গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর প্রতি সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তার মরদেহ আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত রাজধানীতে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে রাখা হবে। একই সঙ্গে সেখানে রাষ্ট্রীয়ভাবেও তাকে সম্মান জানানো হবে।
শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আজ বেলা আড়াইটায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। আগামীকাল শুক্রবার শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সকাল ১০টায় তার মরদেহ নেওয়া হবে সাভারের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে। জুমার নামাজ শেষে সেখানে তার দ্বিতীয় জানাজা হবে। মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকালের পর ৮১ বছর বয়সি জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মরদেহ বারডেমের হিমঘরে রাখা হয়েছে।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও শ্রদ্ধা নিবেদন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক আলতাফুন নেছা গতকাল বুধবার রাজধানীর ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রয়াত জাফরুল্লাহ চৌধুরীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ও জানাজার এসব সময়সূচি প্রকাশ করেন।
জাফরুল্লাহ চৌধুরীর লাশ দাফন হবে, নাকি মরণোত্তর দেহ দান করা হবে—এ বিষয়ে অধ্যাপক আলতাফুন নেছা বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মরণোত্তর দেহ দান করেছেন শোনা গেলেও এর কোনো আইনি কাগজপত্র নেই। এজন্য জটিলতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা আছে। তবে, এ ব্যাপারে পরিবারের সদস্যরা সিদ্ধান্ত নেবেন।’ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকা গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, এ ব্যাপারে আজ কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পরিবারের সিদ্ধান্ত জানা যাবে। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ছোট বোন আলেয়া চৌধুরী, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি নাজিম উদ্দিন, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম বাবলু, গণবিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আবুল হোসেন প্রমুখ।
রাষ্ট্রপতির শোক
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। রাষ্ট্রপ্রধান গতকাল এক শোকবার্তায় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
প্রধানমন্ত্রীর শোক
বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মৃত্যুতে শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধ, ওষুধ শিল্প ও জনস্বাস্থ্য খাতে ডা. জাফরুল্লাহর অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’ প্রধানমন্ত্রী মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান।
বিএনপি মহাসচিবের শোক
বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক শোকবার্তায় ফখরুল বলেন, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী রাষ্ট্রের সব সংকটে অকুতোভয় সৈনিক হিসেবে এগিয়ে এসেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী মুক্তিযোদ্ধা এবং সাধারণ মানুষের জন্য ফিল্ড হাসপাতাল করেছিলেন। এরপর স্বাধীন বাংলাদেশে সাধারণ মানুষকে স্বল্প মূল্যে চিকিৎসাসেবা দিতে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন গণস্বাস্থ্য হাসপাতাল। জিয়াউর রহমান তাকে স্বাধীনতা পদক দেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, জাফরুল্লাহ চৌধুরী ছিলেন অত্যন্ত স্পষ্টবাদী। দেশে গণতন্ত্রবিরোধী কার্যকলাপ এবং ভোটাধিকার হরণের বিরুদ্ধে ডা. জাফরুল্লাহ অসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন। তিনি সোচ্চার ছিলেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে। শোকবার্তায় জাফরুল্লাহ চৌধুরীর শোকার্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান ফখরুল।
রওশন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ড. কামাল ও মেননসহ আরো অনেকের শোক
জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মৃত্যুতে সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। গতকাল এক শোকবার্তায় রওশন বলেন, ১৯৭১ সালে জাফরুল্লাহ চৌধুরী যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরে ভারতের আগরতলায় গেরিলা প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য ভারতের ত্রিপুরায় বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল গড়ে তোলায় বিশেষ ভূমিকা ছিল তার। এইচ এম এরশাদের রাষ্ট্র পরিচালনার সময় জাতীয় ওষুধ নীতি প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন ডা. জাফরুল্লাহ।
যুক্তরাষ্ট্র সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এক শোকবার্তায় জাফরুল্লাহ চৌধুরীর রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন। গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক ডা. মিজানুর রহমান এক যুক্ত শোকবার্তায় বলেছেন, জাফরুল্লাহ চৌধুরী ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, মানবতাবাদী সত্যিকারের একজন দেশপ্রেমিক ও বাঙালি জাতির সূর্যসন্তান। তিনি আজীবন গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সুশাসন ও জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। তার মৃত্যুতে আমরা এক জন অভিভাবক হারালাম। অন্যদের মধ্যে শোক জানিয়েছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) সভাপতি শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক প্রমুখ।