দেউলিয়াত্ব থেকে বাঁচার লড়াইয়ে থাকা পাকিস্তানে যা যা হচ্ছে


আইএমএফের সঙ্গে ১০ দিনের আলোচনাকে ‘বিরাট পেরেশানি’ হিসেবে বর্ণনা করে পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী। তিনি পার্লামেন্টে বলেন, তাদেরকে কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। নইলে দেশের অর্থনীতি আরও তলানিতে নামবে।

পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী যদিও বলেছেন, তার দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে, সেটা এখনও সরকারের সুস্পষ্ট অর্থনৈতিক ঘোষণা নয়। দেশ যে ‘গর্তে’ পড়তে যাচ্ছে, তারই প্রভাব হয়ত তার কথায়।

তবে পাকিস্তানের অর্থনীতি যে সত্যিই খাদের কিনারে পৌঁছেছে, তাতে কারো সন্দেহ নেই। আতঙ্ক, উদ্বেগ জেঁকে বসেছে দেশটির মানুষদের মধ্যে। মূল্যস্ফীতিতে উঠেছে নাভিশ্বাস। ধস নেমেছে পুঁজিবাজারে।

২০২১ সালের জুনে পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জে সূচক ছাড়িয়েছিল ৪৮ হাজার পয়েন্ট। সেটা নেমেছে ৪০ হাজারে এবং ক্রমাগত নামছেই।

এ পরিস্থিতিতে দেশটি তাকিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের দিকে। আর ঋণ নিশ্চিত করতে পূরণ করতে হচ্ছে একের পর এক শর্ত। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমিয়ে দেওয়ায় দাম বেড়েছে ব্যাপকভাবে। ডলার সংকটে খাদ্যপণ্য ও জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জামের আমদানিও বন্ধ হওয়ার দশা।

এর মধ্যে সোমবার দেশটির জাতীয় পরিষদে একটি সম্পূরক অর্থবিল পাস করা হয়েছে। তাতে আরও করের চাপ চাপতে যাচ্ছে জনগণের ওপর।

আগামী সাড়ে চার মাসের মধ্যে শাহবাজ শরিফ সরকার নতুন করে রাজস্ব হিসেবে ১৭ হাজার কোটি রুপি বাড়তি আদায় করতে চায়। এটা করতে হচ্ছে আইএমএফের শর্ত পূরণ করতে।

দেশটির বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ যদিও গত সপ্তাহে কিছুটা বেড়ে তিন বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে, তার পরও দেশটির রেটিং কমিয়ে দিয়েছে আন্তর্জাতিক ঋণমান এজেন্সি ফিচ। তাদের বিবেচনায় পাকিস্তান এই মুহূর্তে ‘খেলাপি হওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে’ আছে।

হাতে থাকা তিন বিলিয়ন ডলারে কেবল ১৬ থেকে ১৭ দিনের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। এরপর শ্রীলঙ্কার মত পরিণতি যেন না হয়, সেজন্য গত কয়েক মাস ধরে আইএমএফের কাছ থেকে ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ পাওয়ার চেষ্টা করছে পাকিস্তান। এ নিয়ে নয় দফার বৈঠকেও কর্মকর্তা পর্যায়ের কোনো চুক্তিতে পৌঁছাতে পারেনি দুই পক্ষ।



ওই ঋণের প্রথম কিস্তির ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়ের আশায় উদগ্রীব হয়ে আছে পাকিস্তান। দেশটি আশা করছে, আইএমএফের ঋণ পাওয়া গেলে বন্ধু রাষ্ট্রগুলো থেকেও সহায়তা আসবে।

এই ঋণ পাওয়ার আশায় গত ৩১ জানুয়ারি থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টানা ১০ দিন আইএমএফের সঙ্গে আলোচনা চালিয়েছে দেশটির সরকার। তবে চূড়ান্ত ঐকমত্য হয়নি।

আইএমএফ জানিয়েছে, তাদের আলোচনা এখনও ভেস্তে যায়নি। চুক্তি চূড়ান্ত করতে আগামী দিনেও আলোচনা চালু থাকবে।

