সাতক্ষীরা জেলার বেশিরভাগ এলাকা জুড়েই রয়েছে লোনা পানি। লোনা পানিকে আশীর্বাদ হিসেবে গ্রহণ করে এলাকার অধিকাংশ মানুষ বাগদা চাষকে তাদের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে নিয়েছেন। কিন্তু প্রথমবারের মতো তালা উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলের চাষিরা মিষ্টি পানিতে আধুনিক ব্যবস্থাপনায় কার্প মাছ মোটাতাজাকরণ ও উত্তম পদ্ধতিতে গলদা চিংড়ি চাষ করে দিন দিন লাভের মুখ দেখছেন। অল্প পুঁজিতে অধিক লাভ হওয়ায় গলদা ও কার্প চাষে উৎসাহিত হচ্ছেন মৎস্য চাষিরা।
জানা যায়, পল্লিকর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় এবং বেসরকারি সংস্থা উন্নয়ন প্রচেষ্টার সমন্বিত কৃষি ইউনিটের মৎস্যখাতের মাধ্যমে এ বছর তালা উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় ৩৫ একর জমিতে গলদা চিংড়ি এবং ১০০ একর জমিতে কার্প মাছের চাষাবাদ হয়েছে। এতে খরচ কম ও উৎপাদন বেশি হয়। এক বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমি থেকে একজন চাষি লক্ষাধিক টাকা আয় করছেন। তাদের সফলতা দেখে অনেকেই মাছ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
তালার দেওয়ানিপাড়া গ্রামের গলদা চিংড়ি চাষি মো. আলমগীর হোসেন বলেন, আগে আমরা গতানুগতিক সব মাছ একত্রে চাষ করতাম। খাবার ব্যবহারেও তেমন উৎসাহী ছিলাম না। এ বছর উন্নয়ন প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি এবং গলদা চিংড়ি চাষের জন্য কিছু আর্থিক সহযোগিতা পেয়েছি। চিংড়ি চাষ করে এবছর আমরা লাভের মুখ দেখেছি।
তিনি আরও বলেন, গলদা চিংড়ির খুব একটা রোগবালাই হয় না। উৎপাদিত চিংড়ি আশপাশের আড়ৎগুলোতে বিক্রি করা হয়। এ বছর এক বিঘা জমিতে গলদা চিংড়ি চাষে খরচ হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা এবং মাছ বিক্রি হয়েছে ২ লক্ষ ২০ হাজার টাকার কাছাকাছি। এছাড়া ঘেরের ভেড়িতে সবজি চাষ করে পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে অনেক টাকার সবজি বিক্রি করা হয়েছে।
কার্প মাছ চাষি শামীম হোসেন বলেন, বহু বছর ধরে আমরা প্রাচীন পদ্ধতি অনুসরণ করে মাছ চাষ করে আসছিলাম বলে সফলতা পাচ্ছিলাম না। এবার উন্নয়ন প্রচেষ্টার মৎস্য ইউনিটের মাধ্যমে কার্প জাতীয় মাছ মোটাতাজাকরণ করি। চলতি বছর এক বিঘা জমিতে কার্পমাছ মোটাতাজা করতে খরচ হয় দেড় লক্ষাধিক টাকা এবং বিক্রি করা হয় প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। উৎপাদিত মাছ আঠারোমাইল, বিনেরপোতা, কাশিমনগরসহ আশপাশের আড়ৎগুলোতে বিক্রি করা হয়।
উন্নয়ন প্রচেষ্টার মৎস্য কর্মকর্তা এসএম নেওয়াজ শরীফ সুমন বলেন, পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এর আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় উন্নয়ন প্রচেষ্টার সমন্বিত কৃষি ইউনিটের মৎস্য খাতের মাধ্যমে প্রায় ৩৫ একর জমিতে চাষিদের দিয়ে এ বছর উত্তম ব্যবস্থাপনায় চিংড়ি মাছ চাষাবাদ এবং প্রায় ১০০ একর জমিতে কার্প মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ করা হয়। এতে চাষিরা লাভের মুখ দেখেন। তাদের দেখাদেখি অনেকেই চিংড়ি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
তালা উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা স্নিগ্ধা খাঁ বাবালী বলেন, উন্নয়ন প্রচেষ্টার সহযোগিতার কারণে পূর্বের বছরগুলোর তুলনায় এ বছর অত্র উপজেলাতে প্রায় ২০০ একর জমিতে বেশি মাছ চাষ হয়েছে। এটা তালাবাসীর জন্য একটা দৃষ্টান্ত।
তিনি আরও বলেন, চলতি বছর তালা উপজেলায় ৭,০১৬ হেক্টর আয়তনে ৭৭৪৫ টি ঘেরে গলদা ও বাগদা চিংড়ি এবং ১২,০৪৫ হেক্টর আয়তনের জমিতে ৪৭০০ মৎস্য ঘেরে বিভিন্ন ধরণের সাদা মাছের চাষ হয়েছে।