মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যাংকের ভূমিকা ও বর্তমান চিত্র


সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি উচ্চমাত্রায় পৌঁছায়। অধিকাংশ দেশই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে তাদের অন্যতম অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনা করে নানা ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও বেশ কিছু দিন ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। কিন্তু এখনো মূল্যস্ফীতিকে আমরা নিম্নমুখী ধারায় নিয়ে আসতে পারিনি। মাঝখানে দুই মাস মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছিল বটে। সরকারের ধারণা বর্তমানে যে উচ্চমাত্রায় মূল্যস্ফীতি প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে তা সাপ্লাই সাইড থেকে হয়েছে। অর্থাৎ ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সরবরাহ চেইন ভেঙে পড়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। তারই প্রভাবে স্থানীয় বাজারে বিভিন্ন পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের মূল্য ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের অর্থনীতিতেও মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী ধারায় রয়েছে। যেহেতু বর্তমান মূল্যস্ফীতি মূলত আন্তর্জাতিক বাজারের কারণে হয়েছে। তাই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আমাদের তেমন কিছু করণীয় নেই। সরকারের এই বক্তব্য হয়তো আংশিকভাবে সত্যি। কারণ মূল্যস্ফীতির শুরুটা হয়েছিল আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণেই। এর পেছনে মূলত ইউক্রেন যুদ্ধই বেশি প্রভাব ফেলেছে। কিন্তু তার পরও বিশ্বের অন্যান্য দেশ তাদের নিজস্ব কৌশল ব্যবহার করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে কিছুটা হলেও সফলতা অর্জন করেছে। কিন্তু আমরা তা পারিনি। স্বাভাবিক অবস্থায় এই সময় বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতির হার হয়তো ৬ শতাংশ বা সাড়ে ৬ শতাংশ থাকতে পারত। কিন্তু কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যর্থতার কারণে আমাদের অভ্যন্তরীণ বাজারে মূল্যস্ফীতি প্রায় ডাবল ডিজিটে চলে গেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অন্তত ৭৭টি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের পলিসি রেট বাড়িয়েছে। পলিসি রেট বাড়ানোর কারণে স্বাভাবিকভাবেই ব্যাংক ঋণের সুদের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে সাধারণ ঋণগ্রহীতাদের মধ্যে ঋণ গ্রহণের প্রবণতা কমে গেছে। বাজারে অর্থ সরবরাহ কমে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকও গত এক বছরের ব্যবধানে পলিসি রেট অন্তত তিন বারে ১ শতাংশ বাড়িয়েছে। কিন্তু পলিসি রেট বাড়ানো হলেও ব্যাংক ঋণের সুদের আপার ক্যাপ (৯ শতাংশ) বহাল রাখায় বাজারে অর্থের চাহিদা হ্রাস পায়নি। বরং অর্থপ্রবাহ আরও বেড়ে গেছে। কারণ ব্যাংকঋণের সুদের সর্বোচ্চ হার ৯ শতাংশ বহাল রেখে পলিসি রেট কমানোর ফলে ঋণ গ্রহণ আগের তুলনায় সস্তা হয়েছে। এতে ব্যাংকের ঋণপ্রবাহ না কমে বরং আরও বেড়েছে। চলতি মুদ্রানীতিতে ব্যক্তি খাতে ব্যাংক ঋণের প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছে ১৪ দশমিক ১ শতাংশ। কিন্তু গত আগস্ট মাসে ব্যক্তি খাতে ব্যাংক ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ। অথচ একই সময়ে শিল্পে ব্যবহার্য কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি কমেছে ১৪ শতাংশ। আর ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানি কমেছে ৭৬ শতাংশ। তার অর্থ হচ্ছে, ব্যাংক থেকে গৃহীত ঋণ অন্য কোনো খাতে প্রবাহিত করা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো, ভারত পলিসি রেট বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে সমর্থ হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক পলিসি রেট বাড়ালেও ব্যাংক ঋণের আপার ক্যাপ বহাল রাখার কারণে এই পদক্ষেপ হিতে বিপরীত হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই উদ্যোগ কতটা বাস্তবসম্মত তা সময়ই বলে দেবে।

