ব্যাংকিং সেক্টরে ব্যাপক সংস্কার আবশ্যক


বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে অনেক দিন হলো। ব্যাংকিং খাত এক সময় মোটামুটি ভালোই চলছিল। এরপর ৮০-এর দশকে ব্যক্তিমালিকানায় ব্যাংক স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হলো। প্রথম দিকে ব্যক্তিমালিকানাধীন ব্যাংকগুলো উজ্জ্বল সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিয়েছিল। তারা বেশ ভালো করছিল। কিন্তু পরবর্তী সময় তাদের সেই অবস্থা অবশিষ্ট থাকেনি। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোকেও সংস্কারের মাধ্যমে ঠিক করা হয়েছিল। কিন্তু এখন আবার ব্যাংকিং খাত কিছুটা হলেও সংকটে পতিত হয়েছে। খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়। পুনঃ তপশিলিকরণ নীতিমালা আধুনিকায়ন করা হয়। ঋণ হিসাব অবলোপন নীতিমালা কঠোর করা হয়। এসব সংস্কারের উদ্দেশ্য ছিল জাতীয় অর্থনীতিতে ব্যাংকিং খাতের অবদান যেন আরও বৃদ্ধি পায়। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যাংকিং খাতের অবস্থা ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে। বিভিন্নভাবে সংস্কারের নামে প্রচলিত আইনগুলোকে দুর্বল করে ফেলা হয়েছে। ফলে ব্যাংকিং খাত এখন অনেকটাই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ঋণখেলাপিদের এমন কিছু সুবিধা দেওয়া হয়েছে যাতে ঋণের কিস্তি আদায় না করেই কৃত্রিমভাবে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে দেখানো যায়। ঋণ অবলোপন নীতিমালা সহজীকরণ করা হয়েছে। ঋণ হিসাব পুনঃ তপশিলিকরণ নীতিমালায় ব্যাপক পরিবর্তন সাধন করা হয়েছে। এখন আগের চেয়ে কম পরিমাণ ডাউন পেমেন্ট জমা দিয়েই ঋণ হিসাব পুনঃ তপশিলিকরণ করা যাচ্ছে। ব্যাংকিং সেক্টরে নানা ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি জেঁকে বসেছে। কোনোভাবেই ব্যাংকিং সেক্টরে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা যাচ্ছে না। এক সময় খেলাপি ঋণ সমস্যা মূলত রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের জন্যই জটিলতা সৃষ্টি করছিল। এখন ব্যক্তিমালিকানাধীন ব্যাংকেও খেলাপি ঋণ সমস্যা জটিল হচ্ছে। ২০০৭-২০০৮ সালে বিশ্বব্যাপী সৃষ্ট আর্থিক সংকটের কারণে আমাদের দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর করোনা ও নানাবিধ আন্তর্জাতিক সংকটের কারণে স্থানীয় ব্যাংকগুলো জটিলতা মোকাবিলা করছে। কোনোভাবেই এসব সমস্যা থেকে উত্তরণ ঘটানো যাচ্ছে না। আমাদের দেশের ব্যাংকিং সিস্টেম যেভাবে চলছে তা কাম্য হতে পারে না। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছ থেকে ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ পেতে যাচ্ছে। এই ঋণের জন্য আমাদের বিভিন্ন শর্ত পরিপালন করতে হবে। বিশেষ করে ব্যাংকিং খাতে ব্যাপক সংস্কার সাধন করতে হবে। আইএমএফ অথবা বিশ্বব্যাংক বলুক আর নাই বলুক এই মুহূর্তে আমাদের নিজস্ব প্রয়োজনেই ব্যাংকিং সেক্টরে ব্যাপক সংস্কার সাধন করা আবশ্যক। বিশেষ করে ব্যাংকিং সেক্টর পরিচালনার জন্য যেসব আইনকানুন রয়েছে তা সংস্কারের মাধ্যমে আধুনিকায়ন এবং আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা যেতে পারে। ইতিমধ্যে যেসব আইনি সংস্কারের কারণে ব্যাংকিং সেক্টর দুর্বল হয়ে পড়েছে তা দূর করে আইনগুলোকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নিতে হবে। ব্যাংক হচ্ছে একটি দেশের অর্থনীতির ‘লাইফ লাইন।’ তাই ব্যাংকিং সেক্টরকে অবজ্ঞা করে কোনোভাবেই টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। বিষয়টি আমাদের অনুধাবন করতে হবে। ব্যাংকিং সেক্টর সংস্কারের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত থাকতে হবে। ব্যাংকিং সেক্টরের মতো স্পর্শকাতর একটি সেক্টর তার নিজস্ব গতিতে চলতে দেওয়া উচিত। কোনোভাবেই রাজনৈতিক বিবেচনা অথবা অন্য কোনোভাবে ব্যাংকিং সেক্টরের স্বাভাবিক গতি রোধ করা যাবে না। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া যাবে না। কারণ ব্যাংকিং সেক্টরের বর্তমান দুরবস্থার জন্য মূলত এরাই দায়ী। অর্থমন্ত্রী কিছু দিন আগে বলেছেন, বর্তমানে দেশের ব্যাংকিং সেক্টরে খেলাপি ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ১ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা। এটা এ যাবত্কালের মধ্যে সর্বোচ্চ পরিমাণ খেলাপি ঋণ। খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংকের ঋণদান সামর্থ্য কমে যায়। তাদের ‘কস্ট অব ফান্ড’ বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশ ব্যাংক মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন ধরনের সার্কুলার ইস্যু করে। আমি মনে করি, এ ধরনের সার্কুলার ইস্যু করে কোনো লাভ হবে না। এতে ব্যাংকিং সেক্টরের সমস্যা দূর হবে না। আমাদের ব্যাংকিং সেক্টরের জন্য ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন। সমস্যা জিইয়ে রেখে ব্যাংকিং সেক্টরকে ভালো দেখানোর কোনো মানে থাকতে পারে না। ব্যাংক কোম্পানি আইনের ব্যাপক সংস্কারের মাধ্যমে হালনাগাদ করতে হবে। ব্যাংকিং সেক্টরে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য যা যা করণীয় তাই করতে হবে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে দলীয় বিবেচনার ঊর্ধ্বে উঠে অভিজ্ঞ এবং ব্যাংকিং সম্পর্কে ভালো জ্ঞান রাখেন এমন ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়া উচিত। যাদের সততা পরীক্ষিত তাদেরই ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ডে নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন। কারণ ব্যাংকের মতো একটি স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে দক্ষ লোক নিয়োগ দেওয়া না হলে কোনোভাবেই সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন মানুষকে ব্যাংকিং সেক্টর পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। বিশ্বব্যাংক ব্যাংকিং খাতসহ বিভিন্ন সেক্টরে যে সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে তা অবশ্যই বিবেচনায় নেওয়া উচিত। কারণ আমরা যদি এখনই ব্যাংকিং সেক্টরকে দৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে না পারি তাহলে টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন অর্জন করা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। আগামীতে বাংলাদেশ চূড়ান্তভাবে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবার পর ব্যাংকিং খাতের গুরুত্ব আরও অনেক বৃদ্ধি পাবে। তখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ব্যাংকগুলোর সঙ্গে আমাদের প্রতিযোগিতা করতে হবে।

ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মতো স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠান স্থাপনের অনুমতি দেওয়া উচিত দক্ষতা, যোগ্যতা ও প্রয়োজনীয়তার নিরিখে। কোনোভাবেই এসব প্রতিষ্ঠান রাজনৈতিক বিবেচনায় স্থাপনের অনুমতি দেওয়া উচিত নয়। রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংক প্রতিষ্ঠার অনুমতি দেওয়া হলে সেই ব্যাংক ভালোভাবে চলতে পারে না। নতুন প্রজন্মের যে ৯টি ব্যাংক অনুমোদন দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে কয়েকটি মোটেও ভালো চলছে না। দু-একটি ব্যাংক তো খুবই খারাপ অবস্থায় চলে গিয়েছিল। পরে সরকার নানাভাবে সাপোর্ট দিয়ে তাদের টিকিয়ে রেখেছেন। কিন্তু ব্যাংক তার নিজস্ব যোগ্যতায় প্রতিযোগিতামূলকভাবে পরিচালিত হবে—এটাই কাম্য। কোনোভাবেই সরকার সাপোর্ট দিয়ে ব্যাংক টিকিয়ে রাখবে এটা কাম্য হতে পারে না। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে ব্যাংক বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে রাষ্ট্রীয় সাপোর্ট দিয়ে পরিচালনার কোনো সুযোগ নেই। কাজেই ব্যাংক অথবা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কারো করুণায় নয়, নিজস্ব সক্ষমতার বলেই চলতে হবে। এর কোনো ব্যত্যয় ঘটানোর সুযোগ নেই। ব্যাংক স্থাপনের আগে সম্পূর্ণ পেশাদারিত্বের ভিত্তিতে অনুমোদন দিতে হবে। অন্যথায় এসব প্রতিষ্ঠান দেশ ও জনগণের জন্য দায় হয়ে দাঁড়াতে পারে। যারা কোনো নতুন ব্যাংক স্থাপনের আবেদন করবে তারা কোন পেশায় আছেন, ব্যাংকিং সম্পর্কে কোনো পূর্ব ধারণা আছে কিনা, তাদের সামাজিক ও আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় নিতে হবে। এছাড়া কোনো একটি ব্যাংক স্থাপনের জন্য অনুমতি প্রদানের আগে যাচাই করতে হবে আরও নতুন ব্যাংক স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা। অথবা নতুন ব্যাংক স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হলে সেগুলো প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকতে পারবে কিনা—এসব তথ্য ভালোভাবে যাচাই করতে হবে। আমাদের দেশের ব্যাংকগুলো একই ধরনের প্রোডাক্ট নিয়ে বাজারে প্রতিযোগিতা করছে। ফলে এক ধরনের অসম প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হয়েছে। সবগুলো ব্যাংক যদি একই রকম সেবা নিয়ে গ্রাহকদের কাছে যায় তাহলে সমস্যা হতে পারে। তাই ব্যাংকগুলোর সেবার ক্ষেত্রগুলোকে আলাদা করে দেওয়া যেতে পারে। ব্যাংকিং নীতিমালা এমনভাবে প্রণীত হতে হবে যাতে তা দেশের উন্নয়নে কাজে লাগতে পারে। রাজনৈতিক বিবেচনায় কোনো আইন প্রণয়ন করা উচিত নয়।

