ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মালিকানায় মোট ৪৩টি মার্কেট রয়েছে। এর মধ্যে ২০টিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে সংস্থাটি। আর ৯টি মার্কেট পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এই ৯ মার্কেটে লাল নিশান ঝুলিয়ে দিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। এরপরও দীর্ঘদিন ধরে এসব মার্কেটে বেচাকেনা করছেন ব্যবসায়ীরা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা মার্কেটে দোকান পরিচালনা করছেন। এখন সেই ৯টি মার্কেট ভাঙ্গার উদ্যোগ নিয়েছে সিটি করপোরেশন। ইতিমধ্যে মার্কেটগুলো ভাঙ্গতে প্রক্রিয়া শুরু করেছে তারা।
ভেঙে ফেলার অভিযান পরিচালনা করতে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যেই এই অভিযান শুরু হবে বলে জানিয়েছে উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা।
তিনি বলেন, মানুষের জীবন আগে, পরে ব্যবসা। ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটে আর কেউ থাকবে না। আমরা তাদেরকে (ব্যবসায়ী) মার্কেটগুলো ছেড়ে দিতে বলব। তারা যাতে নিরাপদে মালামাল নিয়ে চলে যেতে পারে সে ব্যাপারে আমরা সহযোগিতা করব। আমরা ইতিমধ্যে ভবনগুলো ভাঙ্গার জন্য ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করেছি। পর্যায়ক্রমে এগুলো কয়েকদিনের মধ্যে ভাঙ্গা শুরু হবে। যারা এই মার্কেটগুলোতে বরাদ্দপ্রাপ্ত তাদের বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে অন্যত্র ব্যবস্থা করে দেওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাউকেই দোকানদারি করতে দেওয়া হবে না বলেও তিনি জানান।
ডিএনসিসির আওতাভুক্ত যে ৯টি মার্কেট ভাঙার তালিকায় রয়েছে সেগুলো হলো- গুলশান (উ.) কাঁচা মার্কেট, গুলশান (দ.) পাকা মার্কেট, গুলশান (দ.) কাঁচা মার্কেট, মোহাম্মদপুর কাঁচাবাজার (১ম ও ২য় তলা), কাওরান বাজার ১ ও ২ নম্বর মার্কেট, কাওরান বাজার কিচেন মার্কেট, কাঁচামালের আড়ত ও রায়েরবাজার কাঁচাবাজার। এই ৯ মার্কেটে বরাদ্দ দেওয়া দোকানের সংখ্যা ৩ হাজার ৮৭৪। এই মার্কেটগুলোর বেশিরভাগেই গিঞ্জি পরিবেশে দোকান পরিচালনা করা হচ্ছে। ভবনগুলো একেবারে জীর্ণশীর্ণ। দেওয়াল ও ছাদের আস্তরণ ভেঙে পড়ছে। কোথাও কোথাও ইট বেরিয়ে এসেছে।
এই ৯টি ছাড়াও ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটের তালিকায় রয়েছে খিলগাঁও তালতলা সুপার মার্কেট, গুলশান (উ.) পাকা মার্কেট, গাবতলীর প্রান্তিক সুপার মার্কেট, মোহাম্মদপুর টাউন হল মিলনায়তন কাম শপিং কমপ্লেক্স, মোহাম্মদপুর রিং রোড পাকা মার্কেট, কারওয়ান বাজার মুরগির শেড, কারওয়ান বাজার মৎস্য আড়ত (অস্থায়ী), কারওয়ান বাজার কর্মকার শেড, কারওয়ান বাজার কাঁচা মার্কেটের চারপাশের মার্কেট ও কলমিলতা মার্কেট। জানা গেছে, ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় ২০০৯ সালে তত্কালীন ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) নিউ মার্কেট, চন্দ্রিমা মার্কেট ও কাওরান বাজারসহ বেশ কয়েকটি মার্কেটের অবস্থা বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিশেষজ্ঞ দল দিয়ে পরীক্ষা করায়। তখন এই মার্কেটগুলো ভেঙে ফেলতে অথবা মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে আরও ৫০ বছর নিরাপদে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলার পক্ষে মত দেন তারা। তাদের পরামর্শের আলোকে ঠিকাদার নিয়োগ দিলেও ভবনগুলো শক্তিশালী করার কাজ শেষ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। বুয়েটের পরামর্শের আলোকে ২০১৩ সালে কাওরান বাজার কিচেন মার্কেট মেরামতের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু নানা জটিলতায় সেই কাজ শেষ হয়নি। পরে ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি মার্কেটটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে ডিএনসিসি। এভাবে ভাঙার তালিকায় থাকা মার্কেটগুলো ঝুঁকিহ্রাস করে ব্যবহার উপযোগী করতে না পারায় বিভিন্ন সময় পরিত্যক্ত ঘোষণা করে ডিএনসিসি।