‘মাঝ রাতের দরজায় কড়া নাড়ে মানবতার ফেরিওয়ালা’


সময় তখন রাতের ১২টা। তীব্র শীতের নিস্তব্ধ রাতে ঘুমিয়ে পড়েছ প্রায় পুরো গ্রাম। এমন সময়ে হঠাৎ দরজায় কড়ার শব্দে মাঝরাতের ঘুম ভেঙে যায় আব্দুল জলিলের। দরজা খুললে দেখতে পান হাতে কিছু শীতের কাপড় নিয়ে দাঁড়িয়ে অচেনা এক যুবক। বিক্রেতার ভঙ্গিতে কাপড় পছন্দ করতে বলেন জলিলকে। এতে তিনি বিরক্ত হন। তবুও কিছু কাপড় নেড়েচেড়ে দেখেন। তবে টাকা না থাকায় গাম্ভীর্য সুরেই বললেন, না আমার কোনো কাপড় লাগবে না।

তবে তিন সদস্যের জলিলের পরিবার পেয়েছিলেন একটি করে শীতের পোশাক ও কম্বল। বেশিকিছু কাপড় থেকে পছন্দের কাপড়টা বেছে নেওয়ার সুযোগও পেয়েছিলেন তারা। জীবনে প্রথমবার এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়ে বেশ অবাক হন তিনি। পরবর্তীতে জলিলের মাধ্যমে বিষয়টি জানাজানি হয়।

তবে মাঝরাতে কড়া নাড়ায় এলাকায় নতুন আশা জলিলের পরিবার আতঙ্কিত হলেও শীত মৌসুমে এমন শব্দ পেয়ে এই গ্রামের নিম্ন আয়ের ছিন্নমূল পরিবার আনন্দ ও উৎসাহ নিয়েই দরজা খোলেন। শীত এলে অনেকে প্রতীক্ষায় থাকেন, এবারও রাতের বেলা শীতবস্ত্র দিয়ে যাবেন মানবতার ফেরিওয়ালা মোস্তফা। 

জানা যায়, রাতের ফেরিওয়ালা খ্যাত যুবক মোস্তফা। তার বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের আউলিয়াপুরের কচুবাড়িতে। সারা বছরে জমানো টাকায় শীতের রাতে নিজ গ্রাম ঘুরে ঘুরে শীতার্থের বাসায় শীতবস্ত্র পৌঁছানো এখন তার নেশায় পরিণত হয়েছে। নিজেও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হয়ে মানবতার অন্যান্য নিদর্শন রেখে যাচ্ছেন ৩৩ বছর বয়সি এই যুবক।



গ্রামের কিছু বন্ধুদের নিয়ে প্রায় সাত বছর আগে এই মানবিক কাজ শুরু করেন মোস্তফা। তবে আস্তে আস্তে ৩ বছর পরেই একা হয়ে পরেন তিনি। মোস্তফার অন্যান্য বন্ধুরা হালছেড়ে চলে যান। কিন্তু সাহস হারাইনি মোস্তফা। অন্যেরা ছেড়ে গেলেও এই মানবিক ফেরিওয়ালা মোস্তাফা শীতার্থদের দরজায় কড়া নাড় চালিয়ে যাচ্ছেন।

নিজস্ব সাড়ে তিন বিঘা জমির সঙ্গে কিছু বর্গা জমিতে আবাদ করেই জীবন যাপন করেন মোস্তফা। পরিবারের প্রয়োজন মিটিয়ে সারাবছরে টুকে টুকে জমানো টাকা দিয়েই শীত নিবারণের জ্যাকেট ও কম্বল বিতরণ করে যাচ্ছেন তিনি।

মোস্তফা জানান, সাত বছর আগে মোস্তফার দরিদ্র এলাকার স্কুল মাঠে কম্বল বিতরণ হচ্ছিল। কম্বল হাতে নিয়ে বাসায় ফিরছিলেন এক ৬৫ উর্ধ্ব বৃদ্ধা। কিন্তু চোখে পানি দেখে বৃদ্ধাকে থামিয়ে কার জানতে চান মোস্তফা ও তার কিছু বন্ধু। তাদেরকে বৃদ্ধা জানায়, প্রতিবেশীর কাছে জানতে পেরে পাশের স্কুল মাঠে কম্বল নিতে আসেন বৃদ্ধা। অতিথিদের জন্যে অপেক্ষা ও অতিথিদের বক্তব্য শেষ করেই কম্বল দেওয়া শুরু হয়। পরে সেই বৃদ্ধা বুঝতে পারেন যে কম্বল নিতে গিয়ে তিনি কাজে যেতে পারেনি। তাই পরিবারের জন্যে বাজার করার টাকা উপার্জন করতে পারেনি।

