বঙ্গবাজার হকার্স মার্কেটের নিচতলায় মিতালী শাড়ি হাউজ। এই দোকানের মালিক মফিজ হাজি। তার পাঁচটি দোকান ছিল এই মার্কেটে। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলা শহরের মার্কেটে পাইকারিতে শাড়ি বিক্রি করা হয় মিতালী শাড়ি হাউজ থেকে। পাইকারিতে বেশির ভাগ বিক্রি বাকিতে করেন। একটি চালানের টাকা পরিশোধ হওয়ার পর পরবর্তী বিক্রিটা বাকিতে দেন। এই হিসাবে মফিজ হাজির দোকানের বাকি বিক্রির মূল্য প্রায় ২ কোটি টাকা। বাকি বিক্রির টাকার হিসাব দোকানের খাতায় লিখে রাখেন। অগ্নিকাণ্ডে তার দোকানের সব মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। বাকি বিক্রির খাতাও পুড়ে ছাই। এখন এই টাকার হিসাব তিনি কোথায় পাবেন—এই কথা ভেবে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন বাবুপুরা পুলিশ ফাঁড়ির সামনে আনন্দবাজার মার্কেটের ফুটপাতে।
মফিজ হাজি বলেন, ঈদে দোকানে প্রায় দেড় কোটি টাকার শাড়ি তুলেছিলেন। বেশির ভাগ শাড়ি ভারতীয়। দোকানের ক্যাশবাক্সে ছিল প্রায় লক্ষাধিক টাকা। সব পুড়ে শেষ। বাকি বিক্রির টালি খাতাও শেষ। দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকারি ক্রেতার কাছ থেকে বাকি টাকা উদ্ধার করবেন কীভাবে? এ প্রশ্ন তিনি রেখে বলেন, অনেক ব্যবসায়ীরও একই অবস্থা হয়েছে।
রিয়াজুল গার্মেন্টস, খান ফ্যাশন, এস এ গার্মেন্টস, খান শাড়ি বিতানসহ বঙ্গ-মার্কেটে পাঁচটি দোকান ছিল ব্যবসায়ী মো. মামুনের। ঈদকে সামনে রেখে পাঁচটি দোকানে ১০ কোটি টাকার মালামাল তুলেছিলেন তিনি। কিন্তু আগুনে এক নিমেষে সব শেষ হয়ে গেছে। মুহূর্তের মধ্যে সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়া এ ব্যবসায়ী কাঁদছিলেন আগুন থেকে বাঁচাতে পারা অল্প কিছু মালামালের ওপর বসে। বলেন, ১০ কোটির টাকার পণ্যের মধ্যে ১ কোটি টাকার মতো বিক্রি করতে পেরেছেন গত কিছুদিন। এটাও ছিল বাকিতে। ঈদের আগে ঐ সব পণ্য বিক্রি করে টাকা ফেরত দিবে। বাকি পুরো মালামাল দোকান ও গুদামে ছিল। এরমধ্যে মাত্র কয়েক লাখ টাকার মালামাল রক্ষা করতে পেরেছেন। বাকি সব মাল পুড়ে গেছে। এখন কীভাবে তিনি বাকি টাকাটা তুলবেন?
ব্যবসায়ী মামুন বলেন, ‘আমার জীবনের সব উপার্জন যে আগুনে পুড়ে গেল, এই ক্ষতির দায় নেবে কে? কে আমার ঋণ পরিশোধ করবে? আমার তো কিছুই নেই। সব তো শেষ হয়ে গেছে।’
ব্যবসায়ী মামুনের মত হেলাল খানের দোকান পুড়ে গেছে আগুনে। আনন্দবাজার মার্কেটের পাশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুসলিম হলের সীমনা প্রাচীর ঘেঁষা সড়কের ফুটপাতে বসে কান্না করছিলেন। তার দোকানের ৭০-৮০ লাখ টাকার মালামাল পুড়ে শেষ।