অর্থনীতিবিদগণ মনে করেন, মূল্যস্ফীতির জন্য শুধু সাপ্লাই সাইডকে দায়ী করে বসে থাকলে চলবে না। ডিম্যান্ড সাইড থেকেও কিছু করার আছে। কারণ বর্তমান মূল্যস্ফীতি যেমন শুধু সাপ্লাই সাইডের কারণে সৃষ্টি হয়নি তেমনি শুধু ডিম্যান্ড সাইডের কারণেও হয়নি। তাই সাপ্লাই সাইড এবং ডিম্যান্ড সাইড উভয় দিক বিবেচনায় রেখেই সৃষ্ট মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিতে হবে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্ভব হলে ডিম্যান্ড কিছুটা কমাতে হবে, যাতে সরবরাহজনিত স্বল্পতাকে আমরা কিছুটা হলেও মোকাবিলা করতে পারি। যেহেতু ডলার-সংকটের কারণে পর্যাপ্ত পরিমাণ পণ্য আমদানি করা সম্ভব হচ্ছে না এবং বাজারে বিভিন্ন পণ্যের জোগান কমে গেছে, তাই আমরা যদি চাহিদা না কমাই, তাহলে পণ্যের দাম বাড়বেই। আমরা বড় রকম চাহিদা সমন্বয় করিনি। কিছুটা নিজস্বভাবে চাহিদা কমেছে। মার্কিন ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রা টাকার অবমূল্যায়নের কারণে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়ে চাহিদা কিছুটা কমেছে। মূল্যস্ফীতি যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে অনেকগুলো ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে অর্থনীতি। ব্যক্তি খাতের শ্রমিকরা তাদের মজুরি বাড়ানোর দাবি উত্থাপন করতে পারে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও বেতন-ভাতা বৃদ্ধির জন্য দাবি উত্থাপন করতে পারে। সেই পরিস্থিতিতে কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাড়ানো হলে তাদের সেই বর্ধিত বেতনের অর্থ কোনো না কোনোভাবে বাজারে চলে যাবে। এতে মূল্যস্ফীতি আরও বৃদ্ধি পাবে। মানুষের আয় বৃদ্ধি পেলে তার ক্রয়ক্ষমতাও বাড়বে। কিন্তু পণ্যের জোগান তো বাড়বে না। ফলে আগের চেয়ে বেশি মূল্যে পণ্য ক্রয় করতে হবে। এতে মূল্যস্ফীতি আরও ঊর্ধ্বমুখী হবে। প্রান্তিক মানুষের দুর্ভোগ বৃদ্ধি পাবে। কারণ প্রান্তিক মানুষ চাইলেই তাদের আয় বাড়াতে পারবেন না।

আমার যদি বিরাজমান মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে না পারি, তাহলে বাংলাদেশ উচ্চ মূল্যস্ফীতির দেশ হিসেবে পরিগণিত হবে। ভারতের মূল্যস্ফীতি এখন ৪ শতাংশ। আর আমাদের মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৯ শতাংশের বেশি। ভারতের তুলনায় বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতির হার যদি বেশি হয়, তাহলে ভারতের সঙ্গে আমাদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হ্রাস পাবে। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার যদি নির্ধারণ করে রাখা হয়, তাহলে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমরা যে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছি স্থানীয় মুদ্রায় তা কম পাচ্ছি। বিশ্বের অনেক দেশই তাদের পণ্য রপ্তানিকারকদের উৎসাহিত করার জন্য স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন করে রাখে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনের বিরুদ্ধে প্রায়শই এমন অভিযোগ করে থাকে। ফলে রপ্তানিকারকগণ যে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে তার বিনিময়ে তুলনামূলক বেশি পরিমাণ স্থানীয় মুদ্রা পেয়ে থাকে। যে কোনোভাবেই হোক, মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে হবে। তাহলে অর্থনীতি স্থিতিশীল হবে। পণ্যমূল্য কিছুটা হলেও স্থিতিশীল এবং সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকবে। এতে জনজীবনে স্বস্তি ফিরে আসবে। মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য আমাদের আগামীর দিনে সংযত মুদ্রানীতিকে অনুসরণ করতে হবে। বাজারে যাতে বেশি পরিমাণে অর্থ চলে না আসে, তার উদ্যোগ নিতে হবে। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে হবে। ব্যাংক ঋণের সুদের আপার ক্যাপ তুলে দেওয়া যেতে পারে। তাহলে সুদের হার বাজারভিত্তিক হবে। ঋণগ্রহীতারা ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও নিরুৎসাহিত হবেন। পণ্যের চাহিদা কমিয়ে আনতে হবে। একই সঙ্গে সম্ভাব্য ক্ষেত্রে স্থানীয়ভাবে পণ্যোৎপাদন বাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