মনে করা হয়, নীতি সুদ হার বাড়িয়ে দিলে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে। কারণ, নীতি সুদ হার বাড়ানো হলে সিডিউল ব্যাংকগুলো আগের বেশি সুদ দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করতে হবে। এতে বাজারে মুদ্রা সরবরাহ কমে আসবে। কিন্তু এই ধারণা সব সময় কার্যকর অবদান রাখতে পারে না। বর্তমানে যেসব দেশ নীতি সুদ হার বাড়িয়েছে তারাও কিন্তু অভ্যন্তরীণ বাজারে মূল্যস্ফীতির হার কমাতে পারেনি। বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সুদ হার বাড়িয়েছে কিন্তু ঋণের আপার ক্যাপ তুলে দেয়নি। ফলে বাজারে মুদ্রা সরবরাহ কমে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। আর এবারের মূল্যস্ফীতির জন্য আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে। কাজেই শুধু অভ্যন্তরীণ বাজারে ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা রোধ করা যাবে বলে মনে হয় না। অন্য দেশে নীতি সুদ হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা গেলে বাংলাদেশেও তা সম্ভব হবে এমন কোনো কথা নেই। আমানতের ওপর প্রদেয় নির্ধারিত সুদের হার ৬ শতাংশের বাধ্যবাধকতা তুলে দেওয়া হয়েছে।  ব্যাংকগুলোর কস্ট অব ফান্ড অনেক বেশি। মূল্যস্ফীতির হার ৯ দশমিক ১০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এই অবস্থায়  আমানতের সর্বোচ্চ সুদ হার ৬ শতাংশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। এটা আমানত প্রবৃদ্ধিতে কিছুটা হলেও সহায়ক হতে পারে। কেউ ব্যাংকে আমানত রাখলে বছরান্তে তার যদি ক্যাপিটাল লস হয় তাহলে সাধারণ মানুষ ব্যাংকে আমানত রাখবে কেন? কোনো কোনো ব্যাংক আমানত সংকটে ভুগছে। তারা চেষ্টা করেও আমানত সংগ্রহ করতে পারছে না। ব্যাংকের নীতি সুদ হার বর্তমানে ৬ শতাংশ। এই অবস্থায় কনজুমার্স লোনের সুদের হার ১২ শতাংশ পর্যন্ত ধার্য করার সুযোগ দেওয়া হয়েছি। কিন্তু শিল্প ঋণের সুদের আপার ক্যাপ ৯ শতাংশই রয়ে গেছে। এ অবস্থায় ব্যাংকিং সেক্টর এক ধরনের বিশৃঙ্খল অবস্থার মধ্যে পতিত হয়েছে। ঋণের সর্বোচ্চ সুদ হার নির্ধারণ করে দেওয়া এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে তা অপরিবর্তিত রাখা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ব্যাপার। আমি মনে করি, ব্যাংক ঋণের সুদের হার সম্পূর্ণরূপেই বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত। বাজারই নির্ধারণ করবে সুদের হার কত হবে। উন্নত দেশগুলোর ব্যাংকিং সেক্টর নীতি সুদ হার বাড়াচ্ছে। তাদের বিকল্প অর্থায়নের ব্যবস্থা আছে। তাদের পুঁজিবাজার এবং বন্ড মার্কেট থেকে উদ্যোক্তাগণ অর্থ সংগ্রহ করতে পারেন। কিন্তু আমাদের দেশের পুঁজিবাজার এখনো সঠিক ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে পারেনি। বন্ড মার্কেট তো বিকশিত হয়নি। বন্ড মার্কেট বিকশিত হলে উদ্যোক্তাগণ অর্থায়ন সংগ্রহের বিকল্প রাস্তা খুঁজে পেতেন। বাংলাদেশের উদ্যোক্তা অর্থায়নের চাহিদা মেটানোর জন্য মূলত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপরই নির্ভর করতে হয়।

