস নেই। ওয়াসার পানির ওপর নির্ভরশীল এই দুটি হাসপাতাল। সুপেয় পানির সংকটের কারণে হাসপাতালের রোগীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। পানি কিনে ব্যবহার করতে হচ্ছে। বিআইটিআইডি হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মামুনুর রশিদ বলেন, নিয়মিত ওয়াসার পানি পাচ্ছি না। সপ্তাহে দু-এক দিন পাওয়া যায়। প্রতিদিন চিকিত্সা নিতে অসংখ্য রোগী আসছে। এতে পানি নিয়ে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।’
ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, নগরবাসী বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে ওয়াসার লবণাক্ত পানি নিয়ে ভোগান্তিতে আছেন। পানি পরিশোধন করলেও লবণ যাচ্ছে না।