শেষ মুহূর্তে দম ফেলারও ফুরসত নেই স্টল নির্মাণে ব্যস্ত শ্রমিকদের। কেউ রং করছেন। কেউ আবার স্টলের সৌন্দর্য বর্ধনে ফুলের টব সাজাচ্ছেন। আবার যেসব স্টল নির্মাণ পুরোপুরি শেষ হয়েছে, সেগুলোতে পণ্য সাজানোর নিয়ে ব্যস্ত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা।
শুক্রবার (৩০ ডিসেম্বর) সরেজমিনে রাজধানীর পূর্বাচলে ২৭তম বাণিজ্য মেলার প্রস্তুতি দেখতে গেলে এমন চিত্রই দেখা যায়। আগামীকাল রবিবার পূর্বাচলে মেলার স্থায়ী প্রাঙ্গণ বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) দ্বিতীয় বারের মতো মাসব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার মেলা উদ্বোধন করা হবে। তার আগে ব্যস্ততার শেষ নেই স্টল বরাদ্দ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর। গতবারের চেয়ে মেলার পরিসরও বাড়ানো হয়েছে। থাকছে শিশু পার্কও। এবার বাণিজ্য মেলা প্রাঙ্গণে ঢোকার সময় আরেকবার মনে করিয়ে দেবে বাংলাদেশ মেট্রোরেলের যুগে প্রবেশ করেছে। কারণ, মেট্রোরেলের আদলেই বানানো হয়েছে মেলার প্রবেশ ফটক।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ কাঞ্চন সেতু থেকে এশিয়ান হাইওয়ে ধরে কিছু দূর এগিয়ে গেলেই পূর্বাচল ৪ নম্বর সেক্টরে বাণিজ্যমেলার এই স্থায়ী প্রাঙ্গণ বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী এক্সিবিশন সেন্টার। এই সেন্টারের ১৪ হাজার ৩৬৬ বর্গমিটার আয়তনের দুটি হলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্যাভিলিয়ন, মিনি প্যাভিলিয়ন ও স্টল বানানো হয়েছে। এছাড়া হলের সামনে, পেছনেও স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গতকাল মেলা প্রাঙ্গণে কথা হলো একটি খাবার স্টলের স্বত্বাধিকারী কবির হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, নির্দিষ্ট সময়ে আগে কাজ শেষ করতে তারা দিনরাত কাজ করছেন। তিনি বলেন, মেলায় কেনাকাটার পাশাপাশি খাওয়া-দাওয়ার প্রতি ক্রেতাদের একটি বড় আকর্ষণ থাকে। বিষয়টি মাথায় রেখেই তাদের স্টলে খাবারের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানান তিনি। কথা হলো—একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার মো. মাসুদের সঙ্গে। এই প্রতিষ্ঠানের স্টল নির্মাণের কাজ শেষে এখন তাদের পণ্য উঠানো হচ্ছে।
মো. মাসুদ জানান, এবার তারা আগেভাগেই তাদের স্টলের কাজ শেষ করেছেন। তিনি বলেন, গত বছর প্রথমদিকে মেলা তেমন জমেনি। কিন্তু শেষের দিকে প্রচুর ক্রেতা-দর্শনার্থীর সমাগম হয়েছে। এবার মেলায় গতবারের চেয়ে ভালো হবে বলে তিনি আশাবাদী।
বাণিজ্য মেলার আয়োজক সূত্র জানিয়েছে, মেলায় এবার ১২টি দেশের প্রতিষ্ঠান অংশ নেবে। এছাড়া স্টলের সংখ্যাও বাড়ছে। গত বছর মেলায় ২২৫টি স্টল থাকলেও এবার থাকছে ৩৩১টি। সাধারণ, প্রিমিয়াম, সংরক্ষিত, ফুডস্টল ও রেস্তোরাঁসহ ১৩ ক্যাটাগরিতে স্টল থাকবে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে অতীতের মতো এবারও থাকবে বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন। এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এবার মেলায় আগত দর্শনার্থীদের যানজটে ভোগান্তি পোহাতে হতে পারে। কারণ, পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে দুই লেন থেকে আট লেনে উন্নীত করার কাজ চলছে। শীতলক্ষ্যায়ও জোড়া সেতু নির্মাণ হচ্ছে। এসব কারণে মেলায় আগতদের যানজটে ভোগান্তি বাড়তে পারে। মেলা আয়োজকদের এ বিষয়টি মাথায় রেখে ব্যবস্থা নিতে হবে। সেইসঙ্গে রাস্তার ধুলাবালি মুক্ত রাখতে যথেষ্ট পরিমাণে পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করতে হবে। তবে মেলায় দর্শনার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে কুড়িল ফ্লাইওভার থেকে বাণিজ্য মেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত মূল সড়কের (৩০০ ফুট) প্রায় ১০ কিলোমিটার অংশ চার লেনে যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে বলে ইপিবি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এছাড়া যাতায়াতের সুবিধার্থে গত বছরের মতো এবারও বিআরটিসির ডাবল ডেকার ৩০টি বাস চলবে। বিশ্বরোড-কুড়িল ফ্লাইওভারের নিচ থেকে বাসগুলো ছাড়বে।
ইপিবি সূত্র জানিয়েছে, বাণিজ্য মেলায় আগতদের গাড়ি রাখার জন্য পার্কিং সুবিধা রাখা রয়েছে। প্রায় আড়াই হাজার গাড়িকে এ সুবিধা দেওয়া যাবে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে মেলা শুরু হয়ে চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। তবে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাত ১০টা পর্যন্ত মেলা খোলা থাকবে। মেলায় প্রবেশে প্রাপ্তবয়স্কদের ৪০ টাকার ও শিশুদের ২০ টাকার টিকেট কাটতে হবে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সচিব ও বাণিজ্য মেলার পরিচালক ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, মেলা আয়োজনের সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। এখন শুধু উদ্বোধনের অপেক্ষা।