খেলাপি কমাতে তিন বছর মেয়াদি রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও মো. আফজাল করিম। তিনি বলেছেন, ব্যাংক খাতের বড় বিষফোড়া হচ্ছে খেলাপি ঋণ। অন্যান্য ব্যাংকের মতো সোনালী ব্যাংকেও খেলাপি ঋণের সমস্যা ছিল। তবে বর্তমানে খেলাপি ঋণ আনুপাতিক হারে কমে আসছে। গত বছরের আগস্টে সোনালী ব্যাংকে যোগদান করেন মো. আফজাল করিম। এর মধ্যে বেশ কিছু সূচকে ব্যাংকটির ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। ব্যাংকটির সার্বিক অবস্থা ও ব্যাংক খাতের নানা দিক নিয়ে ইত্তেফাকের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।
রাষ্ট্রায়ত্ত এই বৃহত্ ব্যাংকের বর্তমান অবস্থা নিয়ে তিনি বলেন, ‘খেলাপি যাতে না বাড়ে সেদিকে জোর দিয়েছি। এখন ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমেছে। ২০২১ সালে মোট বিতরণ করা ঋণের মধ্যে ১৭ দশমিক ৩২ শতাংশ ছিল খেলাপি ঋণ। সেটি ২০২২ সালে ১৪ দশমিক ৩৮ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। আগের বছরের তুলনায় ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে, তবে সেই অনুপাতে খেলাপি ঋণ বাড়েনি। আমি দায়িত্ব গ্রহণ করার পর তিন বছরের জন্য একটি রোডম্যাপ তৈরি করেছি। আগামী তিন বছরের মধ্যে, অর্থাত্ ২০২৬ সাল নাগাদ সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ সিঙ্গেল ডিজিটে নিয়ে আসা হবে।’
ব্যাংক খাতে তারল্যসংকট নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ঈদের সময় ব্যাংকগুলোতে টাকার চাহিদা বেড়ে যায়। স্বাভাবিকভাবে এ সময় টাকার সরবরাহ বাড়ে। টাকার চাহিদা বাড়লে কলমানিতে সুদের হার বেড়ে যায়। কিন্তু এবার রমজানের ঈদের আগের দিন কলমানিতে সুদের হার সাড়ে ৬ শতাংশের নিচে ছিল।
মূলধন ঘাটতি কমছে :অন্যান্য ব্যাংকের মতো সোনালী ব্যাংকেরও মূলধনে ঘাটতি আছে। ২০২১ সালে ৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতি ছিল। ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে তা ৫ হাজার ১০০ কোটি টাকায় নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে। অর্থাত্, ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা মূলধন ঘাটতি কমানো সম্ভব হয়েছে।
আমানত ও ঋণ বিতরণ বেড়েছে :২০২১ সালে সোনালী ব্যাংকে মোট আমানতের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে আমানতের স্থিতি দাঁড়ায় ১ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা। এক বছরে ব্যাংকটিতে আমানত বেড়েছে ৮ হাজার কোটি টাকা। অন্যদিকে ব্যাংকের ঋণ বিতরণের পরিমাণ বেড়েছে। ২০২১ সাল শেষে মোট ঋণের স্থিতি ছিল ৬৯ হাজার কোটি টাকা। আর ২০২২ সাল শেষে দাঁড়িয়েছে ৮৪ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। ফলে আমানত ও ঋণ—দুটিরই প্রবৃদ্ধি রয়েছে। স্মার্ট ব্যাংকিংয়ে সোনালী ব্যাংক :ডিজিটাল ব্যাংক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০২০ সালে সোনালী ই-সেবা অ্যাপ চালু করা হয়েছে। দেশের সবচেয়ে বড় এই ব্যাংকের সব শাখা এখন অনলাইন। সোনালী ই-ওয়ালেটের মাধ্যমে গড়ে প্রতিদিন ৬ হাজার ট্রানজেকশন হচ্ছে।
ব্যাংকের নেট ইন্টারেস্ট মার্জিন পজেটিভ হয়েছে :সোনালী ব্যাংকের নেট ইন্টারেস্ট মার্জিন (নিম) ছিল নেগেটিভ। ২০২১ সালে ব্যাংকের নিম ছিল ৯৮৯ কোটি টাকা (নেগেটিভ), যেখানে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এসে দাঁড়িয়েছে ৩৩৩ কোটি টাকা (পজিটিভ), যা সোনালী ব্যাংকের ইতিহাসে প্রথম নিম পজেটিভ হলো।