চট্টগ্রামে লাইসেন্সবিহীন ওষুধের দোকানের ছড়াছড়ি দেখা যাচ্ছে। নগরী ও জেলার বিভিন্ন স্থানে হাজারো অবৈধ ওষুধের দোকানে মানুষের প্রয়োজনীয় ওষুধ বিক্রি হচ্ছে। এসব দেখভালে সরকারি তদারকি নেই, তাই বাড়ছেই ওষুধের দোকান। শুধুমাত্র ট্রেড লাইসেন্স থাকলেই ওষুধের দোকান দেওয়া যায়। এভাবে দোকান দেওয়ায় সরকার বছরে প্রচুর রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
চট্টগ্রামে ওষুধ প্রশাসন কার্যালয় জানায়, চট্টগ্রামে প্রায় ১৩ হাজার ওষুধের দোকানের লাইসেন্স রয়েছে। অথচ বাস্তবে দ্বিগুণের বেশি দোকান। লাইসেন্স আছে এমন মডেল দোকান ১২টি। আবার ৪০ শতাংশ দোকান লাইসেন্স নবায়ন করেনি। চট্টগ্রাম ঔষধ প্রশাসন কার্যালয়ে পদ রয়েছে ছয়টি, কিন্তু কর্মরত রয়েছেন মাত্র একজন সহকারী পরিচালক, বাকি সব পদ শূন্য।
জনবল সংকটে মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রম চালানো যাচ্ছে না। ফলে দোকানগুলোতে মেয়াদোত্তীর্ণ, নকল ও ভেজাল ওষুধ বিক্রির সম্ভাবনা থাকে বলে অভিযোগ। ভেজাল ওষুধ জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি।
আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর অভিযানে দোকানে নানা অনিয়ম দেখা যাচ্ছে। এসব অনিয়মের জন্য ওষুধ প্রশাসনের লোকদের গাফেলতিকে দায়ী করা হচ্ছে। র্যাব ও জেলা প্রশাসন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযানে অনেক নামীদামী ওষুধের দোকানে অনিয়ম ধরা পড়ছে।
ওষুধের দোকানের সংশ্লিষ্টরা বলেন, আবেদনের পর লাইসেন্সের চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে পদে পদে হয়রানির শিকার হতে হয়। হয়রানি ও বাড়তি টাকা খরচের কারণে লাইসেন্সের আবেদন করে না অনেকে। এভাবে লাইসেন্স ছাড়াই বছরের পর বছর ধরে চলছে ওষুধ বেচাকেনা। নবায়ন না করে বছরের পর বছর ফার্মেসি চালানো হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দোকানের জন্য লাইসেন্স নিতে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট হতে হয়। কিন্তু দেশে পর্যাপ্ত গ্র্যাজুয়েটধারী না থাকায় ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্টদের নামে লাইসেন্স প্রদান করা হচ্ছে। তবে সম্প্রতি তৃতীয় ক্যাটাগরি হিসেবে সার্টিফিকেটধারীদের নামেও লাইসেন্স প্রদান করা হচ্ছে বলে ওষুধ প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান। সার্টিফিকেটধারীদের মনোনীত করেন ওষুধ ব্যবসায়ী সমিতি। লাইসেন্স নিতে আগ্রহী ব্যক্তিদের সমিতির নির্ধারিত ফর্মে আবেদন করে ভর্তি হতে হয়। আবেদনকারীদের ন্যূনতম এসএসসি পাশ হতে হয়। সমিতি অভিজ্ঞ লোকদের মাধ্যমে সপ্তাহে এক দিন করে ক্লাস নেন। পরে ২০০ নম্বরের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষায় ১০০ নম্বর পেলে উত্তীর্ণ হিসেবে সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। তা দিয়ে সি- ক্যাটাগরির লাইসেন্সের আবেদন করা যায়। ঔষধ প্রশাসন কার্যালয় সূত্র জানায়, দোকানের লাইসেন্সের জন্য অনলাইনে আবেদন করা হয়। এতে নতুন লাইসেন্সের জন্য ২ হাজার ৫০০ টাকা এবং ১৫ শতাংশ ভ্যাট জমা দিতে হয়। আর ২ বছর পরপর লাইসেন্স নবায়ন করতে হয়। নবায়ন ফি হলো এক হাজার ৮০০ টাকা এবং ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রদান করতে হয়।
জানতে চাইলে ওষুধ প্রশাসন চট্টগ্রাম কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সাখাওয়াত হোসেন রাজু আকন্দ ইত্তেফাককে বলেন, লাইসেন্সের জন্য কেউ আবেদন করলে আমরা সরেজমিনে পরিদর্শন করে রিপোর্ট প্রদান করি। লাইসেন্সের জন্য জেলা কমিটির সুপারিশ অধিদপ্তরে পাঠানোর পর লাইসেন্স অনুমোদন পাওয়া যায়। জনবল সংকটে মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।