নয়া শিক্ষাক্রমের জন্য শিক্ষকদের যোগ্য করাই বড় চ্যালেঞ্জ


দেশে ২০০৮ সালে মাধ্যমিক পর্যায়ে সৃজনশীল পদ্ধতি চালু করা হয়েছিল। পরে ২০১২ সালে প্রাথমিক স্তরেও এ পদ্ধতি চালু হয়। নীতিনির্ধারকরা বলেছিলেন, এ পদ্ধতি চালু হলে মুখস্থবিদ্যা কমবে, শিক্ষার্থীদের বুঝে শেখার দক্ষতা বাড়বে। কিন্তু ফল হয়েছে উলটো। শিক্ষকরাই ঠিকমতো এ পদ্ধতি রপ্ত করতে পারেননি। ১০ বছর শেষেও অর্ধেকের বেশি শিক্ষক এ পদ্ধতিতে প্রশ্নই করতে পারেননি। শিক্ষকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ না দেওয়ার ফলেই এমনটি হয়েছে। ফলে উদ্দেশ্য সফল হয়নি।

২০২৩ শিক্ষাবর্ষে নতুন শিক্ষাক্রমে প্রবেশ করছে বাংলাদেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষাব্যবস্থা। এ বছর প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে এ পদ্ধতি চালু হবে। তিন বছরের মধ্যে সব শ্রেণিতে চালু হবে। এখন শিক্ষাবর্ষে প্রথম সপ্তাহ শেষ হতে চলছে। প্রশিক্ষণ দেবেন এমন প্রশিক্ষক ছাড়া সাধারণ একজন শিক্ষকও এখন পর্যন্ত সরাসরি প্রশিক্ষণ পাননি। মাত্র দুটি অনলাইনে প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। সরাসরি প্রশিক্ষণ না নিয়ে এসব শিক্ষক নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে পাঠদানের জন্য শ্রেণিকক্ষে যাচ্ছেন। প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কী এ শিক্ষাক্রমের ফলও কী সৃজনশীলের মতো হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাঠ্যসূচি বদলেছ, বদলেছে পাঠ্যবই এবং পরীক্ষা পদ্ধতিও। শিখনকালীন মূল্যায়ন করবেন শ্রেণি শিক্ষকরা । যে শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে পড়াবেন তারা এ পদ্ধতি কতটা রপ্ত করতে পারলেন এটাই মুখ্য বিষয়। নতুন শিক্ষাক্রমে শ্রেণিকক্ষের বিভিন্ন কাজের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত যোগ্যতাগুলো অর্জন করার চেষ্টা করবে। নতুন পদ্ধতিতে শিক্ষক সরাসরি কোনো বিষয় বা টপিক পড়ানো শুরু করবেন না। চারটি ধাপ অনুসরণ করে শিক্ষক পাঠদানের কাজটি করবেন।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) প্রাক্তন মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন, এ শিক্ষাক্রমের মূল চ্যালেঞ্জ শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া। শিক্ষকদের ওপর মূল্যায়নের অনেক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে এ শিক্ষাক্রমে। তাই শিক্ষাক্রমের জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি মানসিকতার পরিবর্তনও করতে হবে। বর্তমানে শিক্ষকরা পাঁচ দিন প্রশিক্ষণ পাবেন। শিক্ষকদের আরো প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হবে।

মাউশি অপর এক প্রাক্তন মহাপরিচালক অধ্যাপক এস এম ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়াই বড় চ্যালেঞ্জ। শিক্ষকদের ধীরে ধীরে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। হয়তো শিক্ষকরা প্রশিক্ষিতও হবেন। এ ধীরগতির প্রশিক্ষণকালে যেসব শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে থাকবে তারা পিছিয়ে পড়বে।

প্রাক্তন এ মহাপরিচালক মনে করেন, এ শিক্ষাক্রমের বিষয়টি ততটা গ্রামে পৌঁছেনি। বিভিন্ন সময়ে দেখা গেছে, শহরের শিক্ষার্থীরা পূর্ণ সুবিধা পাচ্ছে। আর গ্রামের শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে না। এ পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীরা যাতে শিক্ষাক্রমে বঞ্চিত না হয়। শিক্ষার্থীদের সারা বছর মূল্যায়ন হবে, কিন্তু শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। তবে সবকিছু প্রস্তুত করেও নতুন শিক্ষাক্রম শুরু করতে গেলে বিশ্ব থেকে আমরা পিছিয়ে পড়ব। তাই নতুন শিক্ষাক্রমে সবার আগে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে।

