নৌ অধিদপ্তরের ১১তলা ভবন ছয় বছরেও শেষ হয়নি নির্মাণকাজ


নানান জটিলতায় আটকে পড়েছে আগারগাঁওয়ে নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের নিজস্ব ১১তলা ভবন নির্মাণের কাজ। দুই দফায় মেয়াদ বাড়ানো হলেও সর্বশেষ নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে নির্মাণকাজ সম্পন্ন প্রায় অনিশ্চিত। বিগত ছয় বছরেও শেষ হয়নি ভবনটির নির্মাণকাজ। অভিযোগ উঠেছে, ভবনটি নির্মাণে দীর্ঘসূত্রতার পেছনে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের অবহেলা, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা রয়েছে। এ কারণে প্রকল্পের সময়সীমা ও ব্যয় বৃদ্ধি করেও নির্মাণকাজ সম্পন্ন হচ্ছে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নৌ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর মোহাম্মদ নিজামুল হক ইত্তেফাককে বলেন, তাকে না জানিয়ে এবং কোনো ধরনের অনুমোদন না নিয়ে যাচ্ছেতাইভাবে প্রকল্পের কাজ করা হচ্ছে। এজন্য প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দায়ী। তিনি বলেন, এই সমন্বয়হীনতার কারণে প্রকল্পের কাজে যে গতি এসেছিল তাতে ভাটা পড়েছে। অনিয়ম ও দুর্নীতি নজরে আসার পর এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নৌ মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার চিঠি দিয়েছি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, নৌখাতের উন্নয়ন ও নিরাপত্তার স্বার্থে ২০১৪ সালে গ্লোবাল মেরিটাইম ডিস্ট্রেস অ্যান্ড সেফটি সিস্টেম (জিএমডিএসএস) নামে নৌ মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় নৌ অধিদপ্তরকে। প্রকল্পের মোট ৩৮২ কোটি টাকার মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার ঋণসহায়তা ৭০ শতাংশ ও বাকি ৩০ শতাংশ বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব তহবিলের। তিন বছরমেয়াদি প্রকল্পের বাস্তবায়নের শেষ সময় ছিল ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর। পরবর্তীকালে দুই দফায় প্রকল্পটির কাজের পরিধি বাড়িয়ে এর নামকরণ হয় ‘এস্টাব্লিশমেন্ট অব গ্লোবাল মেরিটাইম ডিস্ট্রেস অ্যান্ড সেফটি সিস্টেম অ্যান্ড ইন্ট্রিগ্রেটেড মেরিটাইম নেভিগেশন সিস্টেম (ইজিআইএমএনএস)’। একই সঙ্গে ব্যয় বরাদ্দ বাড়িয়ে করা হয় ৭৭৯ কোটি টাকা এবং বাস্তবায়নের সময়সীমা ২০২৪ সালের ৩০ জুন চূড়ান্ত করা হয়।  

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, উপকূলীয় অঞ্চলে বিভিন্ন অবকাঠামো স্থাপনের পাশাপাশি এ প্রকল্পের আওতায় আরো রয়েছে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের জন্য একটি ১১তলা ভবন নির্মাণ। ভবনটির নির্মাণকাল ছিল ২০১৭ সালের ২৯ ডিসেম্বর থেকে ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। পরবর্তীকালে সময়সীমা বাড়িয়ে ২০২৪ সালের ৩০ জুন করা হয়। ভবনের নিচতলা থেকে অষ্টম তলা পর্যন্ত নির্মাণব্যয় ধরা হয়েছে ৪০ কোটি টাকা; যা দক্ষিণ কোরিয়া সরকার দেশটির এক্সিম ব্যাংকের মাধ্যমে দেবে। ৯-১১ তলা পর্যন্ত নির্মাণব্যয়  ধরা হয়েছে ১০ কোটি টাকা; যা দেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে। এ প্রকল্পের মূল ঠিকাদার কোরিয়ান কোম্পানি এলজি সামিহ। তবে কোরিয়ান ঠিকাদার এ কাজে বাগদাদ কনস্ট্রাকশানসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে সাব-কন্ট্রাক্টর বা সহ-ঠিকাদার নিয়োগ করেছে। তারাই ভবন নির্মাণসহ ইন্টেরিয়র ও ডেকরেশনের কাজ করছে। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শেরেবাংলা নগর থানার পাশেই নির্মানাধীণ ভবনের নিচতলায় ফায়ার ফিটিংসের যে কাজ করা হয়েছে তাতে নানা অসঙ্গতি রয়েছে। এমনকি ভবনের নকশা অনুমোদনের সময় রাজউকের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ফায়ার সার্ভিস ও ডিফেন্স অধিদপ্তরের যে ছাড়পত্র জমা দেওয়া হয়েছে তাও জাল। গত ৭ মে ফায়ার সার্ভিস ও ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে নৌ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে জানানো হয়, এই ভবনের অনুকূলে তারা কোনো ছাড়পত্র প্রদান করেনি।

