পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয় আরো ২ হাজার ৪১২ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে। মেয়াদ আরো এক বছর বৃদ্ধি করে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের তৃতীয় সংশোধনী অনুমোদন দিয়েছে। তৃতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে এখন এর সর্বশেষ ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা। উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ২৫ জুন মূল সেতু উদ্বোধনের পর সেতু জনসাধারণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। একনেক সভায় জানানো হয়েছে, উদ্বোধনীর পর অবশিষ্ট আনুষঙ্গিক কাজ এবং ঠিকাদারের পাওনা পরিশোধের জন্য বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে। তাছাড়া পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষ্যে ব্যয়, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, মূল সেতুর পাইলের ডিজাইন পরিবর্তন, সেতু ও নদীশাসন কাজের ব্যয় বৃদ্ধির কারণে বাড়তি এ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
একনেক সভায় মোট ১২ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে ১৯ হাজার ৫৯৮ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ৬ হাজার ২৬০ কোটি ৭২ লাখ টাকা, বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ১৩৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ১৩ হাজার ২০৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, পরিকল্পনা সচিব সত্যজিৎ কর্মকারসহ একনেক সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, দুটি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হলেও তা ফেরত দেওয়া হয়েছে। প্রকল্প দুটি হলো—যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প এবং বঙ্গবন্ধুর সমাধিস্থলে জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত প্রকল্প। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নতুন অবকাঠামো নির্মাণ না করে যে অবকাঠামো আছে সেগুলোর কার্যকর ব্যবহার করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী একনেক সভায় আরো বলেন, আমার এলাকায় জমি অধিগ্রহণ হচ্ছে আর আমি জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখি, তার পর নিয়ে আসেন। এছাড়া দেশের কারাগারগুলোতে ভার্চুয়াল কোর্ট স্থাপন করতে হবে। এতে আসামিদের নিয়ে যাতায়াতে হয়রানি ও অতিরিক্ত খরচ কমবে। সেই সঙ্গে নিরাপত্তাও নিশ্চিত হবে। সভায় ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগার পুনর্নির্মাণ প্রকল্পের সংশোধনী নিয়ে আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দেন।
একনেকে অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পগুলো হলো—৬৯১০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রোগ্রাম ফর এগ্রিকালচার রুরাল ট্রান্সফরমেশন ফর নিউট্রিশন, এন্টারপ্রেনিউরশিপস অ্যান্ড রেজিলিয়েন্স ইন বাংলাদেশ শীর্ষক প্রকল। এছাড়াও রয়েছে ৭৬ কোটি ৬ লাখ টাকা ব্যয়ে বিল্ডিং ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স লাভলিহুড ইন ভারনালেবল ল্যান্ডস্কেপস ইন বাংলাদেশ প্রকল্প, ৫১২ কোটি ৯২ লাখ টাকা ব্যয়ে বরিশাল জেলার সদর উপজেলার চরকাউয়া, চাঁদমারী, জাগুয়া, লামচরি এবং চরমোনাই এলাকা কীর্তনখোলা নদীর ভাঙন হতে রক্ষা প্রকল্প (প্রথম পর্যায়)। ৩৮০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ইনস্টিটিউট অব ন্যানোটেকনোলজি স্থাপন প্রকল্প, ১২১৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে ইমপ্রুভিং কম্পিউটার অ্যান্ড সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং টারশিয়ারি এডুকেশন প্রজেক্ট, ৫৯ কোটি ৮ লাখ টাকা ব্যয়ে সেফার সাইবারস্পেস ফর ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রকল্প। এছাড়া ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগার পুনর্নির্মাণ প্রকল্পের ১ম সংশোধনী অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে ১১২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। বাংলাদেশ সড়ক নিরাপত্তা, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সেকশনে বিদ্যমান মিটারগেজ রেললাইনের সমান্তরাল ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের ১ম সংশোধনী অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় বেড়েছে ২৭৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের লেভেল ক্রসিং গেটসমূহের পুনর্বাসন ও মান উন্নয়ন প্রকল্পের ৩য় সংশোধনী অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় বেড়েছে ২৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।