শীতের আকাশ রঙিন হয়ে উঠেছিল কাল। সাকরাইন উৎসবের রং মানুষের মনকে যেমন রঙিন করেছে তেমনি আকাশও হয়ে উঠেছিল বর্ণিল। পুরান ঢাকার বাড়ির ছাদে ছাদে চলছিল ঘুড়ি ওড়ানোর ধুম। বাড়ির সদস্যরা তো বটেই এমনকি পাড়া-প্রতিবেশীরাও উঠে এসেছেন ছাদে। কারো হাতে পঙ্খীরাজ, কারো হাতে বোমা, কেউ-বা কাউঠাবাজ, রকঘুড্ডি, গগন্দার ঘুড়ি নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত। চলছে ঘুড়ি কাটকাটিও। গতকাল শনিবার পুরান ঢাকা মেতে উঠেছিল ঐতিহ্যবাহী সাকরাইন উত্সবে। আর তাদের সঙ্গে শামিল হয়েছে ঢাকার নানা প্রান্তের মানুষ।
সাকরাইন উত্সবে ঘুড়ি ওড়ানোই মূল আকর্ষণ। ঘুড়ির যে কত নাম! লাভ, নিউ ইয়ারের পাশাপাশি ছোটদের জন্য ছিল গ্যাস বেলুন, তারাবাতি, মাছের লেজের আকৃতির ঘুড়ি। আরো ছিল চারগোয়া, দুই গোয়া, লাভ, ডাব্বা, গরুর মাথা, নাকবাহার, মুখবাহার, গগন্দার, মতিমহল, সিংহদার, মাজদারসহ আরো হরেক রকমের ঘুড়ি। আর শিশুরা মেতেছিল ছোটা ভিম, মোটুপাতলু, বেনটেইন ঘুড়ি নিয়ে ।
বিকাল গড়িয়ে যখন সন্ধ্যা নামল, তখন পুরান ঢাকার আকাশ ছেয়ে গেল বাহারি সব আতশবাজিতে। এরই মধ্যে তরুণদের কেউ মুখে আগুন নিয়ে নানা কসরত দেখাল। ছিল ডিজে পার্টি।
পুরান ঢাকাবাসী শনিবার সাকরাইন উত্সব উদযাপন করলেও পৌষ সংক্রান্তির ধর্মীয় পর্বটি অনুষ্ঠিত হবে আজ। হিন্দু শাস্ত্রমতে, পৌষ মাসের শেষ দিনে সূর্য উত্তরায়ণের দিকে যাত্রা শুরু করে বলে এই সংক্রান্তিকে উত্তরায়ণ সংক্রান্তিও বলা হয়। শাস্ত্রমতে মানুষের এক বছর দেবতাদের একটি দিন-রাতের সমান অর্থাৎ মানুষের উত্তরায়ণের ছয় মাস দেবতাদের একটি দিন ও দক্ষিণায়নের ছয় মাস দেবতাদের একটি রাত।
তাঁতিবাজারের শ্রীশ্রী জগন্নাথ জিও মন্দিরের সেবায়েত দেবদাস গোস্বামী জানান, দেবতাদের রাত পৌষ সংক্রান্তির দিন শেষ হয় বলে পরবর্তী উদয়ের ব্রাহ্মমুহূর্ত থেকে (গোস্বামী মতে) দেবতাদের দিবা (দিন) শুরু হয়। ঐ সময় স্বর্গবাসী ও দেবলোকের সবার নিদ্রা ভঙ্গ হয় এবং নিত্য ভগবৎ সেবামূলক নানা ক্রিয়া শুরু হতে থাকে বলে হিন্দুরা বিশ্বাস করে। রবিবার সকাল থেকেই শুরু হবে এই আচার-অনুষ্ঠানের পর্ব। পুরান ঢাকার গোয়ালানগর লেনের দুর্গা মন্দিরে ছিল সংক্রান্তি পূজা, স্থানীয়রা যাকে বলছেন ‘বুড়ো বুড়ির পূজা’। এই পূজা মূলত শিব-দুর্গার পূজা, যাকে হরগৌরীর পূজাও বলেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। তারা বিশ্বাস করেন এই দিনে শিব-পার্বতী কৈলাস ছেড়ে ধরাধামে নেমে আসেন।
পুরান ঢাকায় রাধিকা মোহন বসাক লেন, শাঁখারীবাজার, তাঁতীবাজার, ওয়ারীর গৌড়ীয় মঠ, সূত্রাপুরে নর্থব্রুক হল রোড, ঠাঁটারিবাজার, লালবাগসহ বিভিন্ন এলাকায় ‘বুড়ো বুড়ি’ পূজা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি।