সাত মসজিদ রোডে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে সড়ক বিভাজক বানাচ্ছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। আবার যে সড়ক বিভাজক বানানো হচ্ছে সেটিতে দেড় কিলোমিটার পর ইউটার্ন রাখায় গাড়ির চাপ বেড়েছে। এতে যানজট কমার চেয়ে ভোগান্তি বেড়েছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। অন্যদিকে বিভিন্ন সংগঠন থেকে গাছ কাটার প্রতিবাদ জানালেও রাতের আঁধারে গাছ কাটছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে এই এলাকার যেমন সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে তেমনি দীর্ঘ দূরত্বে ইউটার্ন দেওয়ায় ভোগান্তিও বাড়ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সাত মসজিদ রোডের আবাহনী ক্লাব মাঠের সামনে থেকে জিগাতলার পিলখানা গেট পর্যন্ত সড়ক বিভাজকের কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু আবাহনী ক্লাব মাঠের সামনে একটি ইউটার্ন ও জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের সামনে প্রায় দেড় কিলোমিটার পরে একটি ইউটার্ন দেওয়া হয়েছে। যেখানে এই সড়কে আগে ধানমন্ডি ৩ এর এ, ৭ এর এ, ৯ এর এ, ১০ এর এ ও স্টার কাবারের সামনে পাঁচটি ইউটার্ন ছিল বলে জানায় এলাকাবাসী। তারা বলছে, এত দূরত্বে ইউটার্নের কারণে সড়কের এককেন্দ্রিক গাড়ির চাপ বাড়ছে। সব গাড়ি এখন এক ইউটার্ন ব্যবহার করছে। রিকশাওয়ালা নুর ইসলাম বলেন, আমরা এখন এই রোডে ভাড়া নিয়ে যেতে চাই না সাধারণত। এত ঘুরে আসতে হয়, কিন্তু কেউ ভাড়া বাড়িয়ে দিতে চায় না। এত দূরে কাটা (ইউটার্ন) রাখছে যে, ৫ মিনিটের জায়গায় ২০ মিনিট লাগে ঘুরে আসতে।
এদিকে এই সড়ক বিভাজন তৈরি করতে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে কাজ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গত জানুয়ারি থেকে গাছ কাটা শুরু করে। আগের বিভাজক ভেঙে নতুন বিভাজকের জন্য ঢালাই দেওয়া হয়। তখন ‘সাত মসজিদ রোড গাছ রক্ষা আন্দোলন’ নামে একটি সংগঠন তৈরি করে এলাকাবাসী নানা কর্মসূচি পালন করে। কয়েক মাস বন্ধ থাকার পর গত সোমবার গভীর রাতে আবার শুরু করে গাছ কাটা। এতে বিভিন্ন সংগঠন গাছ কাটার প্রতিবাদ জানিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা) জানায়, বট, বরই, বকুল, কৃষ্ণচূড়া, রাঁধাচূড়া, শিরীষ গাছগুলোর পাশাপাশি সেখানে দেখা যায় বেশকিছু তৃণগুল্ম ও লতা ঝোপ। ফলে এখানে বর্ষাকালে পাখি, পতঙ্গ, সরীসৃপ দেখা যায় যা জীববৈচিত্র্য রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গাছগুলো কোনোভাবেই সড়ক ও নাগরিক নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ নয়, বরং এই গাছগুলোই এতদিন এই সড়ক ও এলাকার সৌন্দর্যবর্ধন করেছে। এসব গাছ রেখেই সড়ক বিভাজকের সম্প্রসারণ ও ‘সৌন্দর্যবর্ধন’ করা সম্ভব।
জানা যায়, উন্নয়ন ও সৌন্দর্যবর্ধনে অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। প্রায় ৯ কোটি ৬২ লাখ টাকার এ প্রকল্পের কাজ পায় অনিকা এন্টারপ্রাইজ। গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে এ বছরের ৩০ জুনের মধ্যে কাজটি শেষ করার কথা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানই রাতের আঁধারে এসব গাছ কাটছে।
এদিকে সড়ক বিভাজকে দাঁড়িয়ে থাকা বাকি গাছগুলো কাটা বন্ধ করতে এবং ইতিমধ্যে যেসব জায়গায় গাছ কেটে ফেলা হয়েছে সেসব জায়গায় দেশীয় প্রজাতির বৃক্ষ রোপণ করার দাবি জানিয়ে ৩৮ নাগরিক ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র বরাবর একটি চিঠি দিয়েছে। এছাড়া গতকাল ‘সাত মসজিদ সড়ক গাছ রক্ষা আন্দোলন কমিটি’ এক সংবাদ সম্মেলনেও একই দাবি জানিয়েছে।
এ বিষয়ে জানার জন্য একাধিকবার দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী সালেহ আহমেদকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে এর আগে গণমাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যে সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলীরা জানান, যেসব গাছ কাটা হয়েছে সে অনুযায়ী নতুন গাছ লাগানো হবে। এছাড়া ট্রাফিক ও সামগ্রিক বিষয় পর্যালোচনা করে যেখানে প্রয়োজন, সেখানে শুধু ক্রসিং রাখা হয়েছে।