ব্যাংকের সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন


দেশের ব্যাংকিং সেক্টরের বর্তমান অবস্থা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। অনেক দিন ধরেই ব্যাংকিং সেক্টরের অবস্থা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে সতর্কবাণী উচ্চারণ করা হচ্ছিল। কিন্তু কোনো প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গৃহীত হয়নি। ফলে ব্যাংকিং সেক্টরের অবস্থা দিনে দিনেই খারাপের দিকে যাচ্ছে। ব্যাংকিং সেক্টর নানা জটিল সমস্যায় আক্রান্ত হলেও এই মুহূর্তে সবচেয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে পর্বতপ্রমাণ খেলাপি ঋণের উপস্থিতি। খেলাপি ঋণের পরিমাণ উদ্বেগজনকভাবে বাড়লেও তা কমিয়ে আনার কোনো কার্যকর উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। খেলাপি ঋণের পরিমাণ অনেকটাই প্রতিকারহীনভাবে বেড়ে চলেছে। খেলাপি ঋণের কিস্তি আদায়ের কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করে বরং নানাভাবে তাদের বিভিন্ন রকম সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এতে ব্যাংকিং খাতের ওপর যদি সাধারণ মানুষের আস্থা কমে যায়, তাহলে সমস্যা হতে পারে। কারণ ব্যাংকিং ব্যবস্থা পরিচালিত হয় মানুষের আস্থা আর বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে। কাজেই কোনো কারণে যদি আস্থাহীনতা সৃষ্টি হয়, তাহলে সাধারণ মানুষ ব্যাংকে আমানত সংরক্ষণের ক্ষেত্রে দ্বিধান্বিত থাকবে। ব্যাংকগুলোও তাদের চাহিদামতো আমানত সংগ্রহ করতে পারবে না। ব্যাংকগুলো যদি আমানত সংগ্রহ করতে না পারে, তাহলে তাদের পক্ষে উদ্যোক্তাদের চাহিদামতো ঋণ দেওয়া সম্ভব হবে না। আমাদের দেশের উদ্যোক্তাগণ তাদের বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য মূলত ব্যাংকিং সেক্টরের ওপর নির্ভর করে। কারণ দেশের পুঁজিবাজার এখনো সেভাবে বিকশিত হয়নি। ফলে শেয়ারবাজার শিল্প খাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোনো ভূমিকা পালন করতে পারছে না। 