ভবনের বেজমেন্টে পাওয়ার সাব-স্টেশন ও জেনারেটর হাউজ পাশাপাশি স্থাপন করায় ভয়াবহ অগ্নিঝুঁকি সৃষ্টির আশঙ্কা তৈরি হয়। এই ঝুঁকি এড়াতে পরবর্তীকালে অতিরিক্ত প্রায় ৬ লাখ টাকা ব্যয় করে স্থাপনা দুটি আলাদা করা হয়েছে। ভবনের বিভিন্ন তলা ছিদ্র করে সিঁড়ির সামনে ফায়ারফাইটিং কেস বসানো হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এটাও যে কোনো সময় মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে। দ্বিতীয় তলার সিলিংয়ে কিছু এয়ারকন্ডিশনের (এসি) তার এলোমেলো থাকলেও এ পর্যন্ত একটিও এসি লাগানো হয়নি। তৃতীয় তলায় ব্যবহার উপযোগী কোনো ফিটিংস নেই। মহাপরিচালকের ওয়াশরুমের কোনো কাজই এখনো শুরু হয়নি। তার কক্ষ ছাড়া তৃতীয় তলার কোথাও মার্বেল টাইলস নেই। এছাড়া তৃতীয় তলায় কোনো এসি লাগানো হয়নি, লাইটিং নেই। অথচ ৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা খরচের হিসাব দেওয়া হয়েছে। 

নির্মাণাধীন ভবনটির ৭ তলা পর্যন্ত ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন তলায় অধিকাংশ দরজা প্লাস্টিকের তৈরি। দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী, কাঠের তৈরি দরজা লাগানোর কথা। এছাড়া কয়েকটি তলায় মেঝেতে টাইলস বসানো হয়নি। ওয়াশরুমে স্থাপন করা বেসিন, কমোড ও অন্যান্য ফিটিংসও নিম্নমানের। বৈদ্যুতিক তারও মানসম্মত বলে মনে হয়নি।

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক ও নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের নটিক্যাল সার্ভেয়ার আবু সাঈদ মোহাম্মদ দেলোয়ার রহমানের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি অপরাগত প্রকাশ করেন। তবে পিডি আবু সাঈদ মোহাম্মদ দেলোয়ার রহমানের পক্ষে উপ-প্রকল্প পরিচালক (ডিপিডি) ফরহাদ জলিল বিপ্লব বলেন, পিডি অসুস্থ। ডিপিডি দাবি করেন, ১১তলা ভবন নির্মাণে কোনো অনিয়ম হয়নি। দরপত্রের শর্ত এবং এ সংক্রান্ত সরকারি বিধিবিধান মেনেই সবকিছুই করা হয়েছে।

 





Source link: https://www.ittefaq.com.bd/644799/%E0%A6%A8%E0%A7%8C-%E0%A6%85%E0%A6%A7%E0%A6%BF%E0%A6%A6%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A7%A7%E0%A7%A7%E0%A6%A4%E0%A6%B2%E0%A6%BE-%E0%A6%AD%E0%A6%AC%E0%A6%A8-%E0%A6%9B%E0%A7%9F-%E0%A6%AC%E0%A6%9B%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%93-%E0%A6%B6%E0%A7%87%E0%A6%B7-%E0%A6%B9%E0%A7%9F%E0%A6%A8%E0%A6%BF

Sponsors

spot_img

Latest

Apple Tart – A Beautiful Mess

This homemade French apple desert is a simple way to make an elegant looking version of an apple pie that is sure to...

Dončić, Irving now 0-2 as teammates, have work to do

Three Things To Know is NBC’s five-days-a-week wrap-up of the night before in the NBA. Check out NBCSports.com every weekday morning to catch...

Everything We Know About ChatGPT, OpenAI’s Powerful AI Chatbot

If you haven’t heard of ChatGPT, the uncanny new chatbot from artificial intelligence lab OpenAI, here is a quick primer on everything you...

Life & Beth Is a Great Show About a Midlife Crisis

What are you watching these days? Since the writers’ strike, I’ve found it harder to hunt down great series, but this week I’ve...

Interested in IT? This CompTIA Bundle Might be Just What You Need.

Disclosure: Our goal is to feature products and services that we think you'll...