কেন্দ্রগুলো থেকে কেনা দামের চেয়ে কম মূল্যে বিদ্যুৎ বিক্রি করে চার মাসে ১৭ হাজার ৭৬৩ কোটি টাকা ঘাটতিতে পড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। গত এপ্রিল থেকে জুলাই-এ চার মাসে এ পরিমাণ ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এখন ঘাটতি দূর করতে সরকারের কাছে ভর্তুকি চেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
গত নভেম্বরে পিডিবি বিদ্যুৎ বিভাগে এ সংক্রান্ত চিঠি দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভর্তুকি হিসেবে আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করতে বিদ্যুৎ বিভাগ অর্থ বিভাগকে একটি চিঠি দেয় গত ১১ ডিসেম্বরে।
বিদ্যুৎ বিভাগের উপসচিব সাইফুল ইসলাম আজাদ স্বাক্ষরিত ঐ চিঠিতে বলা হয়, ক্রয় মূল্যের চেয়ে কম দামে বিদ্যুৎ বিক্রি করায় চার মাসের মূল্যহার ঘাটতি ১৭ হাজার ৭৬৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। বিদ্যুৎ বিক্রি থেকে গত এপ্রিল মাসে পিডিবির ঘাটতি ৪ হাজার ১৮৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। মে, জুন ও জুলাই মাসে সংস্থাটির ঘাটতি ১৩ হাজার ৫৮০ কোটি ১১ লাখ টাকা। বেসকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর (আইপিপি, রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল) এবং ভারত থেকে আমদানিকৃত বিদ্যুতের দাম যথাসময়ে পরিশোধ ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে প্রস্তাবিত চার মাসের মূল্যহার ঘাটতির টাকা ভর্তুকি হিসেবে দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, উৎপাদকদের কাছ থেকে বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনে কম দামে বিতরণ কোম্পানিগুলোর কাছে বিক্রি করে এ লোকসান বা ঘাটতির ধারা চলছে দীর্ঘদিন ধরে। বিশ্ববাজারে তেল-গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি এবং মার্কিন ডলারের মূল্যমান বাড়ায় ঘাটতির পরিমাণ আরো বেড়ে চলছে। গত আগস্ট থেকে নভেম্বর এ চার মাসেও বিপুল পরিমাণ ঘাটতি তৈরি হয়েছে। বেসরকারি কেন্দ্রগুলোর বকেয়ার পরিমাণ বেড়েই চলছে। অর্থ ঘাটতির কারণে কেন্দ্রগুলোর বিল পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছে পিডিবি। তাই সরকারের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। ঐ কর্মকর্তা আরো বলেন, সম্প্রতি বিদ্যুতের পাইকারি মূল্য বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে ঘাটতি কমবে। এর ফলে গ্রাহক পর্যায়ে খুচরা মূল্যবৃদ্ধির প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। সরকার বিদ্যুৎ-জ্বালানিতে ভর্তুকি প্রদান থেকে সরে আসছে। তাই দাম না বাড়িয়েও উপায় নেই।
সে ধারাবাহিকতায় বিদ্যুতের খুচরা দাম নির্ধারণ করতে আগামী ৮ ও ৯ জানুয়ারি শুনানি ডেকেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। ঐ শুনানির পর গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা আসবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বিইআরসিতে জমা হওয়া আবেদনগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ছয়টি বিতরণ কোম্পানির গড়ে প্রায় ২৩ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধির আবেদন করেছে।
সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ গ্রাহকদের সংস্থা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) তাদের লোকসান সমন্বয়ের জন্য প্রতি ইউনিট (কিলোওয়াট) বিদ্যুতের দাম ২০ দশমিক ২৯ শতাংশ হারে ১ টাকা ৩৫ পয়সা বৃদ্ধির আবেদন করা করেছে। পিডিবি ১৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ হারে দাম বাড়ানোর আবেদন করেছে।
এদিকে বিদ্যুৎ খাত সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, দেশে যে হারে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হয়েছে ও হচ্ছে সে হারে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে না। ফলে ক্যাপাসিটি চার্জসহ নানা অপব্যয়ের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ ও দাম বেড়ে যাচ্ছে। ঘাটতি বন্ধ করতে হলে এ অপব্যয়গুলোও বন্ধ করতে হবে।