নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা বদল বিএনপির সহ্য হয় না: আমু


আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু এমপি বলেছেন, নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে। কিন্তু বিএনপির এটা সহ্য হয় না। এজন্য তারা ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নিয়েছে। তবে কোনো ষড়যন্ত্র সফল হবে না। ষড়যন্ত্র রুখতে ১৪ দল প্রস্তুত। রাজপথে অপশক্তি মোকাবিলার ঘোষণা দেন তিনি।

গতকাল সোমবার রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তন প্রাঙ্গণে মহান বিজয় দিবস ও শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষ্যে এক আলোচনাসভায় এ কথা বলেন তিনি। আমির হোসেন আমুর সভাপতিত্বে আলোচনাসভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টি-জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি, সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ফজলে নূর তাপস, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী এমপি, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আক্তার, ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন, গণ-আজাদী লীগের সভাপতি এস কে শিকদার, বাসদের আহ্বায়ক রেজাউর রশীদ খান, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের অসীত বরণ রায়, গণতন্ত্রী মজদুর পার্টির জাকির হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু আহমেদ মন্নাফী, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি বজলুর রহমান প্রমুখ। ১৪ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতারা ঐক্যবদ্ধভাবে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি মোকাবিলার ঘোষণা দেন। ১৪ দলীয় জোটের ব্যাপকসংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে আলোচনাসভাটি রীতিমতো জনসমুদ্রে রূপ নেয়। 

আমির হোসেন আমু বলেন, বিএনপি আন্দোলন করার জন্য ডিসেম্বরকে বেছে নিয়েছে। ডিসেম্বর মাস বিজয়ের মাস। এই বিজয়ের উৎসব থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়ার জন্য, মানুষকে বিপথগামী করার জন্য বিজয়ের মাসে ষড়যন্ত্র করছে। এই ডিসেম্বর মাসে তারা বিভিন্ন রকম তারিখ দিয়ে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। তিনি বলেন, ‘বিএনপির গাত্রদাহ নিবারণ করার জন্য আজ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন, ১৪ দল থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সবাই সজাগ, সচেতন। তারা (বিএনপি) বলেছিল, ১০ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হবে। আর খালেদা জিয়া দেশ শাসন করবে। তাদের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন তো দূরের কথা, আজ তারা আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। তারা বলছে, তাদের নাকি ১০ ডিসেম্বর জয় হয়েছে। তারা সরকারের কাছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে মুচলেকা দিয়ে গোলাপবাগে সভা করেছে, এটাই নাকি তাদের জন্য বিজয়। এই বিজয় নিয়ে তারা সন্তুষ্ট। আমরাও চাই তারা সন্তুষ্ট থেকে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখুক।’ আমির হোসেন আমু বলেন, তারা নাকি সংবিধান কমিশন গঠন করেছে সংবিধান সংশোধনের জন্য। গাত্রদাহ কোথায়? গাত্রদাহ এই সংবিধান। জাতীয় চার মূলনীতি—গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ যেটা জিয়াউর রহমান ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল, সেটা পুনঃস্থাপিত হয়েছে। এটা তাদের গাত্রদাহ। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ আন্তর্জাতিক হ্যারিটেজ হিসেবে ইউনেসকো অন্তর্ভুক্ত করেছে। সে কারণে তাদের গাত্রদাহ। তাই সংবিধান নিয়ে তারা কথা বলে। এ দেশে স্বাধীনতাকামী মানুষ, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির মানুষ, গণতান্ত্রিক মানুষ, প্রগতিশীল মানুষ, অসাম্প্রদায়িক মানুষ বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। এখানে ফাটল ধরানোর কোনো সুযোগ নেই। সেই ঐক্যের মধ্য দিয়ে ১৪ দল এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।

জাতীয় পার্টি-জেপির সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘বিএনপি বলছে, নির্বাচন হতে দেবে না। নির্বাচন না হলে যে কী হয়, ওয়ান ইলেভেনে সেটা কি তারা দেখেনি? এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেল! নির্বাচন না হলে কেউ শান্তিতে থাকতে পারবে না।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপি কোনো দিন এক দফা, কোনো দিন ২৭ দফা দিচ্ছে। এসব কাজ থেকে বিরত থেকে আসুন গণতান্ত্রিক, সাংবিধানিক ধারাকে অব্যাহত রাখি। আপনারা যা চান, আমরাও তা-ই চাই। আপনারা চান অবাধ নির্বাচন, আমরাও তা-ই চাই। আপনারা চান অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন, আমরাও চাই। আপনারা নির্বাচনে এলেই তো অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন হবে।’

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সব প্রগতিশীল শক্তি ঐক্যবদ্ধ। যেভাবে কুখ্যাত রাজাকার, আলবদর ও আলশামসদের ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়েছে, যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভুলুণ্ঠিত করেছে, যারা জাতিকে দ্বিধাবিভক্ত করেছে এবং যারা সব সময় ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, যারা বাংলার জনগণের এগিয়ে যাওয়ার পথে গতি রোধ করতে চায়, সেই সব কুলাঙ্গারকে বাংলার মাটি থেকে চিরতরে নির্মূল করব, এটাই আজকের শপথ।’