আইএমএফ থেকে ঋণ যদি মেলেও, তারপরও পুরোপুরি স্বস্তিতে থাকতে পারছে না পাকিস্তান। কারণ চলতি বছর যে পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করতে হবে, সেই পরিমাণ ডলার জোগাড় করা কঠিন হয়ে যাবে দেশটির জন্য। এক হিসাব অনুযায়ী আগামী ১২ মাসে ২২ বিলিয়ন ডলার কিস্তি পরিশোধ করতে হবে পাকিস্তানকে।

আইএমএফের ঋণ নিশ্চিত করতে তাদের শর্ত পূরণে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী ইসহাক দার জাতীয় পরিষদে সম্পূরক অর্থবিল উত্থাপন করেন। দুই দিন পর থেকে শুরু হয় আলোচনা।

আইএমএফের সঙ্গে ১০ দিনের আলোচনাকে ‘বিরাট পেরেশানি’ হিসেবে বর্ণনা করে পার্লামেন্টে অর্থমন্ত্রী বলেন, তাদেরকে কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। নইলে দেশের অর্থনীতি আরও তলানিতে নামবে।

তার দাবি, তারা যে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় করতে চাইছেন, তা দেশটির গরিব মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে না। এটি কেবল বিলাস দ্রব্য আমদানি ও বিক্রির ওপর থেকে নেওয়া হবে। গরিব মানুষকে সহায়তা করতে ‘বেনজীর ইনকাম সাপোর্ট প্রোগ্রাম’-এ বরং ৪ হাজার কোটি রুপি দেওয়ার প্রস্তাবও করেছেন তিনি।

বিদ্যুৎ খাতে বছরে ১ লাখ ৪৫ হাজার কোটি রুপি লোকসানকে ‘পাহাড়চুম্বি’ হিসেবে বর্ণনা করেন ইসহাক দার। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আইএমএফও উদ্বেগ জানিয়েছে।

সরকার বিদ্যুৎ খাতে বছরে তিন লাখ কোটি রুপি খরচ করে কেবল এক লাখ ৫৫ হাজার কোটি আয় করে বলেও জানান তিনি। এই খাতে চুরি, কম দামে বিক্রি, সিস্টেম লস ও খেলাপি বিলের কারণে বাকি অর্থ লোকসান হয়।

পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী জানান, এই লোকসান কমিয়ে আনার বিষয়ে পার্লামেন্টের দুই কক্ষেই আলোচনা হয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এ বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্ট পথনকশা ঘোষণা করবেন।

দেশটির এই পরিস্থিতির জন্য এর আগের ইমরান খান সরকারের ‘দুর্বল ব্যবস্থাপনা’ এবং ‘আর্থিক খাতে শৃঙ্খলার অভাব’কেও দায়ী করেন ইসহাক দার।

ইমরান খানের পিটিআই সরকার আইএমএফকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করে পতনের আগে ‘অর্থনীতিতে নাশকতা’ করেছে বলে অভিযোগ বর্তমান অর্থমন্ত্রীর। তিনি বলেন, আইএমএফের সঙ্গে চুক্তি রক্ষা করা রাষ্ট্রীয় বাধ্যবাধকতার বিষয় ছিল। সেটি না করায় বর্তমান সরকারকেই তা করতে হচ্ছে।

বিলে কী আছে

সম্পূরক অর্থ বিলে দুটি ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সিগারেটের উপর আবগারি শুল্ক বাড়ানো এবং সাধারণ বিক্রয় কর হার ১৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৮ শতাংশ করা হয়েছে। সংবিধিবদ্ধ নিয়ন্ত্রক আদেশের মাধ্যমে এই ব্যবস্থা এরই মধ্যে কার্যকর হয়েছে৷ এই দুটি ব্যবস্থা থেকে ১১ হাজার ৫০০ কোটি রুপি আয় হবে বলে আশা করছে দেশটির সরকার।

বিক্রয় কর বা জিএসটি এক শতাংশ বাড়লেও বিলাস দ্রব্যের ক্ষেত্রে তা বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করে দেওয়া হয়েছে। মোট ৩৩টি খাতে বিক্রয় কর ১৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। দামি মোবাইল ফোন, আমদানি করা খাদ্য, সাজসজ্জার উপকরণ ও বিলাস দ্রব্য বিক্রির ওপর থেকে এই বাড়তি আয় করা হবে।