বাংলাদেশ সাম্প্রতিক সময়ে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রগতি সাধন করেছে। কিন্তু সেই উন্নয়নের সুফল সবাই ন্যায্যতার ভিত্তিতে ভোগ করতে পারছে না। ফলে সমাজে বিত্তবান-বিত্তহীনের মধ্যে যে বৈষম্য, তা দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে। এতে সমাজে একধরনের অসংগতি সৃষ্টি হচ্ছে। যখন একটি দেশে মূল্যস্ফীতি বিরাজ করে তখন বিত্তবান পরিবারগুলো লাভবান হয়। তাদের সম্পদের পরিমাণ দ্রুত বৃদ্ধি পায়। উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে জমি-ফ্ল্যাটের মূল্য অনেক বৃদ্ধি পায়। এতে বিত্তবানরা উপকৃত হয়। যাদের প্রচুর পরিমাণ জমি ছিল তারা লাভবান হন। কিন্তু যাদের জমি বা ফ্ল্যাট নেই তাদের আর জমি বা ফ্ল্যাট কেনার সামর্থ্য থাকবে না।

ব্যাংকঋণের সুদের হার যদি বাজারভিত্তিক না হয় তাহলে উচ্চ মূল্যস্ফীতিকালে আমানতকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। বর্তমানে ব্যাংকঋণের সর্বোচ্চ সুদের হার ৯ শতাংশ। কাজেই আমানতের ওপর গড় সুদের হার ৪ শতাংশের মতো। আর মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৯ শতাংশ। তাহলে প্রকৃত সুদের হার আমানতের ওপর হচ্ছে মাইনাস ৫ দশমিক ৫। এই অবস্থায় আমনতকারীগণ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তারা ব্যাংকে আমানত সংরক্ষণে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারেন। ব্যাংকঋণের সুদের হার যদি বাজারভিত্তিক হতো, তাহলে আমানতের সুদহার অনেক বেশি হতো। ঋণের সুদের হার পজিটিভ ৩ বা ৪ শতাংশ হওয়ার কথা। যারা বড় বড় ঋণগ্রহীতা তারাই উচ্চ মূল্যস্ফীতিকালে সুবিধাপ্রাপ্ত হচ্ছেন। উচ্চ মূল্যস্ফীতিকালে ব্যাংকগুলো যে ঋণ দেয় তার প্রকৃত সুদের হার স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কমে যায়। আর ব্যাংক থেকে যারা ঋণ পান তারা বিত্তবান মানুষ। উচ্চ মূল্যস্ফীতিকালে মানুষের আয়বৈষম্য বেড়ে যায়। এই সময় দরিদ্র মানুষ আরো দরিদ্র হয় আর বিত্তবানরা আরো অর্থবিত্তের মালিক হন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর উদ্যোগে পরিচালিত খানা জরিপের তথ্য মোতাবেক দেশে হতদরিদ্র মানুষের হার এখন ৫ শতাংশ। সাধারণ দরিদ্র মানুষের হার করোনাপূর্ব অবস্থায় চলে এসেছে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস) তাদের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উল্লেখ করেছে, রাজধানী ঢাকা শহরে নতুন দারিদ্র্যের সংখ্যা বেড়েছে। ঢাকা শহরে লোকসংখ্যা প্রতিনিয়তই বৃদ্ধি পাচ্ছে। কাজেই ঢাকা শহরে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বাড়ছে এবং আগামী দিনেও বাড়তেই থাকবে। কিন্তু এই গৃহহীন এবং নিম্নবিত্তের পরিবারগুলোর জন্য পর্যাপ্ত গৃহায়নের ব্যবস্থা করা সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের সবাইকেই এই সামাজিক বৈষম্য নিয়ে ভাবতে হবে।

লেখক: বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ

অনুলিখন: এম এ খালেক





Source link: https://www.ittefaq.com.bd/645666/%E0%A6%AE%E0%A7%82%E0%A6%B2%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AB%E0%A7%80%E0%A6%A4%E0%A6%BF-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A3%E0%A7%87-%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AD%E0%A7%82%E0%A6%AE%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%BE-%E0%A6%93-%E0%A6%AC%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A8

Sponsors

spot_img

Latest

The best Amazon Prime Day deals for 2023

Amazon Prime Day is back this year with a bunch of new deals to consider. There are thousands of deals to sift through...

Boris Becker issues major statement on Novak Djokovic’s dominance at 36

Boris Becker issues major statement on Novak Djokovic's dominance at 36 © Getty Images Sport - Clive Brunskill Boris Becker is in awe of...

Fans shocked by a ‘thunderous absence’ at Serena Williams’ gender reveal party

Fans shocked by a 'thunderous absence' at Serena Williams' gender reveal party (Provided by Tennis World USA) At the Serena Williams and Alexis Ohanian's...

Video shows Richarlison’s loved ones going wild after acrobatic goal as Brazil and Tottenham star shines at World Cup with brace against Serbia

Richarlison’s two goals against Serbia on Thursday night certainly got the Brazil party started, especially back home among his loved ones. The 25-year-old was...