ঘিওর উপজেলা সদরে ধলেশ্বরী নদীতে বালুমহাল ঘোষণা করা হয়েছে। উপজেলার ঘিওর সরকারি কলেজের পাশে এই বালুমহালের আশপাশে রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি খাদ্যগুদাম, শত বছরের পুরোনো হাটবাজার, মহাশ্মশানসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। অপরিকল্পিতভাবে বালু তোলা ও ভারী পরিবহনে বালু বহনের কারণে ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে এসব প্রতিষ্ঠান। বালুমহাল ইজারা বাতিল এবং অপরিকল্পিতভাবে বালু তোলা ও বহন বন্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় বাসিন্দা ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জেলা-উপজেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।
এদিকে ঘিওর ডিএন পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠের ওপর দিয়ে বালুবাহী ট্রাক পরিবহনের ফলে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। এতে মাঠ ব্যবহারের অনুপযোগী হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ধলেশ্বরী নদীর যে স্থান থেকে বালু তোলা হচ্ছে, সরকারি কলেজের পেছনে নদী থেকে তিন-চারটি মাটি কাটার যন্ত্র রাখা হয়েছে। দিন-রাত এসব যন্ত্র দিয়ে কলেজের পেছন থেকে বালু কেটে ১০ চাকার ডাম্প ট্রাকে বহন করা হচ্ছে। বালুবাহী ভারী এসব ট্রাক চলাচলের কারণে কলেজের মাঠের পূর্ব পাশের এক অংশ দেবে বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বালু তোলার স্থান থেকে ৪০০-৫০০ গজের মধ্যে সরকারি কলেজ, সরকারি খাদ্যগুদাম, হাটবাজার, সেতুসহ বিভিন্ন স্থাপনা ও কৃষিজমি রয়েছে। দিন রাত বালু বহনের ডাম্প ট্রাক বেপরোয়া চলাচলে ধুলা বালুতে শিক্ষার্থী,ব্যবসায়ী, এলাকাবাসী পথচারী অতিষ্ঠ। খেলাধুলা করা তো দূরের কথা মাঠের আশপাশেও যেতে পারছে না শিশু-কিশোররা। ট্রাক চলাচলের কারণে মাঠটি ছোট করে শুরু হয়েছে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের রাজস্ব শাখা সূত্রে জানা যায়, গত ৩০ এপ্রিল উপজেলা সদরে ঘিওর-কুস্তা-চর বাইলজুরী বালুমহাল ইজারা দেয় জেলা প্রশাসন। এদিকে বালুমহালের ইজারা বাতিলে গত ৮ মে জেলা প্রশাসকের কাছে গণস্বাক্ষর সংবলিত একটি লিখিত আবেদন করা হয়েছে। এতে স্বাক্ষর করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান ইশতিয়াক আহমেদ শামীম, উপজেলা পূজা উদ্?যাপন পরিষদের সভাপতি শচীন্দ্রনাথ মিত্র, ঘিওর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অহিদুল ইসলাম টুটুল, কুস্তা মহাশ্মশান কমিটির সভাপতি অনিল চন্দ্র দাস, সাধারণ সম্পাদক লিটন কুমার আইচসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। আবেদনকারীরা জানান, বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন-২০১০ অনুযায়ী সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারাজ, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে সর্বনিম্ন এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু তোলা নিষেধ রয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না আইন।
কুস্তা মহাশ্মশান পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক লিটন কুমার আইচ বলেন, বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় নদীর তীরে ১৩০ শতক জমিতে মহাশ্মশানটি গড়ে তোলা হয়েছে। শ্মশানের উত্তর পাশে অপরিকল্পিত বালু তোলা ও পরিবহনের ফলে মহাশ্মশানটি ভাঙনের হুমকিতে পড়েছে।
ধুলা-বালির কারণে শিক্ষার্থীদের সমস্যার কথা স্বীকার করে ঘিওর ডিএন পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান শিকদার বলেন, এ ব্যাপারে তিনি কোনো মন্তব্য করতে নারাজ। স্কুল পরিচালনা কমিটির সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন তিনি।
ঘিওর সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অহিদুল ইসলাম টুটুল বলেন, বালু মহালের কারণে উপজেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে গড়ে ওঠা সরকারি কলেজ, ঘিওরা হাটবাজার, শশ্মান ঘাট ও খাদ্যগুদাম চরম হুমকির মধ্যে পড়েছে। অপরিকল্পিতভাবে নদীতে বালু মহাল গড়ে ওঠায় দুই পাশের বসতবাড়ি এবং ফসলি জমি ভেঙে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন। এসব বালু আনা-নেওয়ার জন্য ব্যবহৃত ট্রাক যত্রতত্র চলাচলের কারণে গোটা উপজেলায় জনদুর্ভোগ বেড়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার হামিদুর রহমান বলেন, ট্রাক চলার ফলে চলাচলে জনদুর্ভোগ হচ্ছে। এ সমস্যার কথাগুলো অনেকেই তাকে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছেন। তিনি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের গোচরে আনার আশ্বাস দিয়েছেন।
জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ বলেন, বালুমহালের কারণে জনদুর্ভোগ। স্কুল-কলেজের যদি সমস্যা হয় বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানরা অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।