তখন পঞ্চম সেমিস্টারের নতুন ক্লাস শুরু হয়েছে। ক্লাসের প্রথম লেকচারে পুরো কোর্সের ধারণা দিয়ে শিক্ষার্থীদের চিন্তা বিকশিত করতে স্যার কোর্সের উপর অ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে বলেলেন, ‘এই বিষয় সম্পর্কিত রিসার্চ পেপার পড়ে ধারণা নিয়ে তোমরা অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করবে। যেন তার ছোটখাটো ভুল সংশোধন করে তোমরা জার্নালে প্রকাশ করতে পারো।’
এর পরে শিক্ষার্থীদের কাজের ছোটখাটো ভুল সংশোধনে স্যারের সহযোগিতা এবং সঠিক দিক নির্দেশনায় অনেক শিক্ষার্থী গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করে। আর এভাবেই তিনি শিক্ষার্থীদের গবেষণার কাজের সঙ্গে সংযোগ করে দেন এবং প্রায়ই তিনি শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দিয়ে বলেন, ‘তোমরা এক সময় অনেক বড় গবেষক হবে।’
শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করা এই শিক্ষক শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মুনশী নাসের ইবনে আফজাল। তাঁর গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজারে এবং পড়াশোনা করেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে। এছাড়াও তিনি ইউনিভার্সিটি ব্রনাই দারুসছালাম থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন এবং পরবর্তীতে অস্টেলিয়ান ইউনিভার্সিটি রিসার্চ ফেলোশিপের আওতায় অর্থনীতিতে পিএইচডি এবং ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়া সাবাহ থেকে অর্থনীতিতে পোস্ট ডক্টরাল ফেলোশিপ অর্জন করে দেশে এসে শাবিপ্রবির অর্থনীতি বিভাগে যোগদান করেন।
ড. মুনশী নাসের ইবনে আফজালের মাধ্যমে গবেষণার কাজ শুরু করেছিল এমন অনেক শিক্ষার্থী এখন দেশের বাহিরের বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষা অর্জনের পাশাপাশি গবেষণার কাজে যুক্ত। তিনিও শিক্ষকতার পাশাপাশি নিয়মিত গবেষণা করেন। এ পর্যন্ত তিনি পঞ্চাশের অধিক গবেষণা প্রবন্ধ, বুক চ্যাপ্টার এবং গবেষণাধর্মী লেখা আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশ করেছেন। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের একাডেমিক জ্ঞান সমৃদ্ধ করবে এমন বইও তিনি লিখেছেন। ইতিমধ্যে তার লেখা সহজ বাংলায় R প্রোগ্রামিং, পাইথন, মেশিন লার্নিং এবং ছোটদের জন্য প্রোগ্রামিং শেখার মতো বেশ কয়েকটা বই লিখেছেন। এছাড়াও তিনি স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের অনলাইনে নিয়মিত প্রোগ্রামিং শেখানোর চেষ্টা করছেন।
এদিকে কিভাবে শিক্ষার্থীরা গবেষণা কাজে যুক্ত হবে, কিভাবে বাহিরের দেশে উচ্চ শিক্ষা অর্জনের জন্য সুযোগ পাওয়া যায় এবং সমসাময়িক বিশ্ব অর্থনীতি বিষয়ে নিয়মিত কথা বলেন; যা তিনি তাঁর ইউটিউব চ্যানেলে (Skill tone) প্রকাশ করেন। ড. মুনশী নাসের ইবনে আফজাল বলেন, ‘আমার অর্জিত জ্ঞান অন্যের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার মাঝেই আমি আনন্দ পাই। এ জন্য শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করতে আমার ভালোলাগে। পাশাপাশি আমাদের শিক্ষার্থীরা শিক্ষাজীবন ও কর্মজীবনে ভালো করছে এমন খবর যখন শুনি, তখন গর্ববোধ হয়।’