মোস্তফা বলেন, সেদিন বন্ধুরা সবাই মিলে সেই বৃদ্ধ অর্থাৎ মতলব চাচাকে বাজার করে দেই। একসঙ্গে তার বাসার সবার জন্যেই শীতের কাপড় কিনে দেই। তারপর থেকেই বন্ধুরা পরিকল্পনা করে জমানো টাকা দিয়ে গ্রামের মানুষের পাশে দাঁড়াবার চেষ্টা করি। কিন্তু আস্তে আস্তে সবাই চলে গেছে। তাই এখন একাই চেষ্টা করছি।

মোস্তফা বলেন, আমি মনে করি যারা সত্যিকারে অভাবগ্রস্ত, তাদের পক্ষে শীতবস্ত্র বিতরণের আয়োজনে গিয়ে কম্বল সংগ্রহ করা সম্ভব না। কারণ এতে করে তাদের দিনমজুরি হারাতে হয়। আমার গ্রামের এমন অনেক দরিদ্র পরিবার আছে যারা পুরো মৌসুম শীতবস্ত্রের অভাবে কষ্ট করে। তাই আমি সারা বছর আমার উপার্জন থেকে কিছু কিছু জমিয়ে শীতের সময় সেসকল বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করি।




এমন মাঝরাতে শীতবস্ত্র বিতরণের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, দিনের সময় শীতবস্ত্র দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। দিনে দিতে গেলে অনেকেই আমার কাছে চাইতে আসবে। তখন তাদের দিতে গিয়ে দেখাযাবে প্রকৃতরা পায়নি। কারণ আমার সামর্থ্য কম, সংগ্রহ সীমিত। তাই আমি প্রথমে গ্রামের প্রকৃত অভাবগ্রস্তদের চিহ্নিত করি। পরে রাতে চুপিচুপি দিয়ে আসি। আমার সামর্থ্য থাকলে এই অঞ্চলের সবার দরজায় গিয়ে দাঁড়াতাম।

ঠাকুরগাঁও নাগরিক সমাজের সভাপতি আবু মহিউদ্দীন বলেন, বর্তমান সময়ে এমন মানুষ মানবতার উদাহরণ স্বরূপ। তার এমন চিন্তাভাবনাকে সাধুবাদ জানাই। দেড়শ টাকার কম্বল বিতরণে যখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। এক্ষেত্রে দিনমজুর শ্রেণির মানুষেদের সংগ্রহ করাটা অবশ্যই কষ্টকর। 





Source link: https://www.ittefaq.com.bd/629026/%E2%80%98%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%9D-%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%A6%E0%A6%B0%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A7%9F-%E0%A6%95%E0%A7%9C%E0%A6%BE-%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A7%9C%E0%A7%87-%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%AC%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%AB%E0%A7%87%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%93%E0%A7%9F%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E2%80%99

Sponsors

spot_img

Latest

Michigan leaders respond to slaying of Detroit synagogue president

Woll, 40, had led the Isaac Agree Downtown Synagogue since 2022 and was a former aide to Democratic Rep. Elissa Slotkin and campaign...

Best StackSkills online course deal

TL;DR: Lifetime access to StackSkills Unlimited(opens in a new tab) is on sale for £48.80, saving you 95% on list price.If you’re shopping...

You’re Doing a Great Job

By the lovely Grace Farris. P.S. More pep talks and a reminder for parents.… Read more The post You’re Doing a Great Job appeared...

The gamification of work and reality: How gaming has moved beyond leisure

Join top executives in San Francisco on July 11-12, to hear how leaders are integrating and optimizing AI investments for success. Learn More As...

Who are the best 2nd tier teams in the NBA?

Subscribe to Ball Don't LieYahoo sports NBA writer Dan Devine is joined by Rohan Nadkarni from Sports illustrated to talk about Ja Morant’s...