গত সোমবার বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলাকালে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে শহরের ছাবেরা খাতুন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী ও দলটির অন্যতম শীর্ষনেতা ফয়জুল করীম চরমোনাই পির সাহেবের উপর হামলার ঘটনা ঘটিয়াছে। প্রযুক্তির সুবাদে দেখা গিয়াছে, এই হামলার সময় একজন যুবক হুমকি-ধমকির পাশাপাশি তাহার আইডি কার্ড প্রদর্শন করিতে থাকেন। এই হট্টগোলের মধ্যে ঐ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ হইয়া যায়। ঐ সময় অনেক ভোটার ভোট না দিয়াই ব্যর্থ মনোরথে ফিরিয়া যান। ঐ যুবকের কী নাম ও পরিচয় তাহা আমরা জানি না। তবে বিভিন্ন টেলিভিশনের খবরে ঘটনার ভিডিও দেখিয়া আমাদের নিকট প্রতীয়মান হইয়াছে, ঐ সময় সেই সেন্টারের পুলিশ ও অন্যান্য দায়িত্বশীল অফিসাররা অসহায় বোধ করিতেছিলেন। কী এক হতাশাজনক ছবি! নির্বাচনে নেতাকর্মীদের উপর হামলা-মারধর-হয়রানি, পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্রে ঢুকিতে না দেওয়া, কেন্দ্র হইতে এজেন্টদের বাহির করিয়া দেওয়া, ভোটারদের ভোটদানে বাধাপ্রদান, জোরপূর্বক অন্যের ভোট দেওয়া ইত্যাদি অভিযোগের ব্যাপারে আলোচনা বা দৃষ্টি আকর্ষণ করিতে হইলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট করিতে হইবে ইহাই স্বাভাবিক। কিন্তু ঐ যুবকের যে বডি ল্যাংগুয়েজ বা শারীরিক ভাষা ছিল তাহা দেখিয়া ঐখানে কোনো প্রশাসনিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোক ছিল বলিয়া আমাদের মনে হয় নাই। বিভিন্ন সময় আমরা বিভিন্ন ঘটনার নিন্দা জানাই। কিন্তু বিনা উসকানিতে, বিনা অপরাধে এহেন অপতত্পরতার নিন্দা জানাইবার ভাষা কী হওয়া উচিত, তাহা আমাদের জানা নাই!
বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণ কেমন হইয়াছে সেই সম্পর্কে আমাদের কোনো মতামত বা বক্তব্য নাই। তবে এই নির্বাচন সম্পর্কে একজন প্রার্থী যাহা বলিলেন তাহা গভীরভাবে ভাবিয়া দেখা প্রয়োজন। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করিয়া দেশবরেণ্য চরমোনাই পির সাহেবকে যেভাবে আক্রমণ করা হইয়াছে, আঘাত দেওয়া হইয়াছে এবং শারীরিকভাবে অপদস্থ ও লাঞ্ছিত করা হইয়াছে, তাহা দেখিয়া ও শুনিয়া নিশ্চিতভাবে দুঃখিত ও হতাশ হইবেন, তাহা যে কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শের লোক হউন না কেন। আমরা যতটুকু জানি, এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করিয়া চরমোনাই পির সাহেব এমন কোনো কথাবার্তা বলেন নাই বা তাহার এমন কার্যকলাপ নাই, যাহা ন্যূনতম উসকানি বলিয়া গণ্য হইতে পারে। বরং তাহার দল নির্বাচনে অংশগ্রহণপূর্বক সরকারকে সহায়তা করিতেছিল। যেইখানে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরাপদ করিতে প্রশাসনিক কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এমনকি প্রতিরক্ষা বাহিনীর সমন্বয়ে টিম কাজ করিতেছিল, তাহার মধ্যে এই ঘটনা শুধু দুঃখজনকই নহে, চরম হতাশাজনকও। এমন নিরাপত্তা ব্যূহ ভেদ করিয়া তাহার উপর আক্রমণ করা কীভাবে সম্ভব হইল? কীভাবে তাহার মুখে আঘাত দিয়া রক্তাক্ত করা হইল? ইহার উপরে ক্ষমতাসীনদের রহিয়াছে দুর্নীতি ও অনিয়ম। এই পরিস্থিতিতে ঐ সকল দায়িত্বরতদের ‘ব্যূহ’ ভেদ করিয়া একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা কতটা সম্ভব এই প্রশ্ন আজ দেখা দিয়াছে সংগত কারণেই।
অতি উত্সাহী যাহারা এই ন্যক্কারজনক অপকর্ম করিয়াছে, তাহাদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করিতে হইবে। এই দুষ্কৃতকারীরা শুধু বরিশাল অঞ্চলেই নহে, সমগ্র দেশে ত্রাস সৃষ্টি করিয়া চলিয়াছে। তাহারা একটি লাঠিয়াল বাহিনীতে পরিণত হইয়াছে। তাহাদের দৌরাত্ম্যে সারা দেশের মানুষ অস্থির ও অতিষ্ঠ। পার্শ্ববর্তী দেশে আমাদের পার্শ্ববর্তী রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে যেইভাবে দাঙ্গা-হাঙ্গামা, লাঠির ব্যবহার চলিতেছে, তাহা বর্ণনাতীত। কিন্তু ইহার শেষ কোথায়? কমিউনিস্ট পার্টির দীর্ঘ জামানায় যেইভাবে ডান্ডা মারিয়া মানুষকে ঠান্ডা করিবার ব্যবস্থা ছিল, তাহার প্রতিফলন ঘটিয়াছে বর্তমান রাজনীতিতে। পশ্চিমবঙ্গে লালবাহিনীর ব্যর্থতায় উত্থান হইয়াছে তৃণমূল কংগ্রেসের। কেননা জুলুম-অত্যাচার কখনোই চিরদিন থাকে না, থাকিতে পারে না।
আমরা বলিতে চাই, এই ধরনের অন্যায় কার্যকলাপ কোনো বিশ্লেষণেই ক্ষমতাসীনদের পক্ষে আসিতে পারে না। সর্বোচ্চ সতর্কতার এখনই সময়। এই জন্য এই ঘটনায় শুধু নিন্দা প্রকাশ বা ভর্ত্সনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকিলে চলিবে না। দেশবাসী দেখিতে চাহে, এই হামলার সহিত জড়িতদের বিরুদ্ধে সরকার সত্যিকারে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করিয়াছেন।