চট্টগ্রামের রাউজানে ব্যাপক হারে বেড়েছে গরু চুরির ঘটনা। প্রায় প্রতি রাতেই বিভিন্ন গ্রামে হানা দিচ্ছে সংঘবদ্ধ চোরের দল। এতে আতঙ্কে রয়েছেন ঐ অঞ্চলের চাষি ও খামারিরা। গরু চুরি ঠেকাতে তারা রাত জেগে খামার পাহারা দিচ্ছেন।
মঙ্গলবার ভোররাতে উপজেলার উরকিরচর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড়ের মীরাপাড়া গ্রামের নুর আহমেদের ছেলে ইউসুফ আলী গুন্নুর খামার থেকে সিন্ধি প্রজাতের তিনটি গাভি ও একটি ষাঁড় চুরি হয়। একই রাতে পার্শ্ববর্তী পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সরকার পাড়ার জহুর লাল সরকারের ছেলে সাগর সরকারের তিনটি গরু চুরি হয়। উরকিরচর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আরমান হোসাইন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ইউসুফ আলী গুন্নু পেশায় একজন কৃষক। একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে তিনি চারটি গরু কিনে ক্ষুদ্র খামার তৈরি করেন। গরু চারটি ভোররাতে কে বা কারা চুরি করে নিয়ে যায়। যার আনুমানিক বাজার মূল্য সাড়ে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা। পরিষদের চেয়ারম্যানসহ আমরা বিভিন্ন স্থানে গরুগুলোর খোঁজখবর নিচ্ছি। তিনি আরও জানান, একই রাতে পার্শ্ববর্তী গ্রাম সরকার পাড়ার সাগর সরকারের চুরি হওয়া তিনটি গরু সরকার পাড়া বিলে পাওয়া যায়। হয়তো ২১ ফেব্রুয়ারির প্রভাত ফেরির জন্য মানুষের আনাগোনা দেখে চোরেরা গরুগুলো বিলে ফেলে পালিয়ে যায়। এদিকে গত ৮ ফেব্রুয়ারি নোয়াপাড়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের কালীবাড়ি থেকে নাজিম উদ্দিনের দুটি, বিশ্বনাথ ও রঞ্জিত মাস্টারের তিনটি ও চুন্নু নাথের একটি গরু চুরি হয়ে যায়। এসব গরুর আনুমানিক বাজর মূল্য প্রায় ৬ লাখ টাকা বলে জানান খামারিরা।
চুরি হওয়া গরুগুলো এখনো উদ্ধার করা যায়নি বলে জানান স্থানীয় ইউপি সদস্য তপন কুমার মল্লিক। তিনি আরও জানান, গত ৯ ফেব্রুয়ারি তার ওয়ার্ডের গরীবুল্লাহ পাড়ার মো. বাবুলের দুটি গরু চুরি হয়। পরবর্তী সময়ে সরদার পাড়ার একটি পরিত্যক্ত বাড়ি হতে গরু দুটি পাওয়া যায়। গরু চুরির হার বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্কে রয়েছেন ক্ষুদ্র খামারিরা।
পাহাড়তলী ইউনিয়নের খামারি রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, রাতে চুরের জন্য ঘুমাতে পারি না। একটু আওয়াজ হলে উঠে পড়ি। রাত জেগে খামার পাহারা দিতে হচ্ছে। আনোয়ার নামের এক খামারি বলেন, প্রতিটি গরুর দাম দেড়-দুই লাখ টাকা। সহায়-সম্বল বিনিয়োগ করে ও ঋণ নিয়ে খামার তৈরি করেছি। চুরি হয়ে গেলে পথে বসতে হবে। উরকিরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ আবদুল জব্বার সোহেল বলেন, মঙ্গলবার ভোররাতে সাতটি গরু চুরি হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি উদ্ধার করা হয়েছে। আমার ইউনিয়নের প্রতিটি এলাকায় সিসি ক্যামেরা বসানো আছে। ক্যামরার ফুটেজ দেখে চোরের গতিবিধি শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। তাছাড়া প্রতিটি এলাকায় চৌকিদারের মাধ্যমে পাহারা জোরদার করা হয়েছে।
নোয়াপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক জয়নাল আবেদীন বলেন, কাপ্তাই সড়কসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে আমরা নিয়মিত টহল আরও জোরদার করেছি। আমরা ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি চুরি হওয়া গরু উদ্ধার করে মালিকের কাছে বুঝিয়ে দিয়েছি। বাকিগুলো উদ্ধারে পুলিশ তৎপর রয়েছে।