রাজধানীর শামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান মোল্লা বলেন, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। কারণ এ বিষয়টি সবার আগে শিক্ষকদের রপ্ত করতে হবে। এছাড়া এ শিক্ষাক্রমে যে মূল্যায়ন পদ্ধতি রাখা হয়েছে তাতে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীসংখ্যা কমাতে হবে। কারণ বর্তমানে একটি শ্রেণিকক্ষে ৮০ থেকে ১০০ জন পর্যন্ত শিক্ষার্থী থাকে। এত সংখ্যক শিক্ষার্থী মূল্যায়ন করতে গিয়ে যদি কোনো ভুল হয় তাহলে শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই মূল্যায়ন করা সম্ভব এমন বিবেচনায় শ্রেণিকক্ষের শিক্ষার্থী সংখ্যা নির্ধারণ করতে হবে।

অভিভাবকরা বলছেন, নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের নির্ভরতা বাড়বে। নতুন কারিকুলামে প্রাক-প্রাথমিক থেকে শুরু করে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শ্রেণিকক্ষে মূল্যায়ন হবে। এদের কোনো বার্ষিক পরীক্ষা হবে না। ৪র্থ থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত ৬০ শতাংশ শ্রেণিকক্ষে মূল্যায়ন এবং ৪০ শতাংশ বার্ষিক পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন হবে। ৯ম ও দশম শ্রেণিতে ৫০ শতাংশ শ্রেণিকক্ষে মূল্যায়ন ও বাকি ৫০ শতাংশ পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হবে। আর একাদশ-দ্বাদশে ৩০ শতাংশ শ্রেণিকক্ষে মূল্যায়ন ও ৭০ শতাংশ পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন হবে। অর্থাৎ শ্রেণিকক্ষেই মূল্যায়নেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। যা নির্ভর করবে শিক্ষকদের ওপর। নজরুল ইসলাম নামে এক অভিভাবক জানান, যে শিক্ষার্থী ঐ শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট টিউশনি বা কোচিংয়ে পড়বে, এক্ষেত্রে ঐ শিক্ষার্থীকে বেশি নম্বর পাওয়ার সুযোগ থেকেই যায়।

আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক আব্দুর রশিদ বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমের সুফল পেতে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমাতে হবে। আর বইয়ে বিষয়বস্তু থাকলে ভালো হতো।

যদিও নীতিনির্ধারকরা বলছেন, এ শিক্ষাক্রমে কোচিং বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু এ বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত প্রত্যেক অভিভাবক। নতুন শিক্ষাক্রম সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের জন্য প্রাইভেট-কোচিং বাণিজ্য থেকে দূরে রাখতে ২০১২ বাস্তবায়নের ওপর জোর দিতে হবে। না হলে সুফল বয়ে আনবে না।

 





Source link: https://www.ittefaq.com.bd/626948/%E0%A6%A8%E0%A7%9F%E0%A6%BE-%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%AE%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%9C%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%AF-%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%95%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AF%E0%A7%8B%E0%A6%97%E0%A7%8D%E0%A6%AF-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%87-%E0%A6%AC%E0%A7%9C

Sponsors

spot_img

Latest

Preston Vance drives yet another nail into Dark Order coffin in AEW

For the longest time, Evil Uno of the Dark Order‘s motto has been some version of “everything is fine,” but at this stage...

Richarlison’s disastrous season could happen to any striker

Cristian Stellini says Richarlison’s disastrous debut season at Tottenham Hotspur could have happened to any international striker.The Brazilian, a £60 million signing from...

Bing now has 100 million daily users thanks to its AI chatbot

They said it couldn't be done, but Bing now has 100 million daily users. Microsoft's corporate vice president Yusuf Mehdi shared the news...

#1 Entrepreneurial Insight From Harvard Grads: Brilliant Or Basic?

A study by 2 Harvard grads of Harvard graduates turned entrepreneurs suggests that most venture failures are caused by poor execution. Is this a...

Reds skipper reacts to ‘satisfying’ shutout win

Reds captain Liam Wright has reacted to Queensland’s “satisfying” 31-nil win over the Highlanders at Brisbane’s Suncorp Stadium in a candid interview...