লেখক: বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সাবেক গভর্নর বাংলাদেশ ব্যাংক

অনুলিখন: এম এ খালেক





Source link: https://www.ittefaq.com.bd/628992/%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%82-%E0%A6%B8%E0%A7%87%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A6%B0%E0%A7%87-%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%AA%E0%A6%95-%E0%A6%B8%E0%A6%82%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%86%E0%A6%AC%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%95

Sponsors

spot_img

Latest

‘Long ban’ predicted after ugly targeting of young fly-half

A long ban has been predicted after the questionable targeting of Ospreys fly-half Jack Walsh in the United Rugby Championship match against...

Son of a Wallaby legend set for Aussie Sevens debut in Singapore

Former Australia U20s captain Teddy Wilson is in line to make his HSBC SVNS Series debut at the seventh round in Singapore...

Saracens sign Wallabies prop Ollie Hoskins

Saracens have signed Wallabies tighthead prop Ollie Hoskins on a two-year deal. The 30-year-old Australian international joins the team after spending seven...

Microsoft expands the Xbox Game Pass family plan to six more countries

has the Xbox Game Pass family plan to six more countries. Folks in Chile, Hungary, Israel, New Zealand, South Africa and...

My Favorite Homemade Brownies – A Beautiful Mess

My birthday is tomorrow, so I wanted to share my favorite homemade brownies recipe with you, as that’s what I’m in the mood...