নাগপুরে কাল থেকে শুরু হচ্ছে ভারত-অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার চার ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ হওয়ায় সিরিজটি গুরুত্ব পাচ্ছে অনেক বেশি। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে খেলা নিশ্চিত করতে এই সিরিজটি দু’দলের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশ সময় আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টায় শুরু হবে ভারত-অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার প্রথম টেস্ট। ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ জয়ের রেকর্ড অব্যাহত রাখতে চায় ভারত। অন্যদিকে, ২০০৪ সালের পর ভারতের মাটিতে কখনও টেস্ট সিরিজ জিততে না পারার বন্ধ্যাত্ব ঘোচাতে মরিয়া অস্ট্রেলিয়া।
সবসময়ই উত্তেজনায় ঠাসা থাকে ভারত-অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট সিরিজ। এবারও এর ব্যতিক্রম নয়। মাঠে বল গড়ানোর আগেই অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথের ভাষ্য তেমনই প্রমাণ করে। স্মিথের মতে ভারতের মাটিতে টেস্ট সিরিজ জয় অ্যাশেজের চেয়েও অনেক বড়।
২০০৪ সালের পর ভারতের মাটিতে ৪টি টেস্ট সিরিজ খেলে সবগুলোই হেরেছে অসিরা। ভারতের মাটিতে একটি টেস্ট বা সিরিজ জয় বড় চ্যালেঞ্জের সেটিও মনে করিয়ে দিয়েছেন স্মিথ, ‘একটি টেস্ট ম্যাচ জেতার জন্য ভারত কঠিন জায়গা, সিরিজ জয় তো আরও বেশি। যদি আমরা এটি করতে পারি, তা হবে বিশাল অর্জন। আমি মনে করি, ভারতের মাটিতে সিরিজ জয় অ্যাশেজ সিরিজ জয়ের চেয়েও অনেক বড়।’
চাপে থেকেই টেস্ট সিরিজ শুরু করতে হবে অস্ট্রেলিয়াকে। ইনজুরির কারণে দলের দুই সেরা পেসার মিচেল স্ট্রার্ক ও জশ হ্যাজেলউড প্রথম টেস্টে খেলতে পারছেন না।
ভারতের স্পিন বান্ধব উইকেটেও পেস বোলিং বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন অস্ট্রেলিয়াার পেস আক্রমনকে নেতৃত্ব দেওয়া ও দলের অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, ভারতে আসার পর স্পিন উইকেট নিয়ে অনেক বেশি কথা হচ্ছে। বিশেষভাবে দ্রুত গতির টেস্ট ম্যাচে। কিন্তু এটি সবসময় হয় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আপনাকে মাঝে মাঝে আক্রমণাত্মক খেলতে হবে। একজন পেসারকে অনেক বেশি বোলিং করতে হবে, যা কোন পুরস্কারের জন্য নয় বরং দলের জন্য কাজটি করতে হবে।’
স্টার্ক প্রথম টেস্টের জন্য বাদ পড়লেও, পুরো সিরিজে অনিশ্চিত হ্যাজেলউড ও অলরাউন্ডার ক্যামেরুন গ্রিন। বিদেশের মাটিতে প্রথম টেস্ট খেলার জন্য সুযোগ পেতে পারেন পেসার স্কট বোল্যান্ড। একাদশে থাকলে কামিন্সের সঙ্গে বোলিং ওপেন করবেন তিনি।
অস্ট্রেলিয়ার স্পিন বিভাগকে নেতৃত্ব দিবেন নাথান লায়ন। ভারতের মাটিতে ৭ টেস্টে ৩৪ উইকেট আছে তার। তবে বড় পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে কামিন্সের ব্যাটারদের। সর্বশেষ ভারত সফরে দারুন ছন্দে ছিলেন স্মিথ। ব্যাট হাতে তিনটি সেঞ্চুরির ইনিংস খেলেন তিনি। এর মধ্যে রাঁচিতে ১৭৮ রানের ঝলমলে ইনিংসও ছিলো স্মিথের। তবে রানের জন্য ঘাম ঝরাতে হয়েছে ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নারকে। মাত্র একটি ইনিংসে অর্ধশতকের দেখা পান তিনি। সিরিজটি ২-১ ব্যবধানে হারে অস্ট্রেলিয়া।
এবারের সিরিজে উসমান খাজার সঙ্গে ইনিংস শুরু করবেন ওয়ার্নার। দারুন ফর্মে থাকায় স্পিন বোলিংয়ের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন তিনি। নিজেদের সেরা ফর্মের প্রমাণ দিতে এবং ভারতের বোলারদের উপর চাপ সৃষ্টি করতে টপ-অর্ডারে খাজা, স্মিথ, ওয়ার্নার এবং মার্নাস ল্যাবুশেনের দিকে তাকিয়ে থাকবে অস্ট্রেলিয়া।
ইনজুরি নিয়ে অস্ট্রেলিয়া চিন্তায় থাকলেও, ভারতের জন্য সুখবর বয়ে এনেছেন অলরাউন্ডার রবীন্দ্র জাদেজা। ইনজুরি থেকে সুস্থ হয়ে এই সিরিজ দিয়ে দীর্ঘদিন পর আবারও মাঠে ফিরছেন জাদেজা। আরেক স্পিনার রবীচন্দ্রন অশ্বিনের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়াকে বিপদে ফেলার ফাঁদ কষেছেন জাদেজা। দলের এই দুই সেরা স্পিনারের উপর ভরসা রেখে অতীতের মত স্পিন-বান্ধব উইকেট বানিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে ঘায়েলের সব পরিকল্পনা সম্পন্ন করে রেখেছে ভারত। তৃতীয় স্পিনার হিসেবে সুযোগ হতে পারে অক্ষর প্যাটেলের।
২০১৯ সালের নভেম্বরের পর সেঞ্চুরি খড়ায় ভুগছিলেন ভারতের সেরা ব্যাটার বিরাট কোহলি। তবে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ১০২০ দিন পর ২০২২ সেপ্টেম্বরে শতক হাঁকিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সেঞ্চুরি খরা কাটান কোহলি। সেঞ্চুরি খরা কাটিয়ে ব্যাট হাতে নিজের চেনা ছন্দে ফিরেছেন তিনি। ওয়ানডেতে সর্বশেষ চার ইনিংসে তিনটি সেঞ্চুরি করেন কোহলি। টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডের পর টেস্টেও সেঞ্চুরি পেতে উদগ্রীব কোহলি।
আগামী জুনে ওভালে আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিফের ফাইনাল নিশ্চিত করতে ভারতের বিপক্ষে চার টেস্টের মধ্যে ১টিতে ড্র করতে হবে বিশ্বের এক নম্বর অস্ট্র্রেলিয়াকে। ফাইনালের টিকিট পাবার সুযোগ আছে ভারতেরও। এজন্য অন্তত তিনটি ম্যাচ জিততে হবে টিম ইন্ডিয়াকে।