উড়োজাহাজে প্রথম শ্রেণি ও বিজনেস ক্লাসে ৫০ হাজার রুপির ওপর ভাড়ায় ২০ শতাংশ ফেডারেল এক্সাইজ ডিউটি আরোপ করা হয়েছে। এই খাত থেকে বাড়তি এক হাজার কোটি রুপি আসবে বলে আশা করছেন অর্থমন্ত্রী।



বিয়ের হল, হোটেল-রেস্টুরেন্ট বা বাণিজ্যিক অবকাশযাপন কেন্দ্র, ক্লাব বা অন্য কোথাও কোনো আয়োজনের ওপর আরোপ করা হয়েছে ১০ শতাংশ অগ্রিম কর। এই খাত থেকে একশ থেকে দুইশ কোটি রুপি আয় হবে বলে আশা সরকারের।

সিগারেটের পাশাপাশি আবগারি শুল্ক বেড়েছে কোমল পানীয়তেও। ১৩ শতাংশ থেকে কর বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করায় সরকার বাড়তি ১০ বিলিয়ন রুপি আয় করবে। ফলের রস বিক্রির ওপর নতুন করে ১০ শতাংশ সম্পূরক কর আদায়ের প্রস্তাব করায় সরকারের আয় বাড়বে ৪০০ কোটি রুপি।

সিমেন্ট বিক্রির ওপর এই কর কেজিতে দেড় রুপি থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে দুই রুপি। এতে বাড়তি ৬০০ কোটি রুপি আয়ের আশা করছে সরকার।

এর বাইরে আইএমএফের সঙ্গে সমঝোতা অনুযায়ী বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম উৎপাদন মূল্যে রাখা এবং বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার কথা আছে।

এই পদক্ষেপগুলো নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেবে বলে যে আশঙ্কার কথা বলা হচ্ছে, তা থেকে গরিব মানুষকে রক্ষায় একটি বিশেষ উদ্যোগের কথাও বলা আছে বিলে। বেনজীর ইনকাম সাপোর্ট প্রোগ্রামের বাজেট ৩৬ হাজার কোটি রুপি থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ৪০ হাজার কোটি।

আইএমএফ আগামী ১ মার্চের মধ্যে এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়নের শর্ত দিয়েছে।

পুঁজিবাজারে ব্যাপক পতন

আইএমএফের ঋণ নিয়ে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না আসা এবং সরকারের এসব নতুন পদক্ষেপ দেশের সাধারণ মানুষ এবং শিল্প খাতে চাপ আরও বাড়িয়ে দেবে, এমন আশঙ্কার মধ্যে সোমবার দেশটির পুঁজিবাজারে বড় দরপতন হয়েছে। একদিনেই মূল্য সূচক কমেছে ৪৪৫ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ০৮ শতাংশ।

আবা আলি হাবিব সিকিউরিটিজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের গবেষণা শাখার প্রধান সালমান নাকভি মনে করেন, এই দরপতনে অর্থনীতি নিয়ে অনিশ্চয়তা, দেউলিয়াত্ব থেকে বাঁচতে আইএমএফের সঙ্গে চুক্তি নিশ্চিত করতে না পারার মত কয়েকটি নেতিবাচক বিষয় ভূমিকা রেখেছে।

এর মধ্যে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার ২ থেকে ৩ শতাংশ বাড়াতে পারে বলে গুঞ্জন ছড়িয়েছে দেশটির আর্থিক খাতে। বলা হচ্ছে, আগামী ১৩ মার্চ এ বিষয়ে দেশটির মুদ্রানীতি কমিটির বৈঠক থাকলেও এর আগেই তা জারি হতে পারে।

রিয়াদ, বেইজিং থেকে ‘ইতিবাচক বার্তা’ পাওয়ার দাবি

পাকিস্তানের অর্থনীতি নিয়ে এই অনিশ্চয়তার মধ্যে দেশটির সরকার একটি ‘স্বস্তির’ বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছে যে, বন্ধু রাষ্ট্র সৌদি আরব ও চীন তাদের পাশে দাঁড়াতে যাচ্ছে।

মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সেরর সাইডলাইনে সৌদি আরব ও চীনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলওয়াল ভুট্টো জারদারির বৈঠকে দুটি দেশ থেকে আর্থিক সহায়তা আসার ‘ইতিবাচক বার্তা’ পাওয়ার দাবি করা হয়েছে।

গত সপ্তাহে এই বৈঠক হয় এবং মঙ্গলবার এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে পাকিস্তানের ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন’।

সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান এবং এবং চীনা মন্ত্রী ওয়াং ইর সঙ্গে এই বৈঠক হয় বিলওয়ালের। এই বৈঠকের বিষয়ে বিস্তারিত কিছু অবশ্য জানানো হয়নি। তবে কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে এক্সপ্রেস ট্রিবিউন দাবি করেছে, দুটি বৈঠকের আলোচনাই পাকিস্তানের ‘প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গেছে’।

একজন কর্মকর্তা দৈনিকটিকে বলেছেন, সৌদি আরব ও চীনের সঙ্গে ওই বৈঠকের বিষয়ে তিনি যা জানতে পেরেছেন, তা হলো, দেশ দুটি পাকিস্তানকে সহায়তা করতে রাজি আছে। আলোচনায় দুই দেশই এ ক্ষেত্রে সহযোগিতামূলক মনোভাব দেখিয়েছে, যদিও বিস্তারিত তিনি বলতে পারেননি।



আইএমএফের কর্মসূচি পুনরুজ্জীবিত করার জন্য সৌদি আরব এবং চীন থেকে আরও ঋণের আশ্বাস পেতে হবে পাকিস্তানকে। অর্থ লগ্নিকারী আন্তর্জাতিক সংস্থাটি পাকিস্তানের বন্ধু রাষ্ট্রগুলো থেকে নিশ্চয়তা পেতে চাইছে। সৌদি আরব, চীন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতকে সরাসরি এই নিশ্চয়তা দিতে হবে আইএমএফকে।

গত নভেম্বরে অর্থমন্ত্রী ইসহাক দার দাবি করেছিলেন, চীন তাদেরকে ১৩ বিলিয়ন এবং সৌদি আরব ৫ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে যাচ্ছে। তিনি আশা করেছিলেন, আইএমএফের ঋণ অনুমোদনের আগেই এই অর্থ পেয়ে যাবেন তারা।

তবে দৃশ্যত মনে হচ্ছে আইএমএফ এগিয়ে আসার আগে পাকিস্তানকে অর্থ দিতে চাইছে না তাদের দীর্ঘদিনের মিত্র দুই দেশ। সে কারণে পাকিস্তানকে আইএমএফের দ্বারে ছুটতে হয়েছে।

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এক বিবৃতিতে বলেছেন, দুই দেশের নেতাদের কৌশলগত বোঝাপড়াকে আরও ভালোভাবে বাস্তবায়ন করতে এবং ভবিষ্যতে সম্পর্ককে নতুন মাত্রা দিকে পাকিস্তানের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত চীন।

পাকিস্তান যেন তার নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে পারে, পাশাপাশি উন্নয়নের পথে নিজেদের পুনরুজ্জীবিত করতে পারে, সে জন্য সাময়িক এই কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলায় চীন সব সময় পাশে থাকবে বলেও সেই বিবৃতিতে বলা হয়েছে।





Source link: https://www.ittefaq.com.bd/632969/%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%89%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AC-%E0%A6%A5%E0%A7%87%E0%A6%95%E0%A7%87-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%81%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%B2%E0%A7%9C%E0%A6%BE%E0%A6%87%E0%A7%9F%E0%A7%87-%E0%A6%A5%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A6%BE-%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%87-%E0%A6%AF%E0%A6%BE

Sponsors

spot_img

Latest

Brentford leave it late before Vitaly Janelt stings Crystal Palace in 96th minute

Never write Brentford off. Six minutes into added time, they were struggling for fluency and a goal behind to Crystal Palace when Bryan Mbeumo...

Pay-per-view price, TV channel and live stream as ‘Money’ makes London fight debut in exhibition bout against Geordie Shore star

Floyd Mayweather’s latest exhibition venture will take place in the UK tonight against reality TV star Aaron Chalmers. The 50-0 legend, who has never...

‘I want to reach the highest level’

Manchester United target Cody Gakpo has not ruled out a move away from PSV Eindhoven as he continues to shine at the World...

Tyrese Haliburton wants to use Pacers play, tournament run to recruit other stars

Guys like playing with Tyrese Haliburton. Don't take my word for it, here is Lakers star Austin Reaves talking about his Team USA...

3 Reasons Influencer Marketing Is Still A Thing

Look around you. Not as many people are picking up the daily newspaper or sitting through long commercials on TV. However, they do...