ব্যাংকিং সেক্টরে বর্তমানে যে অরাজক অবস্থা বিরাজ করছে, তার পেছনে কতগুলো কারণ আছে। এর মধ্যে প্রথমেই উল্লেখ করতে হয় সুশাসনের বিষয়টি। ব্যাংকিং সেক্টরে সার্বিকভাবে অভ্যন্তরীণ সুশাসনের প্রচণ্ড অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে অনেক দিন ধরেই। রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী এবং ব্যাংকের একশ্রেণির কর্মকর্তা, বিশেষ করে পরিচালনা বোর্ডের একশ্রেণির সদস্যদের মধ্যে সৃষ্ট অশুভ আঁতাতের কারণে ব্যাংকিং সেক্টরে বর্তমানে বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করছে। এই অশুভ আঁতাতের কারণে একশ্রেণির ঋণগ্রহীতা শুধু সুবিধাই পেয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু তারা ঋণের কিস্তি পরিশোধ করছেন না। আর একটি সমস্যা হচ্ছে, আমাদের দেশের অর্থনীতির যে আকার, সেই তুলনায় ব্যাংকের সংখ্যা অনেক বেশি হয়ে গেছে। ভারতের মতো অর্থনীতিতেও ব্যাংকের সংখ্যা আমাদের তুলনায় কম। ব্যাংকের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি হয়ে যাওয়ার কারণে বাজারে একধরনের অসম প্রতিযোগিতার সূত্রপাত হয়েছে। ব্যাংকগুলো প্রায় একই রকম সেবা নিয়ে সাধারণ গ্রাহকের দ্বারে উপস্থিত হচ্ছে। ব্যাংকের সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়ছে। বড় প্রতিষ্ঠান হলে তার স্কেল অব ইকোনমি থাকে। তার খরচ কম হয় রাজস্ব আহরণের তুলনায়। দেশে অনেক বেশি ব্যাংক থাকার কারণে সবারই স্কেল অব অপারেশন সীমিত। ফলে ব্যাংকগুলোর সুষ্ঠুভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করে মুনাফা অর্জনের সুযোগ খুবই কম। আরো একটি সমস্যার প্রতি দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। তা হলো ব্যাংকিং সেক্টরে যেসব কর্মকর্তা নিয়োজিত আছেন, তাদের অনেকেরই দক্ষতা প্রশ্নাতীত নয়। তাদের প্রকল্প বিশ্লেষণের সক্ষমতার ঘাটতি আছে। ফলে একটি ঋণ প্রস্তাব ব্যাংকে এলে বেশির ভাগ সময়ই তা সঠিকভাবে বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন করা সম্ভব হয় না। একটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ঋণগ্রহীতা কেমন রিটার্ন পাবেন, ব্যাংক তার দেওয়া ঋণের কিস্তি সঠিক সময়ে আদায় করতে পারবে কি না, তা অনুধাবন করা সম্ভব হয় না। আবার কোনো কোনো সময় দক্ষতা থাকলেও তা সঠিকভাবে কাজে লাগানো কর্মকর্তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। কারণ তাদের ওপর বিভিন্ন মহলের চাপ থাকে। সেই চাপ উপেক্ষা করে একজন কর্মকর্তার পক্ষে সব সময় সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হয় না। তারা একটি প্রকল্পের সঠিক মূল্যায়ন করতে পারেন না। তারা পক্ষপাতমূলক রিপোর্ট দিয়ে থাকেন। ফলে আর্থিকভাবে অযোগ্য অনেক প্রকল্পের বিপরীতে ঋণ মঞ্জুর করা হয়। এই প্রকল্পের উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে পরে ঋণের কিস্তি আদায় করা প্রায়ই সম্ভব হয় না। উপরন্তু ঋণের ওপর সুদের সর্বোচ্চ হার ৯ শতাংশ এবং আমানতের ওপর প্রদেয় সুদের সর্বোচ্চ হার ৬ শতাংশ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে, এটাই ব্যাংকগুলোর জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো আমানতের ওপর সর্বোচ্চ সাড়ে ৫ শতাংশ এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো ৬ শতাংশ সুদ প্রদান করতে পারছে। কিন্তু বাস্তবে ব্যাংকগুলো আরো অনেক কম সুদ দিচ্ছে আমানতের ওপর। দেশে বর্তমানে মূল্যস্ফীতির হার প্রায় ৯ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি যদি প্রায় ৯ শতাংশ হয় এবং ব্যাংকগুলো আমানতকারীদের সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ সুদ প্রদান করে, তাহলে বছরান্তে আমানতকারীদের লোকসান হবে। এই অবস্থায় উদ্বৃত্ত অর্থের মালিকগণ ব্যাংকে আমানত সংরক্ষণে নিরুত্সাহিত হয়ে পড়তে পারেন। এসব নানা জটিল সমস্যার মধ্যে ব্যাংকিং সেক্টর পরিচালিত হচ্ছে। সমস্যাগুলো এক দিনের নয় বা হঠাৎ করেই সৃষ্টি হয়নি। দীর্ঘদিন ধরেই এসব সমস্যা ব্যাংকিং সেক্টরে বিরাজ করছে। এসব সমস্যা সমাধানে দৃঢ় রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও অঙ্গীকার প্রয়োজন। কিন্তু এই অঙ্গীকারের অভাব আমরা প্রত্যক্ষ করছি। ব্যাংকিং সেক্টরের সমস্যা সমাধানে একমাত্র উপায় হচ্ছে রাজনৈতিক দৃঢ় অঙ্গীকার।

