কোরবানি ঈদে মাংসের নানা পদ খাওয়া হবেই। তবে স্বাস্থ্যগত জটিলতার চিন্তায় অনেকেই উৎসবে যোগ দিতে পারেন না পুরোপুরি। মনের ভেতর বাধা রেখে আনন্দটা হয় মাটি। তবে কোরবানি ঈদের আগে যদি জানা যায় কতটুকু মাংস কে খাবেন তাহলে মানসিক প্রস্তুতি থাকে। থাকে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞানের অধ্যাপক নাজমা শাহীন এ বিষয়ে আমাদের বিস্তারিত জানাচ্ছেন।
কিডনির রোগে ভুগছেন যারা
কিডনির রোগীদের জন্য লাল মাংস একেবারেই মানা। তাদের জন্য লিন মিট। অর্থাৎ খাবারে বৈচিত্র্য এনে মুরগীর মাংস। লাল মাংসের সোডিয়াম শারীরিক জটিলতা বাড়াতে পারে৷ যদি মাংস খেতেই হয় তাহলে লবণ কম দিয়ে রান্না করুন। মশলা না দিয়ে ঝোল ছাড়া খান। হয়তো কাবাব বা কোফতা হতে পারে। মশলা ও লবণ কম। মশলা ত্যাগ করাই ভালো।
হৃদরোগ
বড় বিপদ হৃদরোগীদের। চর্বিজাতীয় খাবার ভীষণ ক্ষতিকর। এমনটি হলে খাসি বা গরুর সাদা চর্বি সরিয়ে মাংস খেতে পারবেন কাবাব করে। ঝোল খাবেন না। ঝোলে ফ্যাট মিশে থাকতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপ যাদের
হৃদরোগীদের মতো উচ্চ-রক্তচাপ যাদের তাদেরও ছুরি বা বটি দিয়ে সাদা চর্বি কেটে ফেলতে হবে। কম মশলা ও লবণ দিয়ে ঝোল রান্না করে শুধু মাংস খেতে পারবেন৷ ঝোল খাবেন না।
যাদের রক্তে ইউরিক অ্যাসিড বেশি
যাদের রক্তে ইউরিক অ্যাসিড অনেক বেশি তাদের জন্য গরুর মাংস এড়িয়ে চলাই শ্রেয়। কিন্তু আপনার রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা সামান্য নিয়ন্ত্রণে থাকলে এক দুই টুকরো খেতে পারেন।
ডায়াবেটিসের রোগী
ডায়াবেটিস রোগীদের মিষ্টি খেতে বারণ। তবে তাদের চর্বি খাওয়াও ঠিক না। কারণ চর্বিতে প্রচুর ক্যালরি। প্রোটিনের ক্ষেত্রে তাদের চর্বি-ছাড়া মাংসই খেতে হবে।
দিনে কতটুকু মাংস খাবেন?
সুস্থ থাকতে দৈনিক ঠিক কতটুকু মাংস খাওয়া উচিত তা অনেকেরই জানা নেই। ইনস্টিটিউট অব মেডিসিন ইউএসএ’র দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক প্রোটিনে চাহিদা ১ গ্রাম/কেজি বডি ওয়েট।
অর্থাৎ কারো ওজন যদি ৬০ কেজি হয়, আর সে যদি পরিশ্রমী না হন তাহলে তার দৈনিক প্রোটিনের দরকার পড়ে ৬০ গ্রাম। আর ভারি কাজ করলে আরও ৩০ গ্রাম বাড়বে, অর্থাৎ ৯০ গ্রাম প্রোটিন দরকার। এটা হচ্ছে স্বাভাবিক শারীরিক ক্রিয়া প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন।
তবে একজন সুস্থ মানুষ কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ব্যতীত দৈনিক সর্বোচ্চ ২ গ্রাম/কেজি বডি ওয়েট করে প্রোটিন খেতে পারবে। সুতরাং একজন ৬০ কেজি ওজনের মানুষ দৈনিক সর্বোচ্চ ১২০ গ্রাম প্রোটিন খেতে পারবে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ব্যতীত।
এই পরিমাণের চেয়ে বেশি খেলে ডায়রিয়া কিংবা কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে। প্রোটিনের অন্যতম উপাদান হলো মাংস, মাছ, ডিম ইত্যাদি। সেক্ষেত্রে শুধু মাংসই নয় বরং এ পরিমাণের বেশি মাছ বা ডিম খেলেও শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে।