বিভিন্ন স্থানে ভারী বৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢলে নদনদীর পানি বাড়ছে। এতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে চরাঞ্চলের মানুষ পানিবন্দি হওয়াসহ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফসল। প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর।
সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জে দ্রুতগতিতে বাড়ছে যমুনা নদীর পানি। ফলে জেলার চরাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে, তলিয়ে যাচ্ছে জমিজমাসহ বসতবাড়ি। রবিবার সকালে সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্টে যমুনা নদীর পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১২.৪৫ মিটার। গত ২৪ ঘণ্টায় ১১ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপত্সীমার ৪৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে জেলার কাজীপুর উপজেলার মেঘাই পয়েন্টে পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১৪.১৫ মিটার। গত ২৪ ঘণ্টায় ১১ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপত্সীমার ৬৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে নদীর পানি বেড়ে প্লাবিত হচ্ছে জেলার পাঁচ উপজেলার যমুনা অভ্যন্তরের চরাঞ্চলের গ্রামগুলো। ফসলের মাঠ তলিয়ে বসতবাড়িতেও পানি উঠছে। ভাঙন আতঙ্কে রয়েছেন এলাকার মানুষ।
চরাঞ্চলের লোকজন জানান, যমুনার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চরাঞ্চলের নিম্নভূমি ও বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। বসতবাড়িতেও পানি উঠতে শুরু করেছে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রনজিত কুমার সরকার জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টির কারণে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। চরাঞ্চলের নিম্নভূমিগুলো প্লাবিত হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
রাজারহাট (কুড়িগ্রাম): ভারী বৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢলে রাজারহাটে তিস্তা নদীর পানি তৃতীয় দফায় আবারও বাড়ছে। এতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে চরাঞ্চলের প্রায় ২ হাজার লোক পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। রোববার সকালে কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বেড়ে ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বন্যার আশঙ্কার পাশাপাশি বেড়েছে নদীভাঙনের তীব্রতা। পানির চাপে বুড়ির হাট স্পার বাঁধ ভাঙন হুমকিতে রয়েছে। তিস্তা নদী পাড়ের হাজার হাজার মানুষ ভাঙন আতঙ্কে দিন যাপন করছেন।
রাজারহাট উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আমরা প্রত্যেক ইউপি চেয়ারম্যানকে বন্যার বিষয়ে শতর্ক থাকার কথা বলছি। কোনো পরিবার পানিবন্দি হলেই তালিকা করে জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
রাজারহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুন নাহার বলেন, উপজেলায় প্রবল বৃষ্টিতে ১৩৫ হেক্টর জমির রোপা আমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাত ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে সার্বক্ষণিক তদারক করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল-মামুন জানান, ভারী বৃষ্টিতে তিস্তার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পানির চাপে বুড়ির হাট স্পার বাঁধ ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে।
নাগেশ্বরী (কুড়িগ্রাম): নাগেশ্বরীতে বাড়তে শুরু করেছে ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার, গঙ্গাধর, ফুলকুমর, শংকোষসহ সকল নদনদীর পানি। এতে অধিকাংশ এলাকায় প্রায় তলিয়ে গেছে সদ্য লাগানো রোপা আমন খেত। পূর্ব সাঞ্জুয়ারভিটার আশরাফ আলী, মনছুর আলী, বামনডাঙ্গা সেনপাড়ার বিষ্ণুপদসহ অনেক কৃষক জানান, এমনিতেই বন্যায় কিছুটা পিছিয়ে গেছে রোপা আমন চাষ। এরপর জমিতে রোপা আমন চারা লাগালেও এখন তা বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। এ রকম বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে জলাবদ্ধতা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে ঝুঁকিতে পড়তে পারে রোপা আমন খেত।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসও মোস্তাফিজুর রহমান জানান, যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে তাতে জলাবদ্ধতায় হয়তো মাঝারি মানের বন্যা হতে পারে। তবে এ মুহূর্তে বড় ধরনের কোনো বন্যার আশঙ্কা নেই।