ব্যাংক ঋণের আপার ক্যাপ তুলে না দিয়ে নীতি সুদহার বাড়ানো হলে তা বাজারে মুদ্রা সরবরাহ কমানোর ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা রাখবে না। যেসব ব্যাংকের কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার প্রয়োজন তাদের খরচের পরিমাণ বেড়ে যাবে। কিন্তু গৃীহত ঋণের অর্থ তারা উদ্যোক্তা পর্যায়ে বেশি সুদে বিনিয়োগ করতে পারবে না। এতে তাদের মুনাফার পরিমাণ কমে যাবে। এটা ক্যাপিটাল মার্কেটেও বিরূপ প্রভাব ফেলবে। কারণ ব্যাংকিং সেক্টর ক্যাপিটাল মার্কেটের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ জুড়ে আছে। পুঁজিবাজারে লিস্টেড ব্যাংকগুলো যদি ভালো ডিভিডেন্ড দিতে না পারে, তাহলে তাদের প্রতি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিরূপ ধারণার সৃষ্টি হবে।

আমরা যদি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর কাছ থেকে ঋণ পেতে চাই, তাহলে তারা যেসব শর্ত দিয়েছে, তা পরিপালন করতে হবে। শর্ত পরিপালন না করলে তারা ঋণ দেবে না। আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারছি, আইএমএফ ব্যাংকিং সেক্টর সংস্কারের জন্য নানা শর্ত দিয়েছে। এখন দেখার বিষয় হলো, আইএমএফ কতগুলো শর্ত দিয়েছে আর কতগুলো পরামর্শ দিয়েছে। সংস্থাটির দেওয়া শর্ত আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়। তবে আইএমএফ শর্ত দিক আর না দিক, কিছু সংস্কার আমাদের নিজেদের স্বার্থেই করা প্রয়োজন। কারণ ব্যাংকিং সেক্টরের অবস্থা এখন মোটেও ভালো নয়। যেমন—আইএমএফ রাজস্ব আহরণের পরিমাণ বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছে। বাংলাদেশের জিডিপির তুলনায় রাজস্ব আহরণের হার খুবই কম। বিশ্বের যেসব দেশে ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও সবচেয়ে কম, বাংলাদেশ তাদের একটি। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান সবচেয়ে নিচে। আমাদের উন্নয়ন কার্যক্রমে অর্থায়নের জন্য রাজস্ব আহরণের পরিমাণ বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। প্রতিবেশী দেশ নেপালের জনগণের মাথাপিছু জাতীয় আয় আমাদের তুলনায় অনেক কম। অথচ তাদের ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি। আইএমএফ বলুক আর না-ই বলুক, এসব বিষয়ে আমাদের আরো আগেই গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল। 

আমি মনে করি, ব্যাংকিং সেক্টরের খেলাপি ঋণের পরিমাণ নিয়ে আইএমএফ যে বক্তব্য দিয়েছে সেটাই সত্যি এবং গ্রহণযোগ্য। বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের যে পরিমাণ প্রদর্শন করে, তা বাস্তবতাবিবর্জিত। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংক মামলাধীন প্রকল্পের কাছে পাওনা ঋণ, অবলোপনকৃত ঋণ, পুনঃ তপশিলিকৃত ঋণ খেলাপি ঋণের হিসাবের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে না। এটা কোনোভাবেই হতে পারে না। ব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে খেলাপি ঋণ হিসাব পুনঃ তপশিলিকরণ করছি। এতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কম দেখানোর সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে, কিন্তু খেলাপি ঋণের কিস্তি তো আদায় হচ্ছে না। অবলোপনকৃত ঋণের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। মামলাধীন প্রকল্পের কাছে ব্যাংকের ঋণ পাওনা আছে। অবলোপনকৃত প্রকল্পের কাছে পাওনা ঋণ, পুনঃ তপশিলিকৃত প্রকল্পের কাছে পাওনা ঋণ এবং মামলাধীন প্রকল্পের কাছে পাওনা ঋণের কিস্তি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তা খেলাপি ঋণের হিসাব থেকে বাদ দিয়ে দেখানোর কোনো অবকাশ নেই। খেলাপি ঋণ ক্যালকুলেট করার জন্য আইএমএফ যে পরামর্শ দিয়েছে, তা আন্তর্জাতিক মানের এবং গ্রহণীয়। আমি মনে করি, খেলাপি ঋণ হিসাবায়নে আইএমএফ যে পরামর্শ দিয়েছে, আমাদের সেই মোতাবেক কাজ করা উচিত। 

সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকিং সেক্টরের জন্য যেসব আইনি পরিবর্তন করা হয়েছে, তা এই খাতের জন্য সুফল বয়ে আনছে না। বরং ব্যাংকিং সেক্টরকে একধরনের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এসব আইনি পরিবর্তনের মাধ্যমে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কৃত্রিমভাবে কমিয়ে দেখানো সম্ভব হলেও প্রকৃত পক্ষে খেলাপি ঋণের মাত্রা অনেক বেড়ে যাচ্ছে। সুতরাং আমাদের এই রাস্তা থেকে সরে এসে আন্তর্জাতিক মান অনুসারে খেলাপি ঋণ চিহ্নিত করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আমি অনেক স্থানে বলেছি, খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য যে অর্থঋণ আদালত গঠন করা হয়েছে, সেখানে মামলা নিষ্পত্তির হার খুবই কম। ফলে যে উদ্দেশ্যে অর্থঋণ আদালত গঠন করা হয়েছিল, সেই উদ্দেশ্য সাধিত হচ্ছে না। আমি মনে করি, অর্থ মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধিরা মাননীয় প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করে অর্থঋণ আদালতে দায়েরকৃত মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যাপারে আলোচনা করতে পারেন। জমে থাকা অনিষ্পন্ন মামলা কীভাবে দ্রুত নিষ্পত্তি করা যায়, তার ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। 

লেখক : বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং সর্বশেষ তত্ত্বাবধায়ক  সরকারের অর্থ উপদেষ্টা। অনুলিখন: এম এ খালেক 

 





Source link: https://www.ittefaq.com.bd/627833/%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE-%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A7%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%87-%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A6%A8%E0%A7%88%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%95-%E0%A6%B8%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%9A%E0%A7%8D%E0%A6%9B%E0%A6%BE-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%9F%E0%A7%8B%E0%A6%9C%E0%A6%A8

Sponsors

spot_img

Latest

Apple announces Oct. 30 Mac event called ‘Scary Fast’

Apple has officially announced its October event focused on the Mac. The event — which the tech giant named "Scary Fast" — will...

Ripple effects of Josh Hart’s potential Game 2 absence for Knicks at Cavaliers in 2023 NBA playoffs

Update: Josh Hart's status for Game 2 was updated from doubtful to questionable on Tuesday morning.CLEVELAND -- The Knicks are 17-6 with Josh...

Get three PC backup and security apps for $35

TL;DR: Through April 11, get the PC Transfer Kit Bundle(Opens in a new tab) featuring PCmover Professional, DiskImage, and SafeErase for $25.49 (reg....

Haley Atwell Opens Up on Peggy Carter Death

2022’s Doctor Strange in the Multiverse of Madness was an odd movie in many respects, most of them regarding the way it treated...

Liverpool 2023 pre-season livestream: How to watch Liverpool FC for free

SAVE 49%: Livestream every Liverpool FC pre-season fixture on LFCTV GO. Watch for free with the code GOFREE23(opens in a new tab). A lot...