১৮৮২ সালে ব্রিটিশ আমলে চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের বিচারকাজ পরিচালনার জন্য পটিয়ায় মুন্সেফ আদালত প্রতিষ্ঠিত হয়। কালের পরিক্রমায় সেটি এখন যুগ্ম জজ আদালতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু শত বছর পেরিয়ে গেলেও সেই পুরোনো ও জরাজীর্ণ ভবনে এখনো চলছে আদালতের কার্যক্রম। এজলাসের চারদিকে স্যাঁতসেঁতে অবস্থা। ঘুরে বেড়ায় ব্যাঙ, টিকটিকি আর বিষধর সাপও। পুরাতন টিনের ছিদ্র দিয়ে বৃষ্টি আসলে পড়ে পানি। মাঝে মধ্যে সংস্কার হয় কিন্তু নতুন ভবন হয় না। এ অবস্থা চলছে দীর্ঘকাল।
১৯৮৫ সালে এটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে গণপূর্ত বিভাগ। বিকল্প না থাকায় সেই পরিত্যক্ত ভবনেই চলছে আদালতের কার্যক্রম। বিএনপি সরকারের আমলে ১৯৯১ সালে কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু অদৃশ্য কারণে সে সময় ভবন হয়নি। তারপর চলে গেছে আরো প্রায় ৩৭ বছর। হবে, হচ্ছে করে এখনো নতুন ভবন আলোর মুখ দেখেনি।
এখানে মোট আটটি আদালতের কার্যক্রম চলে। পটিয়া যুগ্ম জজ আদালত ছাড়াও প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং অতিরিক্ত আদালত এবং বোয়ালখালী, চন্দনাইশ ও আনোয়ারা আদালত। এসব আদালতে প্রতিদিন প্রায় কয়েক হাজার মানুষ আসা-যাওয়া করে। বিচারাধীন এবং বিচার হয়েছে এমন মামলার গুরুত্বপূর্ণ নথিগুলো একটি টিনের ছাউনি ও টিনের বেড়ার ঘরে ঝুঁকিপূর্ণভাবে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। অনেক সময় উইপোকা আর বৃষ্টির পানিতে নষ্ট হয়ে যায় গুরুত্বপূর্ণ দলিলপত্র। ভোগান্তিতে পড়েন বিচারপ্রার্থী মানুষ।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে এসব আদালতে প্রায় ৫ হাজারেরও অধিক মামলা বিচারাধীন রয়েছে। ২০১০ সালে পটিয়া আইনজীবী সমিতির সংবর্ধনা সভায় যোগ দিতে এসে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ফজলুল হক নতুন ভবন নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। তার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নতুন ভবনের জন্য ২১ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি ছয়তলা ভবন নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় ছাড়পত্র না দেওয়ায় মুখ থুবড়ে পড়ে সে পরিকল্পনা। এ নিয়ে বিচারকাজ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
বিচারপ্রার্থী পটিয়া পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ফজলুল হক বলেন, এত বছরেও কেন এখানে নতুন ভবন নির্মিত হয়নি বুঝতে পারি না। বিচারপ্রার্থীদের মতো আইনজীবী ও বিচারকরাও থাকেন শঙ্কিত।
আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট এ কে এম শাহাজাহান উদ্দিন বলেন, এমন ঝুঁকিপূর্ণ ঘরেই দীর্ঘদিন ধরে আমরা প্র্যাকটিস করে আসছি। অতীতে ১০-১৫ হাজার মামলার নথি নষ্ট হয়েছে। ভবিষ্যতেও নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাছাড়া আট জন বিচারকের জন্য নেই আবাসন ব্যবস্থাও। তাদের ঝুঁকি নিয়ে পাবলিক প্লেসে বাসা নিয়ে থাকতে হচ্ছে। ম্যাজিস্ট্রেট কলোনি নামে বেড়ার একটি পরিত্যক্ত টিনের ঘরে কয়েক জন বিচারক থাকেন।
সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট বদিউল আলম বিচারক, আইনজীবী, বিচারপ্রার্থীদের স্বার্থে অবিলম্বে পটিয়া যুগ্ম জজ আদালত ভবন নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।