ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বানিয়াকন্দর গ্রামের যমজ দুই ভাই মো. হানজিলার রহমান ঠান্ডু ও তানজিলার রহমান মন্টু। তবে এলাকায় ঠান্ডু ও মন্টু নামেই তারা পরিচিত। তাদের এক মন, এক প্রাণ। জন্মের পর থেকে তাদের জীবনযাপনও একই ধরনের।
গতকাল বুধবার ইত্তেফাকের এই প্রতিনিধির সঙ্গে তাদের বাড়িতে বসে আলাপকালে জানান, ১৯৬২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তাদের জন্ম। ছোট বেলায় মা একথালায় দুই যমজ সন্তানকে খাওয়াতেন। বাবা একই রকম জামা কাপড় কিনে দিতেন। দুই ভাই একসঙ্গে কৃষ্ণপুর প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৭৭ সালে আহসাননগর হাইস্কুল থেকে দুই ভাই এসএসসি পাশ করেন। ঠান্ডু পান ৪৪২ নম্বর, আর মন্টু পান ৪৪৪ নম্বর। ঐ বছর দুই ভাই ঝিনাইদহ কেসি কলেজে ভর্তি হন।
১৯৭৯ সালে এইচএসসি ও ১৯৮১ সালে দুই ভাই ডিগ্রি পাশ করেন। ৮১ থেকে ৮৫ সাল পর্যন্ত তারা বাড়িতে কৃষি কাজ করতেন। আবার ১৯৮৬ সালে ৮ এপ্রিল দুই ভাই একসঙ্গে পরিসংখ্যান বিভাগে জুনিয়র অফিস সহকারী পদে চাকরিতে যোগদান করেন। ঢাকা, যশোর ও ঝিনাইদহে একই অফিসে দুই জনে চাকরি করেছেন। আবার ফরিদপুর, শার্শা, কুষ্টিয়া ও শরিয়তপুরে দুই ভাই পৃথকভাবে চাকরি করেছেন। চাকরি জীবনের বেশির ভাগ সময়ে একই অফিসে চাকরি করেছেন। যখন পৃথক থাকতে হতো তখন তাদের খুব খারাপ লাগত বলে জানান তারা। ছোট বেলায় পড়াশুনা প্রসঙ্গে বলেন, এক সেট বই দুই ভাই পড়তেন। তখন বিদ্যুতের আলো ছিল না। দুই ভাই সামনে বই রেখে হারিকেন জ্বালিয়ে পড়াশুনা করতেন। ডিগ্রি পর্যন্তও এক সেট বইতে দুই জনে পড়তেন। দুই ভাই এক সঙ্গে চলাফেরা করেন। একই রকম জামা, প্যান্ট ও জুতা পরেন।
২০২০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি একই দিনে চাকরি থেকে অবসর নেন। বাড়ি ফিরে একেক ভাই পাঁচ বিঘা করে পৈতৃক জমি পান। আবার চাষাবাদ শুরু করেন। দুই জনে এক রকম ডিজাইনে বাড়ি করেছেন। বাড়ির সামনে কয়েকটি গাছ ছিল, তা কেটে ফাঁকা করেন। সেখানে সবজি চাষ শুরু করেন। এরপর দুই ভাই চিন্তাভাবনা করে ছোট পরিসরে ৬০ শতক জমির ওপর পার্ক স্থাপন করেন। নাম দেন ঠান্ডু-মন্টু ফ্যামিলি পার্ক। এ পার্কে কোনো প্রবেশমূল্য নেওয়া হয় না। এ পার্ক তৈরিতে ১৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। কিছু জীবজন্তুর ভাস্কর্য আছে। দোলনা ও ঢেঁকি আছে। এখনো পরিপূর্ণভাবে গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। তারা পাঁচ ভাই ও তিন বোন। হানজিলার রহমান ঠান্ডুর দুই ছেলে ও তিন মেয়ে। আর তানজিলার রহমান মন্টুর তিন মেয়ে। বাবা বিশারত আলি মারা গেছেন। মা এখনো বেঁচে আছেন।
গ্রামবাসী বলেন, ঠান্ডু-মন্টু দেখতে একই রকম ও একই রকম পোশাক পরেন। অনেক সময় চিনতে ভুল হয়। পার্ক স্থাপন করায় মানুষ খুব খুশি। অনেক লোকে পার্কে বেড়াতে আসেন। ঝিনাইদহ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আব্দুর রশিদ বলেন, তিনি যখন বেড়বাড়ি জুনিয়র হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন, ঠান্ডু-মন্টু ঐ স্কুলের ছাত্র ছিল। ৮ম শ্রেণিতে পরীক্ষায় দুই ভাই সমান নম্বর পায়। তখন ছোট ভাই মন্টুকে প্রথম করা হয়েছিল। তারা গ্রামের মধ্যে ছোট পরিসরে পার্ক তৈরি করে মানুষের বিনোদনের ব্যবস্থা করেছে।