আগামী ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বোর্ড সভায় বাংলাদেশের জন্য সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন আইএমএফের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) অ্যান্তইনেত মনসিও সায়েহ।
গতকাল এক প্রেস বিবৃতিতে তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। অ্যান্তইনেত মনসিও সায়েহ পাঁচ দিনের সফরে শনিবার ঢাকায় এসেছেন। সফরকালে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
বিবৃতিতে তিনি উল্লেখ করেন, কর্তৃপক্ষের নিজস্ব সংস্কার এজেন্ডাকে সমর্থন করার জন্য বাংলাদেশ এবং আইএমএফ সম্প্রতি বর্ধিত ঋণসুবিধা, বর্ধিত তহবিল সুবিধা এবং আইএমএফের নতুন স্থিতিস্থাপকতা এবং টেকসই সুবিধার (আরএসএফ) অধীনে একটি স্টাফ লেভেল চুক্তিতে পৌঁছেছে।
তিনি উল্লেখ করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেয়ে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। গত কয়েক দশকে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং সামাজিক উন্নয়নের জন্য আমি তাদের অভিনন্দন জানাই। এই সময়ে বাংলাদেশ দারিদ্র্য নিরসনে স্থির অগ্রগতি এবং জীবনমানে উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতিগুলো মুল্যস্ফীতিকে স্থিতিশীল রাখতে, জিডিপির তুলনায় ঋণ অনুপাত কম রাখতে এবং বাহ্যিক প্রভাব সহনীয় রাখতে সাহায্য করেছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর মতো বাংলাদেশও এখন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলা করছে। প্রথমে মহামারী থেকে, তারপর ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধর প্রভাব থেকে। বিশেষ করে এই কঠিন সময়ে দুর্বলদের সুরক্ষার বিষয়ে গুরুত্ব রয়েছে। আমরা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এই প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেছি, এবং আমি তাদের সঙ্গে এর প্রভাব মোকাবিলা করার জন্য বাংলাদেশের ব্যাপক পদক্ষেপকে স্বাগত জানাই।
বাংলাদেশে আলোচলার বিষয়বস্তু নিয়ে তিনি উল্লেখ করেন, এবারের পর্যালোচনায় আমরা আইএমএফের কর্মসূচির মাধ্যমে কীভাবে দীর্ঘমেয়াদে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা যায়, রাজস্ব আহরণ বাড়ানো যায় এবং আর্থিক খাত কীভাবে আরো দক্ষ করে গড়ে তোলা যায়—সে বিষয়গুলো উঠে এসেছে। সংস্কার কার্যক্রমের মাধ্যমে বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং রপ্তানি বহুমুখীকরণ হলে বাংলাদেশের অর্থনীতি দীর্ঘ মেয়াদে আরো ঝুঁকি সহনীয় হয়ে উঠবে। সেই সঙ্গে টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। পর্যালোচনায় দীর্ঘ মেয়াদে জলবায়ু পরিবর্তন জনিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার বিষয়গুলোও উঠে এসেছে। আইএমএফের বর্ধিত ঋণ সুবিধা এই ঝুঁকি মোকাবিলাসহ ব্যালেন্স অব পেমেন্টের চাপ কমাতে সহায়তা করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। আগামী ৩০ জানুয়ারি বোর্ড সভায় বাংলাদেশের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন পাওয়ার আশা প্রকাশ করেন তিনি।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ এর আগে ১২ বার আইএমএফের ঋণ পেয়েছে। ১৯৭২ সালে সদস্য হওয়ার পর আইএমএফ থেকে প্রথম ঋণ নেওয়া হয় ১৯৭৪ সালে। ২০১২ সালে নেওয়া সর্বশেষ ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার। সেটাই ছিল আইএমএফের কাছ থেকে নেওয়া সর্বোচ্চ ঋণ। আর এবার বাংলাদেশ পাবে আরো ৪৫০ কোটি ডলার।