ঢাকা মহানগর ১৪ দলের প্রধান সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম বলেন, ‘বারবার দরকার শেখ হাসিনার সরকার। স্থিতিশীল সরকারকে অস্থিতিশীল করতে ষড়যন্ত্রের চেষ্টা করেছিল বিএনপি-জামায়াত, কিন্তু সফল হতে পারেনি। ষড়যন্ত্র করলে মোকাবিলা রাজপথেই হবে।’ এ সময় ১৪ দলীয় নেতাকর্মীদের প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যারা স্বাধীনতাবিরোধী তাদের রাজনীতি করার অনুমতি আমরা দিতে পারি না। তারা বিজয়ের মাসে বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে বিশৃঙ্খলার পাঁয়তারার চেষ্টা করছে। আবার ডিসেম্বর মাসে তারা ১০ দফা দাবি দিয়েছে। বিএনপি হলো ভুয়া, তাদের দিয়ে কোনো কাজ হবে না। কোনো ষড়যন্ত্র করলে কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে।’

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কামরুল ইসলাম এমপি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত অপশক্তি ষড়যন্ত্র করে দেশকে পেছনের দিকে নিতে চায়। দেশের সব অর্জন ধ্বংস করতে চায়। তারা সংবিধানই মানে না। গণতন্ত্রকে হত্যা করতে চায়। এই অপশক্তিকে বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে বিতাড়িত করতে হবে। এই লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব শক্তিকে ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।’

সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, ‘দেশ আজ দুই ভাগে বিভক্ত। একদিকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি। অন্যদিকে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির নেতৃত্ব দিচ্ছে বিএনপি। দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সব প্রগতিশীল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’

ওয়ার্কার্স পাটির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হাসান বাদশা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ঐক্যবদ্ধ হলে জামায়াত-বিএনপি বাংলাদেশের মাটি থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।

তরিকত ফেডারেশন চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী বলেন, বঙ্গবন্ধু দিয়েছেন স্বাধীনতা আর তার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা দিয়েছেন সোনার বাংলা। স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ দুই ভাগে বিভক্ত। একটা পক্ষ স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি, আরেকটা হলো স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি। বিএনপি-জামায়াতকে অনেক ছাড় দেওয়া হয়েছে।

গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াতের আস্ফাালনের উৎস জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীরা। যারা একাত্তর সালে আমাদের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল। বাংলার মানুষ মাথা নিচু করতে জানে না। যারা উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে চাইবে, তাদের আমরা নিশ্চিহ্ন করে দেব।’ বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) আহ্বায়ক রেজাউর রশিদ খান বলেন, স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করার জন্য সাম্প্রদায়িক বিএনপি-জামায়াত চক্রান্ত করছে।

আলোচনাসভার সময় ছিল দুপুর আড়াইটা। দুপুর ১২টার পর থেকে রাজধানীর সব থানা-ওয়ার্ড থেকে আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের নেতারা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে আসতে থাকেন। দুপুর ২টার মধ্যে শিখা চিরন্তন প্রাঙ্গণ লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। আড়াইটার দিকে জাতীয় পার্টি-জেপির একটি মিছিল আসে। মিছিলে নেতৃত্ব দেন জেপির প্রেসিডিয়াম সদস্য মফিজুল হক বেবু, এজাজ আহমেদ মুক্তা, রুহুল আমিন, ওসমান গণি, ভাইস চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এম সালাহউদ্দিন আহমেদ, জেপির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় যুব সংহতির সভাপতি অ্যাডভোকেট এনামুল ইসলাম রুবেল, জেপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল খায়ের সিদ্দিকী আবু প্রমুখ।

 





Source link: https://www.ittefaq.com.bd/624955/%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%9A%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A7%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%AE%E0%A7%87-%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%AE%E0%A6%A4%E0%A6%BE-%E0%A6%AC%E0%A6%A6%E0%A6%B2-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%8F%E0%A6%A8%E0%A6%AA%E0%A6%BF%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A6%B9%E0%A7%8D%E0%A6%AF-%E0%A6%B9%E0%A7%9F-%E0%A6%A8%E0%A6%BE

Sponsors

spot_img

Latest

Staffers Have Reportedly Been Covering Senator Dianne Feinstein’s Cognitive Decline for Years

Senator Dianne Feinstein recently returned to the Capitol to a standing ovation after a three-month health hiatus. The octogenarian was out of pocket...

Barbora Krejcikova pulls off miracle shot, Iga Swiatek watches in disbelief

Former world No 2 Barbora Krejcikova pulled off a miracle escape to go up by a double break in the second set...

Stevens talks Porzingis, new CBA, trade rumors, the Jays and more

The Boston Celtics have had a busy offseason so far and NBA free agency hasn't even started.The most impactful move the Celtics have...

Steph values family Easter Sunday visit before Warriors beat Spurs

Steph values family Easter Sunday visit before Warriors beat Spurs originally appeared on NBC Sports Bay AreaSteph Curry is all about family.Fortunately, the...

Dubai’s Blockchain Revolution: Top Events to Attend in 2023

Dubai is becoming a blockchain hub thanks to its multiple pro-crypto initiatives.  The city’s free trade...