নারায়ণগঞ্জ শহরে ফুটপাতের পাশাপাশি সড়কের একটা অংশও দীর্ঘদিন ধরে হকারদের দখলে রয়েছে। এতে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন নগরীর লাখ লাখ মানুষ। মাঝেমধ্যে পুলিশ অভিযান চালালেও দৃশ্যপট খুব একটা পালটায় না। স্থানীয়রা জানান, চাষাঢ়া থেকে শুরু করে নিতাইগঞ্জ, ২ নম্বর রেলগেট ও কালীরবাজার হয়ে খানপুর এ পথটুকু পাড়ি দিলেই নারায়ণগঞ্জ শহর প্রদক্ষিণ করা হয়ে যায়। এতে রিকশায় সময় লাগে সর্বোচ্চ ৩০ মিনিট। কিন্তু হকাররা ফুটপাত আর সড়ক দখল করে দোকান বসানোয় দুই ঘণ্টায়ও এ পথ শেষ করা যায় না।
সরেজমিন দেখা যায়, শহরের চাষাঢ়া থেকে নিতাইগঞ্জ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু সড়কের দুই পাশে কয়েক শতাধিক হকার ফুটপাত অবৈধভাবে দখল করে ব্যবসা করছেন। এ সড়কের হকার উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী এবং নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষও হয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধু সড়ক থেকে হকার উচ্ছেদ করা যায়নি। সরেজমিন দেখা যায়, চাষাঢ়া সোনালী ব্যাংকের সামনে থেকে কালীরবাজার ব্যাংকের মোড় এলাকা পর্যন্ত সড়কের দুই পাশ হকারদের দখলে চলে গেছে। ফলে ঐ সড়কে পথচারীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। ফুটপাতে দোকানের কারণে হরহামেশাই মানুষের জটলা বেধে যায়। চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটে।
নারায়ণগঞ্জের কালীরবাজার থেকে ১ নম্বর রেলগেট এলাকার সড়কের দুই পাশেও অবৈধভাবে কয়েক শ দোকান গড়ে উঠেছে। অবৈধ দোকানে ভরে গেছে কেন্দ্রীয় ডাকঘর থেকে গ্রিনলেজ ব্যাংক (সাবেক) পর্যন্ত সড়কের দুই পাশের ফুটপাতও। সেখানে ফুটপাত দখল করেই লেপ-তোশক বানানোর কাজ চলে। বেসরকারি চাকরিজীবী শিপন ভূঁইয়া জানান, নারায়ণগঞ্জ খুব ছোট একটি শহর। চাইলেই এ শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখা যায়। চাষাঢ়া সমবায় মার্কেটের ব্যবসায়ী রিপন মাহমুদ আকাশ জানান, মার্কেটের সামনে হকাররা ফুটপাত দখল করে দোকান বসান। তাদের দোকানের কারণে ক্রেতারা স্বাচ্ছন্দ্যে মার্কেটে ঢুকতে পারেন না। অনেকের অভিযোগ, নারায়ণগঞ্জ শহরের ফুটপাতে দোকান বসানোর সবচেয়ে বড় কারণ হলো চাঁদাবাজি। নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক শাহীন আহমেদ বলেন, ‘সড়ক দখল করে হকারদের বসার কোনো অধিকার নেই। বিষয়টি নিয়ে আমরা বহুবার কথা বলেছি। কিন্তু আমাদের এখানে রাজনৈতিক দলগুলো হকারদের মানবিক বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিচ্ছে। কিন্তু হকারদের পুনর্বাসনের জন্য একটি হকার্স মার্কেট করে দিয়েছে সিটি করপোরেশন। কিন্তু দিনদিন হকার বেড়েই চলেছে এ শহরে। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সবাই এক হয়ে কাজ করলে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব।’ শাহীন আহমেদ মনে করেন, ‘হকারদের মাধ্যমে একটি শ্রেণি আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জে হকার বলেন, আর ইজিবাইক বলেন, সব কিছুর মূলে রয়েছে আর্থিক লেনদেন।
নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, ‘ফুটপাত দখলের বিরুদ্ধে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। মানুষের চলাচলে বিঘ্ন ঘটিয়ে যাতে ফুটপাতে হকাররা বসতে না পারেন, সে জন্য আমরা প্রতিনিয়ত কাজ করছি। কিন্তু পুলিশ চলে গেলে তারা আবার এসে বসছেন। এমনও হয় যে, আমরা অনেক সময় তাদের মালামাল পর্যন্ত জব্দ করে নিয়ে আসি। পরে আবার শর্ত দিয়ে সেগুলো ছেড়ে দেওয়া হয়। এর পরে তারা পুলিশের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। বলে পুলিশ পেটে লাথি দিচ্ছে। এই বিষয়টা নিয়ে আসলে পুলিশের একার পক্ষে কোনো সমাধান দেয়া সম্ভব না। সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ, জেলা প্রশাসকসহ সবার সমন্বয়ে সমাধান করতে হবে। চাঁদাবাজির বিষয়ে পুলিশ সুপার বলেন, চাঁদা দেওয়া কোনো ব্যক্তি আজ পর্যন্ত কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে দেয়নি। তবে আমাদের গোয়েন্দা তৎপরতা সবসময়ই থাকে। এ ধরনের কোনো বিষয় জানতে পারলে আমরা অবশ্যই আইনি ব্যবস্থা নেব।